:
পরশুরাম ও ফুলগাজী উপজেলায় বৃষ্টি হলেই ভেসে যায় কোটি টাকায় নির্মিত মুহুরী-কহুয়া ও সিলোনীয়া নদীর বাঁধ। এসব বাঁধ ভেঙ্গে বিস্তির্ণ এলাকা প্লাবিত হয়ে যায়। প্রতি বছর এমন হলেও স্থায়ী সমাধান না হওয়ায় স্থানীয়দের দূর্ভোগের শেষ নেই। পাউবো কর্তৃপক্ষ বারবার আশ্বাস দিলেও কার্যত কোন পদক্ষেপ নেয়নি। এতে করে দুই উপজেলার প্রান্তিক মানুষের মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে।
সোমবার দুপুর ১টার দিকে পরশুরাম উপজেলার চিথলিয়া ইউনিয়নের উত্তর শালধর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, মুহুরী নদীর ধার থেকে মাটি কেটে বসতভিটায় দিচ্ছেন আবদুল মজিদের বাড়ির বাসিন্দা ষাটোর্ধ্ব আবুল খায়ের। এসময় কথা হয় তিনি ও তার স্ত্রী সহ আরো কয়েকজন বাসিন্দার সাথে। তারা জানান, বৃষ্টি হলে বাঁধ ভেঙ্গে যাবে। টেকসই বাঁধ নির্মাণ না হলে দূর্ভোগ লেগেই থাকবে। বাঁধ নির্মাণের সময় মাটির পরিবর্তে বালু ব্যবহার করা হয়। তাছাড়া বাঁধের পাশে গাছ রোপনের কারনে গর্তের সৃষ্টি হয়। এসব গর্ত থেকে ইঁদুরও আরো গর্ত করে ফেলে। দিনদিন বাঁধ হুমকির মুখে পড়ে। একপর্যায়ে ভারী বৃষ্টি হলে বাঁধ ভেঙ্গে ঘর-বাড়ি, রাস্তা-ঘাট ডুবে যায়।
প্রতিবেদককে দেখেই এগিয়ে আসেন গ্রামের আরো কয়েকজন বয়োবৃদ্ধ আবুল কাশেম মোল্লা, নুরুন নবী ও আবদুল মোমিন। তারা জানান, বন্যায় পানিবন্ধী হলেও অনেকে চিড়া-মুরি নিয়ে আসে। কেউ টেকসই বাঁধ নির্মাণ করে স্থায়ী সমাধানের কথা কয় না।
এ যন্ত্রনা শুধু উত্তর শালধরের নয়, দুই উপজেলার বাসিন্দাদের। ঈদের আগমুহুর্তে ভারী বর্ষণে তলিয়ে যায়। গত রোজায় ঈদের আগমুহুর্তে ফুলগাজী সদর ইউনিয়নের উত্তর দৌলতপুর ও দক্ষিন দৌলতপুর বরইয়া অংশে ৬টি স্থানে বাঁধ ভেঙে ঘনিয়া মোড়া, উত্তর দৌলতপুর, দক্ষিণ দৌলতপুর, উত্তর বরইয়া ও সাহাপাড়া, উত্তর র্ধমপুর, দক্ষিন ধর্মপুর, মনিপুর তালবাড়িয়া এবং পরশুরাম উপজেলার চিথলিয়া ইউনিয়নের উত্তর শালধর ও দূর্গাপুরে, কাউতলি সাহাপাড়া ৪টি ভাঙ্গনে উত্তর শালধর, দক্ষিন শালধর, নিলক্ষি, চিথলিয়া, ধনিকুন্ডা, দূর্গাপুর, রতনপুর, সাতকুচিয়া, চারিগ্রাম, মোহাম্মদপুর, চম্পকনগর, কাশিপুর, কাউতলি গ্রাম প্লাবিত হয়।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যমতে, পরশুরাম ও ফুলগাজী উপজেলার ১৮টি স্থানের ৪৬৪ মিটার বাঁধ ভেঙ্গেছে। ৮টি স্থানের ৩৩০মিটার ক্ষতির শিকার হয়েছে। এসব বাঁধ পুন:নির্মাণে খরচ নির্ধারণ করা হয়েছে প্রায় ৩ কোটি ১২ লাখ টাকা।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মো: নুর নবী জানান, ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ পুন:নির্মাণে প্রকল্পের জন্য বরাদ্ধ পাঠানো হয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো: কোহিনুর আলম জানান, কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহন করতে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে চিঠি দেয়া হয়েছে।
ফুলগাজী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও পরশুরাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা কিসিঞ্জার চাকমা ফেনীর সময় কে জানান, প্রতিবার এরকম ক্ষতি হোক সেটি আমরাও চাই না। রাস্তা-ঘাট, অবকাঠামো, কৃষি, মৎস্য, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যেসব ক্ষতি হয়েছে সংশ্লিষ্ট বিভাগকে ক্ষতির তালিকা জমা দিতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। বাঁধ ভাঙ্গার দীর্ঘ মেয়াদী সমাধানে পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ একটি পরিকল্পনা সংশ্লিষ্ট জমা দিয়েছেন বলে তিনি জানান।