fenirshomoy logo black

উপ-সম্পাদকীয়

ইহুদিরা হযরত ইয়াকুব আ. এর বংশধর। ইহুদি শব্দটি এসেছে ইয়াহুদা থেকে, যিনি ছিলেন হযরত ইয়াকুব আ. এর জ্যোষ্ঠ পুত্র। মূলত শব্দটি ছিল ইয়াহুযা। যালকে দাল দ্বারা পরিবর্তন করে আরবি করা হয়েছে। ইয়াহুদা শব্দের অর্থ তাওবা কারী। গো বৎস পুজা থেকে তাওবা করার কারণে তার নাম হয়েছে ইয়াহুযা। অর্থাৎ তাওবা কারী (কুরতুবী ১ম খন্ড পৃ. ৩৩৮)। ইহুদিরা হযরত মুসা আ. কে নবী মানলেও তাঁর কোন আদর্শ তাদের মধ্যে নেই। এমনটি তারা তাওরাত কিতাবকে বিকৃত করেছে এবং হযরত উযাইর আ. কে আল্লাহর পুত্র বলে মনে করে।

ইহুদিরা অভিশপ্ত হওয়ার কারন : ইহুদিরা একটি অভিশপ্ত জাতি। কুরআন মাজিদের বহু জায়গায় তাদের অপকর্মের কথা বর্ণিত হয়েছে। আল্লাহ তা’য়ালা বলেনÑ আর ইহুদিরা বলে আল্লাহর হাত বন্ধ হয়ে গেছে। তাদেরই হাত বন্ধ হক। এ কথা বলার জন্যে তাদের প্রতি অভিসম্পাত (সূরা আল মায়েদা- ৬৪)। আরো ইরশাদ করেনÑ বনি ইসরাঈলের মধ্যে যারা কাফের, তাদেরকে দাউদ ও মরিয়মতনয় ঈসার মুখে অভিসম্পাত করা হয়েছে। এটা এ কারনে যে, তারা অবাধ্যতা করতো এবং সীমালংঘন করতো (সূরা আল মায়েদা- ৭৮)।

নবীদের হত্যা : ইহুদিরা যুগে যুগে সকল নবী-রাসূলের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করেছে এবং হত্যা প্রচেষ্টা করেছে। হযরত আবদুল্লাহ ইবন মাসউদ রা. থেকে বর্ণিত হাদিসে রয়েছেÑ ইহুদিরা একদিনে ৩০০ জন নবীকে হত্যা করেছে (ইবন কাসীর ১ম খন্ড, পৃ- ১০৯)। আল্লাহর নবী রাসূলদেরকে ইহুদি জাতি ছাড়া অন্য কোন জাতি হত্যা করেনি। তারা হযরত যাকারিয়া ও তদীয় পুত্র হযরত ইয়াহিয়া আ. কে হত্যা করেছে এবং হযরত ইলিয়াস আ. কে হত্যার চেষ্টা করে। ইহুদিরা হযরত মরিয়ম আ. কে ব্যভিচারের অভিযোগ দিয়েছে এবং হযরত ঈসা আ. কে হত্যা করার জন্য ‘তায়তালানুস’ নামক এক পাপিষ্ঠকে প্রেরণ করেছে। আল্লাহ তা’য়ালা তাঁকে আসমানে উঠিয়ে নেয় (মাযহারী)। ইহুদিরা মহানবী সা. কে নানা ভাবে কষ্ট দিয়েছে।

মাহানবী সা. এর সময় মদীনায় বহু ইহুদি গোত্র ছিল। যেমন- বনু নাযীর বনু কাইনুকা, বনী আউফ, খুযা, আউয, খাযরায ইত্যাদি। তিনবার তারা মহানবী সা. কে হত্যার চেষ্টা করে। শুধু নবী-রাসূল নয় অসংখ্য নবী-রাসূলদের অনুসারীকে তারা হত্যা করেছে। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেনÑ যারা আল্লাহর নিদর্শনাবলীকে অস্বীকার করে এবং পয়গাম্বরগণকে অন্যায় ভাবে হত্যা করে, আর সেসব লোককে হত্যা করে যারা ন্যায় পরায়ণতার নির্দেশ দেয় (সূরা আল ইমরান- ২১)। আরো ইরশাদ করেন- যখনই তাদের কাছে কোন পয়গম্বর এমন নির্দেশ নিয়ে আসতো যা তাদের মনে চাইত না, তখন তাদের অনেকের প্রতি তারা মিথ্যা আরোপ করত এবং অনেক কে হত্যা করে ফেলত (সূরা আল মায়েদা- ৭১)।

আরো ইরশাদ করেন- আল্লাহ প্রদত্ত ও মানব প্রদত্ত মাধ্যম ব্যতীত তারা যেখানে যাবে সেখানেই তাদের (ইহুদিদের) জন্য লাঞ্ছনা ও অবমাননা পুঞ্জীভূত হয়ে থাকবে। আর তারা উপার্জন করেছে আল্লাহর গযব। তাদের উপর চাপানো হয়েছে গলগ্রহতা। তা এ জন্যে যে, তারা আল্লাহর নিদর্শণ সমূহকে অনবরত অস্বীকার করেছে এবং নবীগণ কে অন্যায়ভাবে হত্যা করেছে। তার কারণ, তারা নাফরমানী করেছে এবং সীমা লংঘন করেছে (সূরা আল ইমরান-১১২)। আরো ইরশাদ করেনÑ আর তাদের (ইহুদিদের) উপর আরোপ করা হয়েছে লাঞ্ছনা ও পর মুখাপেক্ষিতা। তারা আল্লাহর রোষালে পতিত হয়ে ঘুরতে থাকল। এমন হলো এ জন্যে যে, তারা আল্লাহর বিধি-বিধান মানতো না এবং নবীগণকে অন্যায়ভাবে হত্যা করত। তার কারণ, তারা ছিল নাফরমান-সীমালংঘনকারী (সূরা আল-বাকারা- ৬১)।

আল্লাহর নিদর্শনাবলী অস্বীকার : ইহুদিরা তাওরাত ছাড়া অন্যান্য আসমানী গ্রন্থকে অস্বীকার করে এবং হযরত ইয়াহিয়া, যাকারিয়া, ঈসা আ. হযরত মুহাম্মদ সা. প্রমুখের মুজিযাকে অস্বীকার করে। অথচ ঈমানের দাবী হলো সমস্ত আসমানী কিতাব ও সকল নবী-রাসূলকে বিশ্বাস করা এবং তাদের মু’জিযাকে স্বীকার করা।
অঙ্গীকার ভঙ্গ : ইহুদিদের অভিশপ্ত হওয়ার আরেকটি অন্যতম কারণ হলো তাদের সাথে কৃত ওয়াদা ভঙ্গ করা। তারা আল্লাহর সাথে এবং নিজের নবীর সাথে কৃত সকল অঙ্গীকার ভঙ্গ করেছে। কোন অঙ্গীকার ঠিক রাখেনি। আল্লাহর বাণী- আর আল্লাহ বনী-ইসরাঈলের কাছ থেকে অঙ্গীকার নিয়েছিলেন এবং আমি তাদের মধ্যে থেকে বারজন সর্দার নিযুক্ত করেছিলাম।

আল্লাহ বলে দিলেন- আমি তোমাদের সঙ্গে আছি। যদি তোমরা নামায প্রতিষ্ঠা কর, যাকাত দিতে থাক, আমার পয়গম্বরদের প্রতি বিশ্বাস রাখ, তাদের সাহায্য কর এবং আল্লাহকে উত্তম পন্থায় ঋণ দিতে থাক, তবে আমি অবশ্যই তোমাদের গুনাহ দূর করে দিব এবং অবশ্যই তোমাদের উদ্যান সমূহে প্রবিষ্ট করবো, যে গুলোর তলদেশ দিয়ে ঝর্ণাধারা প্রবাহিত। অত:পর তোমাদের মধ্য থেকে যে ব্যক্তি এর পরও কাফের হয়, সে নিশ্চিতই সকল পথ থেকে বিচ্যুত হয়ে পড়ে। অতএব, তাদের অঙ্গীকার ভঙ্গের কারনে আমি তাদের উপর অভিসম্পাত করেছি এবং তাদের অন্তরকে কঠোর করে দিয়েছি (সূরা আল-মায়েদা- ১২-১৩)।

নেয়ামতে নাশুকরী : আল্লাহ তা’য়ালা ইহুদিদেরকে অসংখ্য নেয়ামত দান করেছেন। যেমন- সমগ্র বিশ্বের কর্তৃত্ব-নেতৃত্ব দান। আল্লাহ তা’য়ালা ইরশাদ করেন- হে বনী ইসরাঈল! তোমাদের প্রতি প্রদত্ত আমার নেয়ামতের কথা স্মরণ কর। আর আমি তোমাদেরকে সমস্ত জগতের উপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছি (সূরা বাকারা- ৪৭)। ফিরাউনের যুলুম থেকে তাদেরকে রক্ষা করেছেন। আসমানি কিতাব দিয়েছেন। সিনাই বা তীহ ময়দানে প্রচন্ড উত্তাপ থেকে বাঁচার জন্য ছায়া দান করেছেন। মান্না ও সালওয়া নামক আসমানী খাদ্য দান করেছেন। পাথর থেকে ঝর্ণার সৃষ্টি করেছেন। ফেরাউনের কবল থেকে বাঁচার জন্য লুহিত সাগরে বারটি রাস্তা করে দিয়েছেন ইত্যাদি। কিন্তু তারা এ সব নেয়ামতের শুকরিয়া আদায় করেনি।

আসমানী কিতাব বিকৃতি : ইহুদিরা তাদের কাছে প্রেরিত আসমানী কিতাবকে বিকৃত করেছে। আল্লাহর কালামে নিজেদের মনগড়া ভাবে পরিবর্তন সাধন করেছে। আল্লাহ তা’য়ালা বলেন- তারা কালামকে তার ¯’ান থেকে বিচ্যুত করে দেয় (সূরা আল মায়েদা- ১৩)।
আরো ইরশাদ করেন- হে মুমিনগণ! তোমরা কি আশা কর যে, তারা তোমাদের কথায় ঈমান আনবে? তাদের মধ্যে একদল ছিল, যারা আল্লাহর বাণী শ্রবণ করত, অত:পর বুঝে শুনে তা পরিবর্তন করে দিত এবং তারা তা অবগত ছিল (সূরা আল বাকারা- ৭৫)।

মোদ্দাকথা ইহুদিরা পৃথিবীর সবচেয়ে নিকৃষ্ট ও অভিশপ্ত জাতি। আল্লাহর ঘোষনা অনুযায়ী তারা দু’অবস্থা ব্যতীত সর্বত্র ও সদা লাঞ্জিত ও অপমানিত হবে। ১. আল্লাহ প্রদত্ত ও অনুমোদিত আশ্রয়ের মাধ্যমে, ২. শান্তি চুক্তির মাধ্যমে। এ দু’পন্থায় তারা নিজেদেরকে এ অবমাননা ও লাঞ্ছনা থেকে মুক্ত রাখতে পারবে। বিভিন্ন সময়ে তারা চরম মার খেয়েছে। হিটলার, সালাহ উদ্দিন আইউবী, মুসলিনী, বখতে নাস্ধসঢ়;সার প্রমূখ লক্ষ লক্ষ ইহুদিকে হত্যা করে দেশ ছাড়া করেছে। বর্তমানে আমেরিকা, বৃটেন এবং কতিপয় ইউরোপীয় দেশ তাদের ঘাঁটি হিসেবে ইসরাঈল নামক একটি ইহুদি রাষ্ট্র ফিলিস্তিনে প্রতিষ্ঠা করেছে। ফিলিস্তিনিরা উদ্ভাস্ত হিসেবে তাদেরকে বসবাসের জন্য জায়গা দিয়েছে। এখন তারা স্বয়ং ফিলিস্তিনিদেরকে দেশ ছাড়া করছে। আর তাদেরকে আমরিকার নির্দেশে সহযোগীতা করছে আরবের রাষ্ট্র সমূহ।

একদিন যে, ইহুদিরা তাদেরকেও দেশ ছাড়া করতে পারে এ বুঝ তাদের নেই। আল্লাহ তা’য়ালা আমাদেরকে আমাদের প্রধান ও বড় শত্রু ইহুদিদেরকে শত্রু হিসেবে জানা ও বুঝার তাওফিক দান করুন আমিন।।

লেখক : বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: কন্টেন্ট সুরক্ষিত!!