এম. মাঈন উদ্দিন :
চলতি বর্ষার সময় মিরসরাই উপজেলার পাহাড়ি প্রাকৃতিক ঝরনাগুলো ভ্রমণপিপাসু মানুষের পদচারনায় মুখরিত। তারমধ্যে সবচেয়ে বেশী পর্যটক যাচ্ছে ঝরনার রানী হিসেবে খ্যাত খৈয়াছড়া ঝরনায়। এখানে প্রতিদিন দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ ছুটে যাচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কোরবানের ঈদের দিন বিকেল থেকে সব ঝরনায় মানুষের ঢল নামে। সেই থেকে এখনো পর্যন্ত ছুটে যাচ্ছে সব বয়সী মানুষ। দলবেঁধে বন্ধু, বান্ধব, পরিবারের সদস্য ও আত্মীয় স্বজনরা ছুটে যাচ্ছে এসব ঝরনায়। ঝরনার শীতল পানিতে শরীর ভিজিয়ে অন্যরকম আনন্দ পাচ্ছেন তারা। বেশী ছুটছে খৈয়াছড়া ঝরনায়।
যেখানে প্রকৃতির অপরূপ সৃষ্টি সেতুবন্ধন করে। সবুজের চাদরে ঢাকা বনানী রূপের আগুন ঝরায়। প্রকৃতি খেলা করে আপন মনে, ঝম-ঝম, ছলাৎ -ছলাৎ শব্দে বয়ে চলা ঝরনা ধারায় গা ভিজিয়ে মানুষ যান্ত্রিক জীবনের অবসাদ থেকে নিজেকে ধুয়ে ফেলে সজীব করে। পাহাড়ের সবুজ রং আর ঝর্ণার স্বচ্ছ জল মিশে মিশে একাকার হয়েছে প্রাকৃতিক জলপ্রপাত আট স্তর বিশিষ্ট এ ঝরনায়। প্রকৃতির নান্দনিক তুলিতে আঁকা এ ছবি দেখে মুগ্ধ হচ্ছে দেশের ভ্রমণ পিয়াসী মানুষ। এই ঝরনা দেখতে এসে মুগ্ধ হচ্ছে দেশ বিদেশের পর্যটকরা। যাতে সত্যিই হতবাক হচ্ছে না কেউ এখন। কারণ ঝরনার পাশে গেলে দর্শনার্থীরাও অবাক হচ্ছে এজন্য যে, এখানকার পাহাড়ী অরন্যে এতোকাল লুকিয়ে ছিল এমন নান্দনিক অপরূপ সুন্দর ঝরনা।
বর্ষাকালে ঝরনার আকর্ষণ অন্য সময়ের তুলনায় বাড়তি থাকে। তবে শীত এবং গরমকালেও এর আকর্ষণের কমতি নেই। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য সব মৌসুমেই উপভোগ করা যায়। তাই প্রতিনিয়ত পর্যটকদেরও ঢল নামে। বিশেষ করে ছুটির দিনে ৩-৪ হাজার পর্যটকের সমাগম ঘটে এই ঝরনায়।
মিরসরাই উপজেলার খৈয়াছড়া ইউনিয়নের বড়তাকিয়া বাজারের উত্তর পার্শ্বে ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কের ৪.২ কিলোমিটার পূর্বে ঝরনার অবস্থান। এর মধ্যে ১ কিলোমিটার পথ গাড়ীতে যাওয়ার পর বাকী পথ যেতে হবে পায়ে হেঁটে। বাঁশের সাঁকো, ধানক্ষেত,আঁকা-বাঁকা পাহাড়ি পথ, ছড়া এবং পাহাড় পেরিয়ে যেতে হবে প্রকৃতির এই বিস্ময় সান্নিধ্যে।
খৈয়াছড়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান জাহেদ ইকবাল চৌধুরী জানান, ‘স্থানীয় ভুঁইয়া টিলা নামক স্থানে প্রায় ৫০ বছর ধরে প্রবাহিত হচ্ছে ঝরনাটি। পাহাড়ি ঝোঁপের কারণে মানুষ তখন খুব একটা ওই জায়গায় যেত না। গত ৫-৬ বছর থেকে সেখানে পর্যটকের সংখ্যা বাড়ছে।’
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, খৈয়াছড়া ঝরনা এলাকায় পর্যটকের ঢল নেমেছে। ঝরনার রাস্তার মাথায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে দাঁড়িয়ে রয়েছে কয়েকটি বাস, অনেকগুলো মাইক্রো, হাইস, নোহা, প্রাইভেটকার। এসব গাড়ি করে সবাই ছুটে এসেছেন ঝরনায় যাওয়ার জন্য। এর চেয়ে বেশী পর্যটক আসছেন বিভিন্ন যাত্রীবাহী বাসে করে। রাস্তার মুখে নেমে সিএনজি চালিত অটোরিকসা যোগে তাঁরা ছুটে যাচ্ছেন ঝরনায়।
পুরান ঢাকা থেকে ৮ বন্ধু মিলে ঝরনা দেখতে এসেছেন কলেজ ছাত্র জাবের হোসাইন। তিনি বলেন, ‘দেশের বিখ্যাত অনেক প্রাকৃতিক ঝরনা আমি দেখেছি। খৈয়াছড়া ঝরনার যে সৌন্দর্য তা দেশে দ্বিতীয়টি আর আছে কিনা আমার জানা নেই।’
খৈয়াছড়া ঝরনার আট টি স্তর রয়েছে। বেশিরভাগ পর্যটক প্রথম ধাপের সৌন্দর্য দেখেই মাতোয়ারা। পাহাড়ের উঁচুতে হওয়ায় বাকী ধাপগুলোতে যাওয়া কিছুটা কষ্টকর বলে অনেকেই ঝরনার প্রথম ধাপের সৌন্দর্য দেখেই ফিরে আসেন।
বৃহস্পতিবার দুপুরে ঝরনার শেষ ধাপ পর্যন্ত ঘুরে আসা পর্যটক মেহেদী হাসান নয়ন বলেন, অনেক প্রশস্ত জায়গা জুড়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে শেষ ধাপে। ঝরনার শেষ ধাপ পর্যন্ত যারা আসবেন তারা বাংলাদেশের সেরা কোন প্রাকৃতিক ঝরনা উপভোগ করবেন নিঃসন্দেহে।
কুমিল্লা থেকে আসা দম্পতি ইমরুল কায়েস ও মাকসুদা আকতার বলেন, অনেকটা পথ পাড়ি দিতে হয়েছে ঝরনায় আসতে। পাহাড় আর ঝরনার সৌন্দর্যে তারাও খুব মুগ্ধ। তবে রাস্তার অসুবিধার কারণে ঝরনার আসা কষ্টসাধ্য বলে মন্তব্য করেন এই পর্যটক দম্পতি।
চট্টগ্রাম উত্তর বনবিভাগ বারৈয়াঢালা রেঞ্জের আওতাধীন ২০২৩-২০২৪ অর্থ বছরের জন্য এ ঝরনা সহ ৫টি ঝরনা ইজারা পেয়েছেন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান শোমোশন লিমিটেড। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা তন্ময় ইসলাম জানান, চলতি মৌসুমে আমাদের প্রতিষ্ঠান ভ্যাটসহ প্রায় ৪০ লাখ টাকা দিয়ে বারৈয়াঢালা রেঞ্জের আওতাধীন ৫ টি ঝরনা ইজারা নিয়েছে। এখন সব ঝরনায় মানুষ যাচ্ছে। আমরা প্রতি টিকেট ২০ টাকা বিক্রি করছি। তবে বেশী মানুষ যাচ্ছে খৈয়াছড়া ঝরনায়। একদিনে সর্বোচ্চ ৩ হাজার ৫০০ পর্যটক ঝরনা গেছেন।