fenirshomoy logo black

নিজস্ব প্রতিনিধি :

নোয়াখালী আব্দুল মালেক উকিল মেডিক্যাল কলেজের ইন্টারনাল মেডিসিন বিভাগের কনসালটেন্ট ডা: মো: রিয়াজ উদ্দিন চৌধুরী আরাফাত বলেছেন, সাম্প্রতিক সময়ে জ্বর-ব্যাথা রোগির পরিমান আশংকাজনক হারে বেড়ে গেছে। এতে প্রথমেই ঘাবড়ে যাওয়ার কিছু নাই। ৭৫ থেকে ৮০ ভাগ রোগী এমনিতেই সাধারণ চিকিৎসা নিয়েই পাঁচ থেকে সাত দিনের মধ্যে সুস্থ হয়ে উঠছেন। তবে সাধারণ প্যারাসিটামল ওষুধ খাবেন, জ্বর ও ব্যথার জন্য, কোনভাবেই উচ্চমাত্রার ব্যথা জাতীয় ওষুধ খাওয়া যাবে না। প্রচুর পরিমান ঘরে বানানো তরল খাবার, ফলের রস সহ স্বাভাবিক খাবার খেতে হবে। এসব রোগীদের বেশিরভাগই ভাইরাস জনিত আক্রান্ত। তাই চিকিৎসকের পরামর্শ ব্যতীত ফার্মেসি থেকে এন্টিবায়োটিক না খাওয়ার পরামর্শ এ চিকিৎসকের।

গত মঙ্গলবার দৈনিক ফেনীর সময় এর সাথে আলাপকালে বর্তমান সময়ে জ্বরের প্রাদুর্ভাব, ডেঙ্গুর ভয়াবহতা সহ নানা বিষয়ে আলাপকালে এসব কথা বলেন।

বিশেষজ্ঞ এ চিকিৎসক আরো বলেন, গত কয়েক সপ্তাহ ধরে এবং বিশেষ করে গত একসপ্তাহ সারাদেশেই সব বয়সী মানুষের মধ্যে জ্বরের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। ঘরে ঘরে জ্বরে আক্রান্ত রুগীর সংখ্যা বাড়ছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে জ্বরের সুনির্দিষ্ট কারণ খুঁজে পাওয়া যায় না। তবে প্রচুর ডেঙ্গু পজিটিভ, মাম্পস (অর্থমিক্স ভাইরাস) ভাইরাস আক্রান্ত হচ্ছে। পানিবাহিত টাইফয়েড জ্বর সহ বাংলাদেশ রোগতত্ব বিভাগের তথ্যমতে, বেশিরভাগ কারণই নানা ভাইরাস জনিত রোগ।

বৈশ্বিক তাপমাত্রা পরিবর্তনের কারণে ভয়াবহতা বাড়ছে উল্লেখ করে ডা: রিয়াজ চৌধুরী বলেন, এটা মুখ্য হিসেবে কাজ করছে। একদম ভরা বর্ষা মৌসুমে অনাবৃষ্টি, ভ্যাপশা গরম, পানিবাহিত সমস্যা, পরিবেশজনিত বাতাসের গুণমান এর হ্রাস পাওয়া, মারাত্মক বায়ুদূষণ, বৃষ্টির অভাবে বাতাসে ধূলি কণার বৃদ্ধি প্রধান কারণ। প্রায় সবার ক্ষেত্রে জ্বর দিয়েই লক্ষণসমুহ শুরু হচ্ছে। প্রচন্ড গায়ে ব্যথা, চোখে ব্যথা, মাথা ব্যথা, সর্দি, কাশি, কারো ক্ষেত্রে পেটে ব্যথা , পাতলা পায়খানাও হচ্ছে। সব বয়সীরা আক্রান্ত হচ্ছে। তবে বাচ্চারা পাঁচ বছরের কম বয়সী এবং ৫৫ এর অধিক বয়সী ডায়াবেটিস ও হৃদরোগী, ক্যান্সার, কিডনি, গর্ভবতী নারী ও জটিল ওষুধ গ্রহণকারীদের ঝুঁকি বেশি।

কিছু বিষয়ে খেয়াল রাখার প্রতি গুরুত্বারোপ করেন রিয়াজ উদ্দিন চৌধুরী আরাফাত। তার মতে, যদি জ্বর তিন থেকে পাঁচদিনের মধ্যেও একদম না কমে, প্রচন্ড কাঁপুনি দিয়ে জ্বর, খিঁচুনি, পানিশূন্যতা সহ পাতলা পায়খানা, শরীরে লাল গুটি উঠা, দাঁতের মাড়ি দিয়ে রক্ত যাওয়া, প্রস্রাব কমে যাওয়া, প্রচন্ড মাথা ঘুরানো ও গলার চারপাশে ফুলে যাওয়া, গলা ফোলার পাশাপাশি পেটে ব্যথা, অন্ডকোষ ফুলে যাওয়া, প্রচন্ড বমি সহ জ্বর আসার লক্ষ্য রাখতে হব। এসবের কোন একটা লক্ষণ একবার বা বারবার হলে দ্রুত নিকটস্থ হাসপাতালে বা যেকোনো মেডিসিন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে। কিছু ক্ষেত্রে হাসপাতালে ভর্তি করা লাগতে পারে। এজন্য শুরু থেকে সচেতন হওয়া প্রয়োজন।

করোনাকালের ফ্রন্টলাইনার ডা: রিয়াজ চৌধুরী বলেন, খোলামেলা পরিবেশে থাকা, বাসায় চারপাশে খোলামেলা রাখা, পর্যাপ্ত বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা রাখা, নিজেদের চারপাশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা, প্রচন্ড রোদে বাইরে বের না হওয়া, খোলাপাত্রে পানি জমিয়ে না রাখা, বাইরের যেকোনো ধরনের খাবার পরিহার করতে হবে। সর্বোপরি সবাই ভালো থাকতে হবে, সুস্থ থাকতে প্রত্যেকে এক-দুটো করে গাছ লাগানোর প্রতি তাগিদ দেন তিনি।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: কন্টেন্ট সুরক্ষিত!!