দৈনিক ফেনীর সময়

দুর্নীতিমুক্ত রাষ্ট্রগঠন এবং বঙ্গবন্ধু’র নৈতিক দর্শন

দুর্নীতিমুক্ত রাষ্ট্রগঠন এবং বঙ্গবন্ধু’র নৈতিক দর্শন

মুক্তিযুদ্ধ ছিল শোষণ নিপীড়ন থেকে মুক্ত হওয়ার ঐক্যবদ্ধ সংগ্রাম। প্রায় ২৪ বছর পাকিস্তানি গোলামির জিঞ্জিরে বন্ধি থেকে বীরবাঙ্গালি দীর্ঘ নয়মাস রক্তক্ষয়ী লড়াইয়ের মধ্যদিয়ে এনেছে প্রিয় স্বাধীনতা। তা আজও লুটেরা শ্রণির কবলে এবং দুর্নীতিবাজদের দখলে। ব্যক্তিস্বার্থে ক্ষমতার অপব্যবহারের নামই হলো দুর্নীতি। দুর্নীতি, অনিয়ম,জুলুম,শোষণ,স্বে”ছাচারীতার বিরুদ্ধে দীর্ঘ দিনের আন্দোলন-সংগ্রাম, সর্বশেষ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধজয়ে অর্জিত আমাদের এই দেশ। লাল সবুজের অপার সম্ভাবনাময় বাংলাদেশ। শত অনিয়মের যাতাকলে নিষ্পেষিত হয়ে এদেশের মানুষ স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখেছিলো। স্বপ্ন দেখেছিলো বৈষম্যহীন সোনার বাংলা গড়ার। কোটি জনতার স্বপ্নের সাথে মিলে মিশে একাকার হয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডাক দিলেন মুক্তিযুদ্ধের। যুদ্ধ হলো, বাঙ্গালি স্বাধীনতা অর্জন করলো। শেখ মুজিবুর রহমান স্বপ্ন দেখলেন এদেশকে নিয়ে। তিনি চেয়েছিলেন এ ভূখন্ডে এমন একটি দেশ গড়ে তুলবেন, যে দেশ হবে তার স্বপ্নের সোনার বাংলা। যে দেশে দুর্নীতি হবে না, থাকবে না শোষণ-বঞ্ছনা, অনিয়ম, বৈষম্য। দুর্ভাগ্য জাতির, এই মহান নেতাকে বাঁচাতে পারলো না হায়নারূপী ঘাতকের হাত থেকে। ৭৫ এর পনেরো আগস্ট বাঙ্গালি জাতির স্বপ্নদ্রষ্টা, সপরিবারে নিহত হলেন।

এই দিন শুধু শেখ মুজিবুর রহমান মৃত্যুবরণ করেননি, মৃত্যুবরণ করেছে নবগঠিত বাংলাদেশকে নিয়ে তার সোনালী স্বপ্ন। সে দিনই জাতি হারিয়েছে একজন মহান নেতা, একজন আদর্শ অভিভাবক। আজ ভারাক্রান্ত হৃদয়ে বঙ্গবন্ধু’র স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসে জাতির উদ্দ্যেশে দেওয়া ভাষণের একটি অংশ মনে পড়ছে। সে দিন তিনি আবেগাপ্লুত হয়ে বলেছিলেন, “রবীন্দ্রনাথ বলেছিলো, সাত কোটি সন্তানের হে, মুগ্ধ জননী, রেখেছো বাঙ্গালি করে মানুষ কর নি। রবীন্দ্রনাথের কথা মিথ্যা হয়েছে, আমার বাঙ্গালি আজ মানুষ হয়েছে।” ঐ সময় এদেশে সাড়েসাত কোটি মানষের জন্য আটকোটি কম্বল এসেছিল। বঙ্গবন্ধু যখন নিজের ভাগের কম্বলটি পেলেন না, তখন বুঝতে পেরেছেন, কবি গুরু ঠিকই বলেছিলো। তারও কিছু দিন পরে মহান নেতাকে হত্যার মধ্য দিয়ে কিছু দুর্বৃত্ত চিরতরে প্রমাণ করে দিল, বাঙ্গালি মানুষ হতে পারে নি। এ জাতি তাদের স্বাধীনতার স্বপ্নদ্রষ্টা, জাতি সত্তার উন্মেষকারী মহাপুরুষের বুকে গুলি চালিয়ে বিশ্বইতিহাসে কলঙ্কিত অধ্যায় রচনা করেছে।মুষ্টিমেয় কিছু লোকের কারণে গোটা জাতি আজও দুর্নামের অপবাদ বহন করতে হচ্ছে।

সেই নৃশংস হত্যার চিহ্ন ধরে এদেশে কায়েম হয়েছে শক্তিশালী অপরাধ সাম্রাজ্য। হত্যা,খুন, ধর্ষণ,দুর্নীতি, মাদক,চোরাকারবারি, ঘুষবাণিজ্যসহ নানান অপরাধ ধারাবাহিক ভাবে বেড়ে চলছে। দেখতে দেখতে অর্ধশতাব্দী পার হয়ে গেল। এর মাঝে বার বার শাসকের পালাবদল হলেও পরিবর্তন এলো না শাসন ব্যব¯’ায়। প্রচলিত রাজনীতিতে কত নেতার পালাবদল হলো, নীতির বদল হতে দেখিনি কোথাও। এভাবে আর কত দিন চলবে? জাতি হিসেবে বাঙ্গালি কি কখনো সততা, ন্যায়-নীতিবোধ, ও স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতার সুমহিমায় অধিষ্ঠিত হতে পারবে না? দুর্নীতির ঊর্ধ্বে উঠে আমরা রাষ্ট্রের অভ্যন্তরে ন্যায়ের শাসন (সুশাসন) প্রতিষ্ঠিত করতে কি পারবো না? জাতি হিসেবে আমরা কি এতটাই অথর্ব হয়ে গিয়েছি? আমার তা মনে হয় না। কিছু ভুল, কিছু বিশ্বাসঘাতকতাকে বাদ দিলে দেখতে পাই বাঙ্গালি জাতির জীবনে অনেক গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস রয়েছে। অনেক গৌরবোজ্জ্বল প্রাপ্তিও রয়েছে। বিভিন্ন সময় দেশি-বিদেশী নানান সংকট মোকাবিলা করে বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়াতে সক্ষম হয়েছে। বহমান সময়ে বাংলাদেশের প্রধান সমস্যা হলো রাজনৈতিক দৌরাত্ম্য, প্রতিহিংসা, স্বে”ছাচারীতা ও দেউলিয়াপনা। এ জাতীয় সমস্যাগুলোর কারণে রাষ্ট্রের অভ্যন্তরে শৃঙ্খলা বিধান করা সম্ভব হয়ে উঠছে না। বহুক্ষেত্রে নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে ‘দুষ্টের দমন শিষ্টের লালন’, এ বিষয়ে শৈথিল্য প্রদর্শনের আলামত পরিলক্ষিত হয়। এই অঘোষিত প্রশ্রয়ের সুযোগ রাজনৈতিক দলের সাধারণ সমর্থক থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিও গ্রহণ করতে উদ্বাহু হয়ে উঠে। ক্রমান্বয়ে রাষ্ট্রের অপরাধ নিয়ন্ত্রক প্রশাসন যন্ত্রের মাঝেও এজাতীয় সুযোগ সন্ধানী সৃষ্টি হয় এবং অপরাধী চক্রের সাথে নেপথ্যে হাত মিলিয়ে অনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে যায়। এই দুষ্টুক্ষত ধীরে ধীরে রাষ্ট্রের স্তম্ভগুলোকে ধ্বংস করে দিতে থাকে। সর্বস্তরে দুর্নীতির আখড়া গড়ে ওঠে। রাষ্ট্রের পৃষ্ঠপোষকতা পেলে দুর্নীতিবাজরা সংঘবদ্ধ হয়ে ক্রমেই শক্তিমান মুর্তি ধারণ করে রাষ্ট্রের প্রচলিত আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করতে থাকে। ক্ষমতার প্রভাব বলয়ে থাকার কারণে প্রশাসন এদের বিরুদ্ধে ব্যব¯’া নিতে পারেন না।অনেক সময় দেখা যায় অপরাধীদের গ্রেফতার করে আইনে সোপার্দ করলে বিনিময় স্বরূপ সে সব পুলিশ অফিসারদের দুর্গম অঞ্চলে বদলি হতে হয়। আবার কখনো কখনো চাকুরী অথবা জীবন হরানোর মত ভাগ্যবরণ করতে হয়। এ অব¯’া আর কত দিন চলতে থাকবে। রাষ্ট্রের জনগণের আশা-আকাঙ্খার নির্ভরযোগ্য স্থান হলো বিচার বিভাগ। অতি সম্প্রতি বিচারকদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য নিয়ে যেভাবে আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে তাতে বিচার বিভাগ ও বিচারকদের উপর জনগণ শ্রদ্ধা হারিয়ে ফেলবে। এর ফলে মানুষের মনে আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়ার প্রবণতা তৈরি হবে। তখন সমাজে বিশৃঙ্খলা ও নৈরাজ্েেযর পরিবেশ বিরাজ করবে। এটা জাতির জন্য কাম্য হতে পারে না।

স্বজনপ্রীতি ও দলকানা হয়ে অথবা ঘুষ কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে অসৎ, অযোগ্যদের পদায়ন করলে তারা কখনো নীতির উপর অবিচল থেকে দায়িত্ব পালন করতে পারে না। এরা ব্যক্তিস্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে ক্ষমতা অপব্যবহার করে এবং সুশাসনকে নির্বাসনে পাঠিয়ে দেয়। দেশকে সুশৃঙ্খল করতে, দেশের জনগণকে সুশাসন উপহার দেওয়ার অন্যতম মাধ্যম নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি। তবে শর্ত হলো তারা দেশ প্রেমে উজ্জীবিত হয়ে সুশাসনে বিশ্বাসী হতে হবে। সততা ও আদর্শের আদলে নিজেদের জীবনকে পরিচালিত করতে হবে। সব ধরনের দুর্নীতির ঊর্ধ্বে থাকতে হবে। জনপ্রতিনিধিগণ দুর্নীতিগ্রস্ত হলে সে দেশে কখনো সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হয় না।

অপরাধ, অনিয়ম ও দুর্নীতি দমনের পরিবর্তে নিজেরা দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ে। তখন দেশ স্বাভাবিক গতিতে আর চলতে পারে না। বস্তায় পা ঢুকিয়ে হাটার চেষ্টা করলে যতটা হাটা যায়, তখন ঠিক ততটাই অগ্রগতি জাতীয় জীবনে পরিলক্ষিত হয়। এ কথা ভুলে গেলে চলবে না যে, দুর্নীতি ও অনিয়মের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে বাংলাদেশের জন্ম হয়েছে । এখনো দুর্নীতিবাজ,চোরাকারবারিদের সাথে মোকাবেলা করে সোজা হয়ে হাঁটতে পারছে না বাংলাদেশ। কোন জাতি এভাবে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যে কোন দিন পৌঁছতে পারে না। রাজনীতিবিদ ও জনপ্রতিনিধিগণ জাতির অভিভাবক,পরিচালক, পথপ্রদর্শক। সৎ – যোগ্যনেতৃত্বের মাধ্যমে তারা জাতিকে উন্নত ও সভ্য জাতিতে রূপান্তর করবে। কিš‘ আমাদের জনপ্রতিনিধিগণ যদি দুর্নীতিগ্রস্ত হন, তাহলে বাঙ্গালি জাতি কোন কালেই মুক্তির স্বাদ এবং স্বাধীনতার সুফল ভোগ করতে পারবে না। সে দিন ইউটিউবে ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে’ স্বাধীন বাংলার রূপকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিববুর রহমানের একটি ভাষণ শুনতে পেলাম। এই ভাষণটিতে স্বাধীনতার স্বপ্ন পূরণে দেশ কীভাবে চলবে, রাষ্ট্রের নীতি ও শাসকশ্রেণীর চরিত্র কেমন হওয়া উচিত, গণমানুষকে কেমন করে ভালোবাসতে হয় তার রূপরেখা এ ভাষণে তিনি দিয়েছেন ।দুর্নীতির বিরুদ্ধে জনযুদ্ধ ঘোষণা করে দুর্নীতিবাজদের ভাগ্য নির্ধারণ করে দিয়ে গেছেন।

দু:খের বিষয় হলো- এ ভাষণ থেকে আমরা কোন শিক্ষা গ্রহণ করতে পারিনি। শুধু তাই নয়, জাতীয় দিবসগুলোতে জনসম্মুখে তেমন কোথাও এ ভাষণটি সচরাচর বাজতে শুনা যায় না। অথচ দুর্নীতিগ্রস্ত এদেশে অফিস-আদালতে, ব্যাংক, সচিবালয়, মন্ত্রণালয়, বিচারালয়, প্রশাসনিক দপ্তরগুলোতে এভাষণটি প্রতিটি কার্যদিবসের শুরুতে একবার শুনানো উচিত। পাশাপাশি দুর্নীতিবাজদের ব্যাপারে জিরো টলারেন্সনীতি আবলম্বন করে ন্যায্য শাস্তি অপরিহার্য করা উচিত। এই ভাষণটি সবার আগে রাজনীতির সিলেবাসে অন্তর্ভুক্ত করে নেওয়া দরকার।অন্তত মুজিব আদর্শের সৈনিকদের সবার আগে এই শিক্ষা গ্রহণ করার কোন বিকল্প নেই। একইসাথে শিক্ষার্থীদের পাঠ্যপুস্তকেও ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে দেওয়া’ বঙ্গবন্ধু’র ভাষণটি এখানে অন্তর্ভুক্ত করা অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক। জনপ্রতিনিধি ও শাসকগোষ্ঠীর উদ্দেশ্য দেওয়া ভাষণটি সচেতনতার লক্ষ্যে এখানে সংযোগ করা প্রয়োজন। তাই ভিডিও বয়েজ থেকে পুরো বক্তব্যটি লিপিবদ্ধ করে এখানে উপস্থাপন করছি।

মনে রেখো, শাসন করা তারই সাজে সোহাগ করে যে। তুমি যখন শাসন করবা সোহাগও করতে শেখো। তাদের দুঃখের দিনে পাশে দাঁড়াও, তাদের ভালোবেসো।কারণ তোমার হুকুমে সে জীবন দেবে। তোমাকে শ্রদ্ধা অর্জন করতে হবে। আর সে শ্রদ্ধা অর্জন করতে হলে তোমাকে অবশ্যই শৃঙ্খলা শিখতে হবে। নিজেকে সৎ হতে হবে। নিজেকে, দেশকে, মানুষকে ভালোবাসতে হবে এবং চরিত্রও ঠিক রাখতে হবে। তা না হলে কোন ভালো কাজ করা যায় না। আমার মুখ কালো করো না। দেশের মুখ কালো করো না। সাতকোটি মানুষের মুখ কালো করো না। তোমরা আদর্শ হও। মনে রেখো, মুখে হাসি বুকে বল তেজে ভরা মন। মানুষ হইতে হবে মানুষ যখন। মাঝে মাঝে আমরা অমানুষ হয়ে যাই। এতো রক্ত দিয়ে আমরা স্বাধীনতা এনেছি, তার পরও অনেকের চরিত্র পরিবর্তন হয় নাই। এখনো ঘুষখোর, দুর্নীতিবাজ, চোরাকারবারি, মুনাফাখোরী বাংলার মানুষের জীবনকে অতিষ্ঠ করে তুলছে। দীর্ঘ তিন বছর পর্যন্ত এদের আমি অনুরোধ করেছি, আবেদন করেছি, হুমকি দিয়েছি। চোরা নাহি শুনে ধর্মের কাহিনী। কিš‘ আর না,বাংলার মানুষের জন্য জীবনের যৌবন আমি কারাগারে কাটিয়ে দিয়েছি। এ মানুষের দুঃখ দেখলে আমি পাগল হয়ে যাই। কাল যখন আমি আসতেছিলাম ঢাকা থেকে, এত দুঃখের মধ্যে গায়ে কাপড় নাই। কত অসুখ, কত অসুবিধায় বঞ্চিতরা বাস করতেছে।হাজার হাজার, লক্ষ লক্ষ লোক দু’পাশে দাঁড়িয়ে আছে আমায় দেখবার জন্য। আমি মাঝে মাঝে প্রশ্ন করি তোমারা আমায় এতো ভালোবাস কেন? কিš‘ সেই দুঃখী মানুষ পরিশ্রম করে। তাদের গায়ে কাপড় নাই, পেটে খাবার নাই, তাদের বাস¯’ানের কোন বন্দোবস্ত নাই। লক্ষ লক্ষ বেকার। পাকিস্তানীরা সর্বস্ব লুট করে নিয়ে গেছে। কাগজ ছাড়া আমার জন্য আর কিছুই রেখে যান নাই। বিদেশ থেকে আমাকে ভিক্ষা করে আনতে হয়। আর এ চোরেরদল আমার দুঃখী মানুষের সর্বনাশ করে, লুটতরাজ করে খায়। আমি শুধু ইমার্জেন্সি দেই নাই,এবার আমি প্রতিজ্ঞা করেছি,যদি পঁচিশ বছর এই পাকিস্তানি জালেমদের মধ্যে জিন্নাহ সাহেব থেকে আরম্ভ করে গোলাম মোহাম্মদ, চৌধুরী মোহাম্মদ আলী,আয়ুব খান,ইয়াহিয়া খানের মধ্য বুকের উপর টার্ন দিয়ে সংগ্রাম করে থাকতে পারি,আর আমার ত্রিশলক্ষ লোকের জীবন দিয়ে স্বাধীনতা অর্জন করতে পারি, তাহলে পারব না? নিশ্চয়, ইনশাআল্লাহ পারবো।এই বাংলার মাটি থেকে দুর্নীতিবাজ, এই ঘুষখোর,এই মুনাফাখোরী, চোরাচালানকারীকে নির্মূল করতে হবে।আমিও প্রতিজ্ঞা নিয়েছি।তোমরাও প্রতিজ্ঞা নাও।এই বাংলার জনগণও প্রতিজ্ঞা করো।

আর না, অসহ্য হয়ে সহ্যেরসীমা হারিয়ে ফেলেছি। এইজন্য জীবনের যৌবন নষ্ট করি নাই। এইজন্য শহীদরা রক্তদিয়ে যায় নাই। কয়েকটা চোরাকারবারি, ঘুষখোর,মুনাফাখোর দেশের সম্পদ বাইরে বের করে দিয়া, জিনিসের দাম গুদাম করিয়া,মানুষকে না খাওয়াইয়া মারে। উৎখাত করতে হবে বাংলার বুকের থেকে এদেরকে। দেখি তারা কতদূর টিকতে পারে। চোরের শক্তিবেশি না ঈমানদারের শক্তিবেশি সেটাই এবার প্রমান হয়ে যাবে। দুঃখজনক হলেও সত্য, বঙ্গবন্ধু’র এই নীতি আদর্শের চুনোফোটা এখন কোথাও দেখতে পাওয়া যায় না।

বঙ্গবন্ধু’র এ ভাষণে জনপ্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের প্রতি কঠোর নির্দেশনা রয়েছে। জনসধারণের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়ার উদাত্ত আহবান রয়েছে। দেশের স্বার্থে রাজনীতি করার শিক্ষা রয়েছে। দেশ প্রেমের জীবন্ত দৃষ্টান্ত রয়ছে এই ভাষণে। দুর্নীতিসহ সকল অনিয়মের বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি উল্লেখ রয়েছে।

এই ভাষণ দুর্নীতিবাজদের চরিত্র সংশোধনে ও পদস্ত কর্মকর্তা এবং শাসক ও জনপ্রতিনিধিদের কর্তব্য পরায়ণ হতে আজও গুরুত্ব বহন করে। যে কোন সমাজ এবং রাষ্ট্রের অভ্যন্তরে সুশাসন (আইনের শাসন) প্রতিষ্ঠা করার জন্য জনপ্রতিনিধি ও রাষ্ট্র প্রধানকে যেমন সৎ হওয়া প্রয়োজন, তেমনি দেশ থেকে দুর্নীতির মূলোৎপাটন করতে ইস্পাত কঠিন শপথ নেওয়া প্রয়োজন। এলক্ষ্য বাস্তবায়নে শিক্ষিত, সৎ, যোগ্য প্রার্থীকে মনোনয়ন করতে হবে। সুষ্ঠু ধারার রাজনৈতিক সংস্কৃতি প্রবর্তন করতে হবে। সমন্বিত উদ্যোগে এ কাজটি করতে পারলে এদেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হবে ইনশাআল্লাহ।

লেখক : সহকারী অধ্যাপক, কবি ও প্রাবন্ধিক।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: কন্টেন্ট সুরক্ষিত!!