সময় রিপোর্ট :
দৈনিক ফেনীর সময় এ ৩০ সেপ্টেম্বর “ফেনী সরকারি কলেজ, অধ্যক্ষ পদ পেতে পিন্টুর দৌড়ঝাঁপ” শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদের প্রতিবাদ জানিয়েছেন সমাজকর্ম বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক মো: ফখরুল আমিন।
প্রতিবাদলিপিতে তিনি দাবী করেছেন, পিন্টু ডাকনাম, যে নামে আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধুবান্ধব সম্বোধন করেন। ২০২৪ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর অধ্যাপক পদোন্নতি পেয়েছি এবং ফেনীতেই অবস্থান করছি। সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ পদে বদলী ও পদায়ন করে শিক্ষামন্ত্রণালয়। অথচ ২০১৬ সালের পর অদ্যবধি সচিবালয়ে যাইনি। তাছাড়া স্বল্প সময়ে বদলী বা পদায়ন সংক্রান্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করা সম্ভব নয়।
ফখরুল আমিন জানিয়েছেন, লক্ষ্মীপুর সরকারি কলেজে কর্মরত থাকাকালে ফেনী সরকারি কলেজে কর্মরত মো: আতাউর রহমান তার পরিবারের সঙ্গে বসবাসের সুবিধার্থে টাঙ্গাইল কুমুদিনী সরকারি বদলীর আগ্রহ প্রকাশ করলে তার স্থলাভিষিক্ত হিসেবে ফেনী সরকারি কলেজে বদলী হয়ে আসি। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজে দুই বছর চাকুরী করেছি। আম্মার অসুস্থতাজনিত কারনে বদলী হয়ে ফেনী কলেজে আসি। তার দাবী, ফেনী সরকারি কলেজে এমন শিক্ষকও আছেন, যারা দু’দশক চাকুরি করার পরও একদিনের জন্য ফেনী কলেজের বাইরে কিংবা ফেনী জেলার বাইরে চাকুরি করেননি।
তিনি আরো বলেন, আমি ফেনী সরকারি পাইলট হাই স্কুল থেকে এসএসসি পাস করেছি। নিজাম হাজারী সেন্ট্রাল হাই স্কুল থেকে এসএসসি পাস করেছেন। তার সঙ্গে বন্ধুত্বের দাবী আমি কখনোই করিনি। তাছাড়া আমার শশুর বাড়ি ফুলগাজী উপজেলার আনন্দপুর ইউনিয়নের ্ইসলামপুর গ্রামে। কলেজের কোন শিক্ষককে কিংবা অন্য কোন মানুষকে তার ঘাটলায় এনে হেনস্তা করার কোন প্রমাণ কেউ দেখাতে পারবেনা।
ফখরুল আমিন আরো দাবী করেন, ঐ নির্বাচনে আমি সম্পাদক প্রার্থী ছিলাম। ২৪ ব্যাচের দু’জন সহকারী অধ্যাপক উক্ত নির্বাচনে প্রার্থী হন। তাদের একজন মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার পরেও দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্ব পালন করেন। তার প্রার্থীতা ছিল গঠনতন্ত্রের সাথে সাংঘর্ষিক। তাদের প্রার্থীতা নিয়ে উত্তেজনা সৃষ্টি হলে আমি নিজেই প্রার্থী হই। পরবর্তীতে নিজাম হাজারী হস্তক্ষেপের বয়সের দিক থেকে কনিষ্ঠতম প্রার্থীকে সম্পাদক পদে মনোনীত করা হয় এবং সিনিয়রিটির অজুহাতে আমাকে নির্বাচন থেকে সরিয়ে দেয়া হয়।
প্রতিবাদ লিপিতে উল্লেখ করা হয়, সমাজকর্ম বিষয়ে টার্মপেপার নেই। সুতরাং টাকা আদায়ের প্রশ্নই আসেনা। বিজয় কৃষ্ণকে তার আচরনগত সমসার কারনে ছাত্রদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে ২০১৫ সালের জুলাই মাসে নৈশপ্রহরী হিসেবে পরবর্তীতে ইংরেজি বিভাগে বদলি করা হয়। এবং শিক্ষার্থীদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে পরবর্তীতে তাকে বরখাস্ত করা হয়। ছাত্রদের নিকট থেকে অতিরিক্ত দুই হাজার দুই শত টাকা আদায়ের কিংবা বিভাগে তালা ঝোলানোর বিষয়টি সত্য নয়।
প্রতিবেদকের বক্তব্য- ‘শাক দিয়ে মাছ ঢাকা’র চেষ্টা :
দৈনিক ফেনীর সময় বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশনে বিশ^াসী। কখনো আক্রোশবশত কিংবা মনগড়া সংবাদ পরিবেশন করেনা। ফখরুল আমিন পিন্টুকে নিয়ে প্রকাশিত সংবাদের যথাযথ তথ্যপ্রমাণ ফেনীর সময় এ সংরক্ষিত রয়েছে।
সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদক জানান, ২০২১ সালে শিক্ষক পরিষদ নির্বাচনে সম্পাদক পদে তার মনোনীত ২৪তম বিসিএস এর সহকারি অধ্যাপক মোশারফ হোসেন মিলনকে জেতাতে তৎকালীন সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন হাজারীকে কলেজে এনে ২৪তম বিসিএস এর অপর প্রার্থীকে জোরপূর্বক নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াতে বাধ্য করা হয়। তৎসময়ের ওই প্রার্থীর ভিডিও বক্তব্য ফেনীর সময় এর কাছে সংরক্ষিত রয়েছে। শুধু তাই নয়, ফখরুল আমিন পিন্টুর প্রত্যক্ষ মদদে মাষ্টারপাড়ার ঘাটলায় নিজাম হাজারীর উপস্থিতিতে উদ্ভিদ বিজ্ঞানের প্রভাষক (বর্তমানে সহকারি অধ্যাপক) আহমদ আলী বিভোর, ইসলামের ইতিহাসের প্রভাষক মঞ্জুরুল হাসান রুমি, ইতিহাসের প্রভাষক (বর্তমানে বদরুন্নেছা সরকারি কলেজে কর্মরত) গোলাম রাব্বানী রানাকে শাসানো হয়। তখন কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর বিমল কান্তি পাল, রাষ্ট্রবিজ্ঞানের বিভাগীয় প্রধান (বর্তমানে অবসরে) অধ্যাপক মোক্তার হোসেইন, রসায়ন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান নুরুল আজিম ভূঞা, ইসলামের ইতিহাস বিভাগের সহকারি অধ্যাপক মো: জয়নাল আবেদীন, উদ্ভিদ বিজ্ঞানের সহকারি অধ্যাপক (বর্তমানে সহযোগি অধ্যাপক) মো: মোশারফ হোসেন মিলন, গনিত বিভাগের সহকারি অধ্যাপক জহির উদ্দিন, হিসাব বিজ্ঞানের সহকারি অধ্যাপক হাসান মাহমুদ রিয়াদ ভূঞা, প্রভাষক (বর্তমানে সহকারি অধ্যাপক) মো: ওয়াসিম পাটোয়ারী, হিসাব বিজ্ঞানের প্রভাষক (বর্তমানে সহকারি অধ্যাপক) গোলাম মোর্শেদ, সহকারি গ্রন্থাগারিক আরজিনা আক্তার চৌধুরী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়া জাতীয় বিশ^বিদ্যালয়ের নীতিমালার আলোকে বিভিন্ন ডিপার্টমেন্টে টার্মপেপার বাবদ টাকা আদায় করা হয়। অনুরূপভাবে ফিল্ডওয়ার্ক বাবদ টাকা নেয়া হয়। তখনকার সময়ে ডিপার্টমেন্টে তালা ঝুলিয়ে দেয়ার বিষয় নিয়ে নিজাম হাজারীর ঘাটলায় ছাত্র-শিক্ষকদের ডেকে নেয়া হয়েছে। এনিয়ে কলেজ ছাত্র সংসদের ভিপি ও কলেজ ছাত্রলীগের তৎকালীন সভাপতি তোফায়েল আহমেদ তপুর বক্তব্যও প্রতিবেদকের কাছে সংরক্ষিত রয়েছে। মূলত প্রতিবাদ লিপিতে ফখরুল আমিন পিন্টুর বক্তব্য ‘শাক দিয়ে মাছ ঢাকা’র চেষ্টা মাত্র।
অধ্যাপক মো: ফখরুল আমিন সচেতন ব্যক্তি হিসেবে জানি। গণমাধ্যমে ডাক নাম কিংবা বহুল প্রচলিত নামই ব্যবহার করা হয়। সেই আলোকেই পিন্টু নামটি শিরোনামে ব্যবহার হয়েছে। কোন প্রতিবেদনের শিরোনামে জাতীয় পরিচয়পত্রের সম্পূর্ণ নাম ব্যবহার অনেক ক্ষেত্রে সম্ভব হয়না।
ফখরুল আমিন প্রতিবাদ লিপিতে নিজাম হাজারীর সাথে বন্ধুত্বের সম্পর্ক অস্বীকার করেছেন। তাকে ফেনী সেন্ট্রাল হাই স্কুলের ছাত্র উল্লেখ করেছেন। অথচ নিজাম হাজারী ৬ষ্ট ও ৭ম শ্রেণি পাইলট স্কুলে পড়াশোনার সুবাধে পাইলটের অনেকের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক হয়। সেই সুবাধে এসএসসি ৮২ ব্যাচের ছাত্র হয়েও ফখরুল আমিন পিন্টুদের আমন্ত্রণে ৮১ ব্যাচের মিলনমেলায় অংশ নিতেন নিজাম হাজারী। সবশেষ রৌশন’স পার্টি সেন্টার ও এর আগে বাগানবাড়িতে ওই মিলনমেলা অনুষ্ঠিত হয়।
এছাড়া বিগত ৭ জানুয়ারি বিতর্কিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ১৫টি বিভাগে সহযোগি অধ্যাপক কর্মরত থাকলেও অতিউৎসাহী হয়ে প্রিসাইডিং অফিসারের দায়িত্ব পালন করেন শুধুমাত্র তিনজন। এর মধ্যে জ্যেষ্ঠতম ছিলেন ১৬তম বিসিএস এর ফখরুল আমিন। অপর দুইজন সহযোগি অধ্যাপক ছিলেন ২২তম ও ২৪তম বিসিএস এর।
প্রতিবাদ লিপিতে ফখরুল আমিন শশুর বাড়ি ফুলগাজীর আনন্দপুর ইউনিয়নের ইসলামপুর গ্রামে হলেও তার নানা শশুর বাড়ী মাষ্টারপাড়া লমি হাজারী বাড়ী সংলগ্ন এনায়েত হাজারী বাড়ী।