জহির উদ্দিন
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষার্থী অবচেতন মনে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের প্রযুক্তির সভ্যতার দ্বারা প্রভাবিত হচ্ছে। প্রথম শিল্প বিবøব বাস্প শক্তি থেকে চতুর্থ বিপ্লব বিদ্যুৎ চালিত প্রযুক্তি শক্তি চলেছে। প্রযুক্তি সংমিশ্রনে শারিরীক শক্তি ও সংস্কৃতি বিশাল পরিবর্তন লক্ষ্যনিয়। বর্তমান শিল্প বিপ্লব তছনছ করেছে শিক্ষার্থীদের চিন্তা ভাবনা, দর্শন, পারস্পরিক বুঝাপড়া। প্রযুক্তি যেমন করেছে জ্ঞানের প্রবেশধার সহজবোধ্য তেমনি তৈরি করছে মিশ্র সংস্কৃতির মানুষ। সব মানুষের কিছু এথিকস মেনে চলা উচিত। এথিকস মেনে চলা অর্থ নীতিবোধ মেনে কাজ করা। নৈতিকতার সঙ্গে প্রযুক্তির কোন বিরোধ নেই। নীতি মেনে চললে নিজেকে গন্ডিতে সীমাবদ্ধ রাখতে হয় এমন নয়। নীতিবোধ আমাদের সৎ থাকতে ও সৎ কাজের শিক্ষায়। চতুর্থ শিল্প বিপ্লব মানুষের নীতিবোধকে জাগ্রত করতে হলে প্রযুক্তির মিশ্র সংস্কৃতি বিলুপ্ত সময়ের দাবি। প্রযুক্তি কতটা ভয়ংকরভাবে শেষ করা হচ্ছে আগামী প্রজম্মের প্রানসত্তাকে। যার কারণে শিক্ষাক্ষেত্রে ও সমাজে বিশাল অংশে পরির্বতন দেখা যাচ্ছে।
নব্বই দশকের শিক্ষার্থীরা অনেক ধৈয্য ও সহনশীল পারস্পরিক সহমর্মিতা ছিল। যেমন বডদের সম্মান করা, তাদের কথায় কথা না বলা, বড়দের সামনে উচ্চবাচ্য কথা না বলা। তাদের ভিতরে সব ক্ষেত্রে ভয় ও সম্মান স্থান ছিল সবার উপরে। সবক্ষেত্রে ছিল জীবন্তিকা। যেকোন মানুষের সাথে ভাবের বিনিময় ঘটত। নিরবে সমাজে সংস্কৃতির পরিবর্তন ঘটে গেছে কেউ টেরও পায়নি। আমরা একটা বিশাল বিপ্লবের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি যার একমাত্র কারন প্রযুক্তি যা চতুর্থ শিল্প বিপ্লব নামে পরিচিত। শিক্ষার্থীরা এখন পরসোনালিজম বিশ্বাসি। শিক্ষার্থীদের এখন আগের মত কিছু বলা যায় না। তারা অতিরিক্ত সেনসেটিভ। তারা সব জায়গায় মনোযোগী নয়। প্রযুক্তি তাদের এক কেন্দ্রিক করে চলছে। প্রযুক্তি ছোঁয়া সারা বিশ্বের সকল সংস্কৃতি, আচরণ, আচরন, শিস্টাচার এক হয়ে ধরা দিয়েছে। তারা আজ একক সংস্কৃতির দ্বারা প্রভাবিত নয়। মিশ্র সংস্কৃতি তাদের গ্রাস করে নিয়েছে। আজ আমরা সর্বত্রই ভিন্ন মন মানসিকতা ও মোডারেট শিক্ষার্থী পালন করতেছি এককথা হাইব্রিড বললে ভাল হবে। আমাদের সকল সন্তানদের চিন্তা-চেতনা এক। একটা ক্লাসে যদি ৯০ জন শিক্ষার্থী থাকে প্রায় ৮৫ ভাবনা, চিন্তা, আচরণ এক। নব্বই দশকে ছেলে-মেয়েদের সাথে অনেক পার্থক্য লক্ষ্য করা যেত। তাদের এক এক করে আলাদা চিহ্নিত করা যেত শুধুই আচরণ দিয়ে। চতুর্থ শিল্প বিপ্লব সকল সংস্কৃতি এক জায়গায় লিপিবদ্ধ করা হয়েছে যা হল প্রযুক্তি। জ্ঞান ভান্ডারের প্রবেশগম্যতা লাভের জন্য সহজ করেছে এ বিপ্লব। শিক্ষাক্ষেত্রে এক-চার শিল্প বিপ্লব হিসেবে চিহ্নিত এমন এক বিষয় সামনে আনলে পরিচিত লাভ করেছে ক্লাসে স্বাভাবিক নিয়মে বই পডানো থেকে মাল্টিমিডিয়া ক্লাস অনেক সহজবোধ্য। ইউটিউব এ মেটেরিয়াল ডিজাইন করে পডাকে সহজ করেছে। এ বিপ্লবের পরিবর্তনে ইতিবাচক এবং নেতিবাচক প্রভাব সম্পর্কে আমাদের সম্যক ধারণা থাকা প্রয়োজন সাধারণত তারআ রিক্সা বসে মোবাইলে এমন অশ্লিল ভাষা কথা বলে তার চার পাশে কে আছে কেয়ার করেনা।
আমার বস্তুত সংস্কৃতি গ্রহনে অভ্যস্ত হচ্ছি। যার কারণে ৮-১০ বছরের ছেলে-মেয়েরা ফোন ব্যবহার করছে। তারা সঠিক মূল্যবোধ দৃরে সরে আসছে। এজন্য আমাদের শিক্ষার্থীদের আইডল বিটিস মডেল কোন নায়ক নায়িকা। অনেক গুরুতর অপরাধে জড়িয়ে পড়ায় অপরাধ ও কিশাের অপরাধের মাঝে পার্থক্য নির্ণয় করা অত্যন্ত দুরূহ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। বর্তমানে আমাদের দেশে কিশাের অপরাধ একটি সামাজিক সমস্যা হিসাবে ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করে চলেছে। বাংলাদেশ তৃতীয় বিশ্বের একটি উন্নয়নশীল দেশ। আমাদের দেশের অধিকাংশ কিশোর-কিশোরী যথাযথভাবে মৌল মানবিক চাহিদা পূরণ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বিধায় তাদের ব্যক্তিত্ব ও মানসিকতার সুষ্ঠু বিকাশ সম্ভব হচ্ছে না; যা পর্যায়ক্রমে তাদের অপরাধের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। বাংলাদেশে বর্তমানে যে সকল কাজকে কিশাের অপরাধের লক্ষণ হিসাবে গণ্য করা হয়, সেগুলো হলো- পকেট মারা, পরীক্ষায় নকল করা, কারও বাড়িতে ঢিল ছোড়া, কারও গায়ে থুথু দেওয়া, মেয়েদের দেখে শিস দেওয়া, স্কুল থেকে পলায়ন, বাড়ি থেকে নিরুদ্দেশ হওয়া, বিনা টিকেটে ভ্রমণ, অন্যের গাছের ফল খাওয়া, গুরুজনের সাথে বেয়াদবি করা, নেশা করা, মারপিট করা, ঘরের জিনিস চুরি করা, প্রতারণা করা, মিথ্যা বলা, পর্নোছবি দেখা, ইভটিজিং ইত্যাদি। বর্তমানে বাংলাদেশে কিশাের-অপরাধের মাত্রা অতীতের তুলনায় বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। কিশোর-অপরাধ কখনো একক কোন কারণে সৃষ্টি হয় না। এর মূলে থাকে দৈহিক, মানসিক, পারিবারিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, ধর্মীয়, নৈতিক, ভৌগোলিক, সাংস্কৃতিক প্রভৃতি উপদানের এক জটিল ও মিশ্র প্রক্রিয়া। বিশেষ করে যৌথ পরিবারের ভাঙন, সঙ্গ দোষ,.। মূল কারন পরিবারের প্রযুক্তি সৎ ব্যবহার নিচ্ছিত না করা। ক্লাস সিক্স মেয়ে জন্মদিনে ট্রিট হিসেবে গিপট দিচ্ছে আর একটা মেয়েকে। সিক্স মেয়ে বয়স (১৪) এপ্যায়ার আছে চার-ছয়টা ছেলের সাথে। আবার মেয়েটিকে একটা ছেলে ডিস্টার্ব করে। তাকে শাস্তি দিতে হবে। অন্য বান্দবিদের ডাকা হল বান্দবির বয় ফ্রেন্ডদের বলা হল যে তাকে ছেলেটি ডিস্টার্ব করে। শুরু হল মারামারি-কাটাকাটি। শিক্ষার্থীদের চিন্তা ভাবনা তলানিতে ঢেকেছে। প্রযুক্তি তাদের মূল চিন্তা ভাবনা লোপ করে দিয়েছে।
অন্যথায় উন্নত বিশ্ব শিক্ষার্থীরা চাঁদ ও মহাকাশ এবং প্রযুক্তি আবিষ্কার, বিজ্ঞান ও বিজ্ঞান সম্মত চিন্তা নিয়ে ব্যস্ত থাকে। তারা মানব কল্যাণ নিয়ে বিজ্ঞান সম্মত চিন্তা করে। তারা প্রযুক্তি আবিষ্কার করে আর আমরা তা ব্যবহার করি কোন কাজে লাগানো চেস্টা করিনা। আমাদের মত দেশে যদি মানুষকে মানব সম্পদে পরিনত করা যায়। মূল্যবোধ সম্পূর্ণ মানুষ তৈরি কারা যায়। বাংলাদেশে উন্নত রাষ্ট হতে সময়ের দাবী। মূল্যবোধ, মানের শিক্ষার্থী তৈরি আমাদের সচেতন চিন্তা-ভাবনা প্রয়োজন।
লেখক : প্রভাষক, আজিজিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদরাসা, দাগনভূঞা।