দৈনিক ফেনীর সময়

ফেনীতে গ্রাম-শহরে ৫-৬ ঘন্টা বিদ্যুতের লোডশেডিং

ফেনীতে গ্রাম-শহরে ৫-৬ ঘন্টা বিদ্যুতের লোডশেডিং

নিজস্ব প্রতিনিধি :

বিদ্যুৎ-সংকট মোকাবিলায় এলাকাভিত্তিক একঘন্টা লোডশেডিংয়ের সিদ্ধান্ত থাকলেও ফেনীতে ওই শিডিউল অকার্যকর। দিনে-রাতে কোনো কোনো এলাকায় ৫ থেকে ৬ ঘন্টা লোডশেডিং দেয়া হচ্ছে। এতে একদিকে যেমন প্রচন্ড গরমে মানুষ সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন অন্যদিকে পড়াশোনা সহ জীবনযাত্রা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।

বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দারা জানান, হঠাৎ করে ঘন ঘন লোডশেডিং শুরু হয়েছে। শহরের তুলনায় গ্রামাঞ্চলে এর মাত্রা আরো বেশি। এতে মানুষের স্বাভাবিক জীবন বাধাগ্রস্থ হচ্ছে। অব্যাহত লোডশেডিংয়ের কারণে শিক্ষার্থীদের পড়ালেখা চরমভাবে বিঘিœত হচ্ছে। শ্রমজীবীদের অবস্থা আরো নাজুক।

সোমবার সন্ধ্যায় শহরের শান্তি কোম্পানী সড়কের এক বাসিন্দা বিদ্যুত পরিস্থিতি সম্পর্কে ভোগান্তির কথা জানায় ফেনীর সময় কে। ওই বাসিন্দা জানান, মাগরিবের আগমুহুর্তে বিদ্যুত চলে যায়। এক থেকে দেড় ঘন্টা কিংবা তার বেশিও অনেক সময় লোডশেডিং হয়। রাতের গভীরে অনেকসময় লোডশেডিং। এভাবে দিনে রাতে প্রতিদিন অন্তত ৬-৭ বার বিদ্যুত আসাযাওয়া করে। এতে করে প্রচন্ড গরমে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। স্কুল-কলেজ পড়–য়া শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা দারুণভাবে বিঘিœত হচ্ছে। ওই বাসিন্দা আরো বলেন, আগে যাদের বাড়িতে জেনারেটর ছিল তাদের অনেকে শতভাগ বিদ্যুতায়নের পর সেটি বিক্রি করে দেয়। এখন বিদ্যুত বিপর্যয়ের ফলে তারা বেকায়দায় পড়েছেন।

ফেনী পৌরসভার ১নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আশ্রাফুল আলম গীটার জানান, এলাকায় শোডশেডিংয়ের সময়সূচী মাইকিং করার কারনে বাসিন্দারা আগেভাগে পানি তোলা এমনকি রান্নাবান্নার কাজ সেরে নেন।

জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য নুর মোহাম্মদ সফিকুল হোসেন মহিম জানান, পরশুরামে বিদ্যুতের অবস্থা খুবই শোচনীয়। প্রতিদিন কমপক্ষে ১০ থেকে ১২ বার পর্যন্ত আসাযাওয়া করে। রাতে ৩-৪ ঘন্টা থাকেনা। গত কয়েকদিন আগে একটি চার্জার ফ্যান কিনেছিলাম। বাড়িতে একটি সোলার থাকায় আলো পাওয়া গেলেও গরমে সবাই অসহ্য হয়ে পড়ে।

সোনাগাজী পৌর এলাকার বাসিন্দা সাংবাদিক আমজাদ হোসাইন জানান, পৌর এলাকায় গত ২৪ ঘন্টায় ৬ ঘন্টা লোডশেডিং করা হয়। গ্রামের অবস্থা আরো ভয়াবহ। কোন কোন এলাকায় রাত ১০-১১টার দিকে বিদ্যুত গেলে ভোর রাতে পাওয়া যায়। গ্রামের মানুষ বিদ্যুৎ পাচ্ছে দৈনিক ৬ থেকে ৮ ঘণ্টা।

ফুলগাজী বাজারের ইফাজ কম্পিউটার ট্রেনিং সেন্টারের মালিক সাইফুল ইসলাম জানান, সোমবার দিনের বেলায় অন্তত ৬ বার লোডশেডিং হয়। একবার বিদ্যুত গেলে দুই থেকে তিন ঘন্টা পর আসে।

বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) ভাষ্যমতে, স্থানীয়ভাবে লংকা পাওয়ার ১১৪ ও ডরিন পাওয়ার ৩৩ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করলেও জাতীয় গ্রীডে যুক্ত করা হয়। ফেনী জেলায় আবাসিক, বাণিজ্যিক সহ বিভিন্ন পর্যায়ের ৭১ হাজার গ্রাহক রয়েছেন। তাদের জন্য প্রতিদিন সর্বোচ্চ বিদ্যুতের চাহিদা ৪৫ মেগাওয়াট। জাতীয় গ্রীড থেকেই এ বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়। চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কমে যাওয়ায় লোডশেডিং হয়েছে।

ফেনী পল্লী বিদ্যুত সমিতির এজিএম (অপারেশন) আকাশ কুসুম বড়–য়া জানান, ফেনী জেলায় ৪ লাখ ১৫ হাজার গ্রাহককে ৯৭টি পিডারের মাধ্যমে বিদ্যুত সরবরাহ করা হয়। জেলায় ৭০ থেকে ৮০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদা থাকলেও তুলনামূলক কম মিলছে। এতে করে প্রতিদিন গড়ে ৫-৬ বার লোডশেডিং করা হয় বলে তিনি জানান।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: কন্টেন্ট সুরক্ষিত!!