আরিফ আজম :
শ্রম আইন ২০০৬ ও শ্রম বিধিমালা ২০১৫ এর নিয়ম অনুযায়ী কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করতে ৩৫৪টি বিধি মানার বাধ্যবাধ্যকতা রয়েছে। এর মধ্যে স্বাস্থ্য সচেতনতার বিষয়টি অধিকতর গুরুত্ব দেয়ার কথা থাকলেও মানা হয়না জেলার বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানেই। শুধু তাই নয়, বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠান শ্রমিকদের নিয়োগপত্র কিংবা পরিচয়পত্রও না দিয়ে চালিয়ে যাচ্ছে কর্মযজ্ঞ। অনিয়মকে নিয়ম করেই চলা জেলার প্রায় সবকটি প্রতিষ্ঠানের এমন দৃশ্য সচরাচর। জেলায় সদ্য স্থাপিত কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের পরিদর্শন কার্যক্রমে এমন চিত্র উঠে এসেছে।
প্রতিষ্ঠানটির দায়িত্বরত কর্মকর্তারা জানান, গতবছরের নভেম্বরের শুরুর দিক থেকে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের কার্যক্রম শুরু হয়। ফেনী ছাড়াও নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুর জেলায় এ প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম চলে। ইতিমধ্যে কলকারখানা, করাতকল, বেকারি সহ ছোট-বড় ২৯১টি প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করেছে অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। প্রায় সব প্রতিষ্ঠানকেই শুধরে নিতে সময় বেঁধে দিয়ে নোটিশ দেয়া হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, প্রতিষ্ঠানটি চালুর পর থেকে হটলাইনে অভিযোগ পড়েছে শুধুমাত্র তিনটি। এর মধ্যে সবটিই নিষ্পত্তি করা হয়েছে। ফেনীর একজন বেকারি শ্রমিক দূর্ঘটনার শিকার হন। দুই মাসের বেতন পরিশোধ না করেই তাকে চাকুরিচ্যুত করে মালিকপক্ষ। এনিয়ে তিনি হটলাইনে ফোন করে অভিযোগ করেন। পরে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের মধ্যস্থতায় দুইপক্ষকে ডেকে বেতন বাবদ ১২ হাজার ৩শ ৫০টাকা আদায় করে মিমাংসা করা হয়।
ওই সূত্র আরো জানায়, নোয়াখালীর একটি হ্যাচারিতে দীর্ঘদিন চাকুরী করতেন এক ব্যক্তি। তার বিরুদ্ধে চুরির অভিযোগ এনে তিন মাসের বেতন না দিয়ে চাকুরিচ্যুত করা হয়। এ ঘটনায় তিনি হটলাইনে অভিযোগ করেন। এর প্রেক্ষিতে উভয়পক্ষকে নিয়ে তিন দফা বৈঠক করেন কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। একপর্যায়ে মিমাংসা না হওয়ায় চাকুরিচ্যুত ব্যক্তিকে শ্রম আদালতে মামলা করতে অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে প্রত্যয়নপত্র দেয়া হয়।
শুধু ফেনী কিংবা নোয়াখালীর ওই দুই ব্যক্তিই নন, কর্মক্ষেত্রে কেউ অনিয়ম-বঞ্চনার শিকার হলে প্রতিকার চেয়ে অনলাইনে লেবার ইন্সপেকশন ম্যানেজমেন্ট অ্যাপ্লিকেশন (লিমা), ই-মেইল, সরাসরি, প্রচলিত পদ্ধতিতে চিঠি দিয়ে বা শ্রমিক হটলাইনে ফোন করে অভিযোগ করতে পারেন।
কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের ফেনী জেলা কার্যালয়ের উপমহাপরিদর্শক প্রকৌশলী শরীফ আহাম্মেদ আজাদ ফেনীর সময় কে জানান, বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬ ও বাংলাদেশ শ্রম বিধিমালা ২০১৫ অনুসরণ করে শ্রমিকদের কল্যাণ, পেশাগত স্বাস্থ্য, কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা বাস্তবায়নে কাজ করে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর। যেকোন প্রতিষ্ঠানের নিয়ম অনুযায়ী কাউকে চাকরিচ্যুত করলে চার মাস কিংবা কোনো কর্মী স্বেচ্ছায় চাকরি ছেড়ে দিলে অন্তত দুই মাস আগে নোটিশ দিতে হয়। কিন্তু কোনো নোটিশ না দিয়েই চাকরিচ্যুত করা হলে সংক্ষুদ্ধ ব্যক্তি আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের সুযোগ রয়েছে।
তিনি আরো জানান, যেকোন ধরনের অভিযোগ পেলে আইন অনুযায়ী অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেয়া হয়। অধিদপ্তরের কার্যক্রম নতুন হওয়ায় অনেকে এখনো বিষয়টি অবগত নয়। অধিকার আদায়ে সচেতন হলে অধিদপ্তর তাদের পাশে থাকবে।