দৈনিক ফেনীর সময়

লেমুয়া-ছনুয়ায় বানের পানির স্রোতে তীব্র হচ্ছে নদী ভাঙন

সদর প্রতিনিধি :

স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যার ধকল কাটার আগেই ফেনীর কালিদাস পাহালিয়া নদীতে ভাঙন দেখা দিয়েছে। এতে ঘর-বাড়ি বিলীনের আশংকায় শতাধিক পরিবারে উদ্বেগ রয়েছে।

মঙ্গলবার দুপুরে সরেজমিনে দেখা গেছে, সদর উপজেলার লেমুয়া ইউনিয়নের উত্তর নেয়ামতপুর গ্রামে বন্যার পানি নেমে গেলেও ক্ষতচিহ্ন দৃশ্যমান। রাস্তা-ঘাটের বেহাল দশা। মনির উদ্দিন ভূঞা বাড়ির বাসিন্দারা বন্যার পানিতে ভিজে যাওয়া কাপড়-চোপড় শুকাতে ব্যস্ত। এর মধ্যেও সবার চোখে-মুখে আতংক। বাড়ির পাশ ঘেঁষা কালিদাস পাহালিয়া নদী। বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর নদীর পাড়ে ভাঙন দেখা দিচ্ছে। ভাঙন রোধে নদীর পাড়ে ফেলা ব্লক ও জিও ব্যাগ পানির প্রবল স্রোতে তলিয়ে গেছে। ফলে সেখানকার অন্তত ১২০ পরিবারে আতংক রয়েছে।

মনির উদ্দীন ভূঞা বাড়ির বাসিন্দা আবুল কালাম বলেন, তিনি দীর্ঘদিন মালদ্বীপ থাকেন। ক’দিন আগে ঘরে বন্যায় পানি হাটুপানি নিমজ্জিত ছিল। এখন হঠাৎ বাড়ির পাশে নদী ভাঙন দেখা দিয়েছে। এতে করে পরিবার-পরিজন নিয়ে আতংকে রয়েছি।

জাহাঙ্গীর আলম নামে স্থানীয় আরেক বাসিন্দা জানান, ক’দিন আগেও ঘরে ৪ ফুট উচ্চতা পানি ছিল। এখন ঘর-বাড়ি ভাঙলে আমরা কোথায় যাবো। ভাঙন ঠেকাতে দুই-একদিনের মধ্যে জিও ব্যাগ ফেলা জরুরী।

স্থানীয় বাসিন্দা কলেজ ছাত্র সাইমুন জানান, বর্তমানে বসতঘর থেকে ৭ ফুট দূরত্বে নদী চলে এসেছে। এখনি পদক্ষেপ গ্রহণ করা না হলে শতাধিক ঘর-বাড়ি ও মসজিদ নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাবে। এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক মুছাম্মৎ শাহীনা আক্তারকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে।

স্থানীয়রা জানান, উত্তর নেয়ামতপুর এলাকা ছাড়াও পাশ্ববর্তী লেমুয়া এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। খবর পেয়ে ফেনীস্থ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রাশেদ শাহরিয়ার ও সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাজমুল হাসান ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেছেন।

এদিকে ছনুয়া ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ড দক্ষিণ টংগীরপাড় এলাকার কালিদাস পাহালিয়া নদীর পাড় ঘেষে তৈরী হওয়া অন্তত ৫০ ঘর বিলীন হয়ে যায়। আরো শতাধিক ঘর বাড়ি ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। মাথা গোঁজানোর শেষ সম্বল বসতবাড়ি বাঁচাতে সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোতে ঘুরে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবী জানান স্থানীয়রা।

স্থানীয় পেশকার বাড়ির রাকিব আফসার জানান, পার্শ্ববর্তী অন্তত ৫০টি ঘর বিলীন হয়ে যায় এবং শতাধিক ঘর এখনো ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে।

স্থানীয় আইয়ুব কোম্পানির ছেলে আজিজুল হাকিম পিয়াস জানান, এমন কিছু মানুষের ঘর নদীতে বিলীন হয়ে যায়। যেটি ছিলো তাদের শেষ সম্বল। তাদের লেমুয়া ব্রীজের পাশে থাকা দোকানপাটে ঘর হারানো কিছু মানুষ আশ্রয় নেয়।

আলী আজ্জম মোল্লা বাড়ীর আরমান জানান, তাদের বাড়ির পেছনে অন্তত ১৫ ফুট জমি নদীতে বিলীন হয়ে যায় এবং ক্রমশ ভাঙন ঘরের দিকে এগোচ্ছে। গতকাল মঙ্গলবার ফেনী জেলা প্রশাসক মুছাম্মৎ শাহীনা আক্তার ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে অতিদ্রুত নদী ভাঙ্গন এলাকায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে নির্দেশ দেন।

সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাজমুল হাসান বলেন, ভাঙন রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রাশেদ শাহরিয়ার বলেন, নেয়ামতপুর, টঙ্গিরপাড় ও লেমুয়া ব্রীজ সংলগ্ন স্থানে ভাঙনের দৃশ্য দেখেছি। ইতিমধ্যে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। প্রাথমিকভাবে জরুরীভাবে জিও ব্যাগ ফেলার প্রস্তুতি চলছে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: কন্টেন্ট সুরক্ষিত!!