নিজস্ব প্রতিনিধি :
সোনাগাজীতে দীর্ঘ ১৮ বছরের বিরোধ মিটিয়ে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আন্দোলন করার অঙ্গিকার করেছে বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদল, কৃষকদল, স্বেচ্ছাসেবক ও শ্রমিকদলের নেতাকর্মীরা। কেন্দ্রের নির্দেশে সোমবার দুপুরে পৌরশহরের একটি রেস্টুরেন্টে উপজেলা বিএনপির পক্ষ থেকে সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের নিয়ে সমন্বয় সভার আয়োজন করা হয়।
উপজেলা বিএনপির সভাপতি গিয়াস উদ্দিনের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক জামাল উদ্দিন সেন্টুর সঞ্চালনায় সভায় বক্তব্য রাখেন উপজেলা বিএনপি নেতা মঞ্জুর হোসেন, উপজেলা যুবদলের আহবায়ক খুরশিদ আলম ভূঁইয়া, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি আবু বকর ছিদ্দিক, ছাত্রদলের সভাপতি মাইনুল হোসেনসহ উপজেলা ও ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি-সম্পাদকেরা বক্তব্য রাখেন।
বিএনপি নেতাকর্মীরা বলেন, ২০০৩সালের দিকে ফেনী-৩ আসনের প্রয়াত সংসদ সদস্য ও বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মোহাম্মদ মোশাররফ হোসেনের অনুসারিদের সঙ্গে দলীয় বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বনিবনা না হওয়ায় দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ভাই সাঈদ এস্কান্দারের অনুসারিদের বিরোধের সৃষ্টি হয়। এরপর থেকে দীর্ঘ ১৮ বছর পর্যন্ত চলতে থাকে এ বিরোধ। বিরোধের কারনে আভ্যন্তরীন কোন্দল, দলীয় গ্রুপিং, হামলা-মামলায় জর্জরিত হয়ে গ্রেফতারের ভয়, পুলিশি তৎপরতা ও সমন্বয়নের অভাবে এতদিন মাঠে নামতে পারছিল না বিএনপির নেতাকর্মীরা। তবে যুবদল ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা সবসময় মাঠে তৎপর ছিল। বিএনপির দূর্গ হিসেবে খ্যাত সোনাগাজীর রাজপথ এখন সরকার দলীয়দের দখলে। ঐক্যমত না থাকায় এতদিন পুলিশ ও সরকার দলীয় নেতাকর্মীদের তৎপরতায় কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচি পালন করতে পারছে না বিএনপির নেতাকর্মীরা। অবশেষে কেন্দ্রের হস্তক্ষেপে বিরোধ মিটিয়ে সোনাগাজীতে বিএপির নেতাকর্মীদের মধ্যে রাজনৈতিক চাঞ্চল্যতা ফিরে আসায় নেতাকর্মীরা বেশ উজ্জ্বীবিত।
সভায় উপস্থিত সবাই এখন থেকে সব ধরনের আন্দোলন-সংগ্রামে ঐক্যবদ্ধ হয়ে রাজপথে থাকার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। সাধারণ নেতাকর্মীদের প্রত্যাশা এখন থেকে দলের মধ্যে কেউ আর বিরোধ ছড়াতে পারবে না। দলীয় নেতাকর্মীরা চাঙ্গা হয়ে রাজপথে থাকবে।
উপজেলা যুবদলের আহবায় খুরশিদ আলম ভূঁইয়া বলেন, বিরোধের কারনে এতদিন নেতাকর্মীরা দুইভাগে বিভক্ত ছিল। যার কারনে সক্রিয়ভাবে সবাই দলীয় বিভিন্ন কর্মসূচীতে অংশ নিতে পারেনি। কেন্দ্রের হস্তক্ষেপে এখন দলের মধ্যে আর কোন বিরোধ নেই। পূর্বের সকল ভেদাভেদ ভুলে আমরা সবাই এখন ঐক্যবদ্ধ হয়ে রাজপথে কেন্দ্রের দেওয়া সকল কর্মসূচী শান্তিপূর্ণভাবে পালন করবো। তবে বিএপির শান্তিপূর্ণ র্কর্মসূচীতে কেউ বাঁধা সৃষ্টি করলে তাদেকে রাজপথে বিএনপির নেতাকর্মীরা কঠোর হস্তে মোকাবেলা করবে।
উপজেলা বিএনপির সভাপতি গিয়াস উদ্দিন বলেন, দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে পূর্বে কি ছিল সেটা ভাবার আর সময় নেই। সব ভুলে এখন শহীদ জিয়ার আদর্শের সৈনিকেরা সবাই এক কাতারে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে রাজপথে থেকে আওয়ামী লীগের দু:শাসনের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আন্দোলন করবেন।
তিনি বলেন, সমন্বয় সভা শেষে কেন্দ্রীয় কর্মসূচীর অংশ হিসেবে জ্বালানী তেল, পরিবহনের ভাড়াসহ দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতিসহ ভোলায় পুলিশের গুলিতে দলীয় দুই নেতা নিহত হওয়ার প্রতিবাদে বিক্ষোভ করার কথা ছিল। কিন্তু পুলিশের অনুরোধে সভা শেষ করে তারা মিছিল না করে বাড়ি ফিরে যান।
এদিকে বিএনপির সভা ও মিছিলকে কেন্দ্র করে পৌরশহরের আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে পৌরসভার মেয়র রফিকুল ইসলাম খোকনের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা অবস্থান নেয়। পরে বিকেলে ছাত্রলীগের উদ্যোগে সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যের প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়।
সোনাগাজী মডেল থানার এসআই আরিফুল করিম বলেন, বিএনপির কর্মসূচীকে গিয়ে কেউ যাতে করে সোনাগাজীতে নাশকতাসহ কোন ধরণের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটাতে না পারে সেজন্যে সকাল থেকে পৌরশহরসহ উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ স্থানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন ও উপজেলা বিভিন্ন স্থানে পুলিশি টহল জোরদার ছিল।