নিজস্ব প্রতিনিধি :
চব্বিশের ভয়াবহ বন্যায় নোয়াখালীর মুছাপুর রেগুলেটর ভাঙ্গার ফলে সোনাগাজীতে ছোট ফেনী নদীর ভাঙ্গনে বিলীন হচ্ছে ঘরবাড়ী, ফসলি জমি ও ফলের বাগান। এতে আতঙ্কে ঘরবাড়ী ছাড়ছে নদী তীরবর্তী বাসিন্দারা। ঝুঁকিতে রয়েছে স্থানীয় বিদ্যালয়, মসজিদ ও মাদরাসা। দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে বিস্তীর্ণ জনপদসহ অনেক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করছেন গ্রামবাসী।
স্থানীয় সূত্র জানায়, সোনাগাজী উপজেলার চরদরবেশ ইউনিয়নের উত্তর চরদরবেশ, মোল্লা পাড়া, উত্তর চরসাহাভিকারী, বগাদানা ইউনিয়নের জেলেপাড়া, চরমজলিশপুর ইউনিয়নের কুঠিরহাট সহ দাগনভূঞা পর্যন্ত প্রায় বিশাল এলাকাজুড়ে ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। এখানকার নদী তীরবর্তী বাসিন্দারা কেউ বসতভিটে হারিয়ে পাশে কোন বাড়ীতে কার্পেট টাঙ্গিয়ে আশ্রয় নিয়ে থাকছেন অথবা কেউ ভাড়া নিয়ে থাকছেন। কেউবা কোন আত্মীয়ের বাড়ী গিয়ে উঠছেন। উত্তর চরদরবেশ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মসজিদ ও হাফেজিয়া মাদরাসা ঝুঁকিতে রয়েছে।
মোল্লাপাড়া এলাকার নদীতীরবর্তী বাসিন্দা মাজেদা খাতুনের বয়স ৮০। তার বসতবাড়ীর আশপাশে সকল ঘর বিলীন হয়ে গেছে। প্রতিদিন আতঙ্কে দিন পার করে সে। মাজেদা খাতুন ফেনীর সময় কে বলেন, ‘আমার আশপাশে সব বিলীন হয়ে গেছে। আমি রাতদিন চিন্তা করি। কোথায় যাবো,কোথায় থাকবো, কোথায় খাবো। রাতে এসব চিন্তায় ঘুম হয় না। ছেলেদের টাকা পয়সা নাই। দিনে এনে দিনে খায়। রাত-দিন কান্না করতে করতে দিন যাচ্ছে।’
উত্তর চরদরবেশের বাসিন্দা আবদুল খালেন তিন দশক ধরে এখানে বাস করছেন। গত ৫ বছরে তিনবার বসতভিটে পরিবর্তন করে এখন নদী তীরবর্তী নতুন ঘর তৈরি করে বসবাস করছেন। সেটাও এখন ঝুঁকির মুখে রয়েছে। এছাড়া তার ৬০ শতাংশ ফসলি জমির অর্ধেক এখন বিলীন হয়ে গেছে। আব্দুল খালেক বলেন, ‘এ পর্যন্ত তিনবার ঘর পরিবর্তন করছি। এখানে যে যায়গা দেখছেন,নদীর এখানে কিছুদিন আগেও ৫০ টার বেশি পরিবার বাস করতো। এখন সব বিলীন হয়ে গেছে। আমরা প্রতিবার আশ্বাস পাই। কিন্তু কোন কিছু দেখি না। আমরা প্রধান উপদেষ্টার নিকট জোর দাবি জানাই, এ সরকার যেন দ্রুত ব্যবস্থা করে।’
মহিউদ্দিন খোকন নামে মোল্লা পাড়ার আরেক বসিন্দার বসতভিটে কিছুদিন পূর্বে নদীতে বিলীন হয়ে যায়। এখন পাশে নতুন করে টিনের ঘর তৈরি করে কোনভাবে বসবাস করছেন। তাও খোকনের চোখেমুখে চিন্তার ভাজ। কখন সেটাও চলে যায়। মহিউদ্দিন খোকন ফেনীর সময় কে বলেন, ‘এই ওইদিকে ব্রীজ দোখছেন, ওখান থেকে স্রোত এসে সব ভেঙে নিয়ে যায়। কিছুদিন পূর্বে আমার ঘর নিয়ে গেছে। আশপাশে সবাই আতঙ্কে আছে। এখন নতুন কোন রকম একটা টিনের তৈরি করছি, তাও এভাবে থাকলে যে কোন সময় নদীতে বিলীন হয়ে যাবে। আমরা সরকারের কাছে এর স্থায়ী সমাধান চাই। এটা মূলত মুছাপুর রেগুলেটর ভাঙার পর এভাবে ভাঙন শুরু হয়েছে। এছাড়া বালু উত্তরণের ফলে তা আরো বেশি হচ্ছে।’
স্থানীয় সাবেক ইউপি সদস্য মো: ইলিয়াস ফেনীর সময় কে বলেন, ‘মুছাপুর রেগুলেটর ভেঙে যাওয়ার পর থেকে এখানে মুছাপুর থেকে দাগনভূঞা অন্তত ৫০ কিলোমিটার হবে। এ ৫০ কিলোমিটারের মধ্যে যায়গায় যায়গায় ভাঙন হচ্ছে। আমাদের এ সমস্যাগুলো কেউ দেখার মত নাই। উপদেষ্টা রেজওয়ানা আসছিল। উনি আমাদের আশ্বস্ত করেছিলেন আগামী ২-৩ বছরের মধ্যে এটা পাবো। কিন্তু আমরা আশানুরূপ কিছু পাইনি। আমরা প্রধান উপদেষ্টার নিকট দাবী জানাই, আমাদের যে যায়গায় যায়গায় ভাঙন হচ্ছে তার উপস্থিত একটা ব্যবস্থা করা। রেগুলেটর খুব দ্রুত হবে বলে আমরা আশাবাদী।’