দৈনিক ফেনীর সময়

আজ পবিত্র ঈদুল আযহা

আজ পবিত্র ঈদুল আযহা

সময় রিপোর্ট :

আজ পবিত্র ঈদুল আজহা, যা কোরবানির ঈদ নামে পরিচিত। মুসলমানদের দ্বিতীয় সর্ববৃহৎ ধর্মীয় উৎসব। ঈদের নামাজ শেষে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে পশু কোরবানি করবেন সামর্থ্যবান মুসলমানরা। মুসলমানদের জাতির পিতা হজরত ইবরাহিম আ:-এর ত্যাগের স্মৃতিবিজড়িত এ ঈদ। মূলত আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য প্রয়োজনে নিজের প্রিয় বস্তুকে কোরবানি দেয়ার প্রস্তুতির শিক্ষাই এ ঈদের আদর্শ। আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে দ্বিধাহীনভাবে তার কাছে আত্মসমর্পণ এবং তার নির্দেশ শর্তহীনভাবে মেনে নেয়াই হলো ঈদুল আজহার প্রকৃত শিক্ষা। আল্লাহর রাহে পশু কোরবানি করে সেই ত্যাগের কথাকেই স্মরণ করা হয়।

ঈদুল আজহার সাথে পবিত্র হজের সম্পর্ক রয়েছে। শুক্রবার পবিত্র মক্কা নগরীর অদূরে আরাফাতের ময়দানে সমবেত হওয়ার মধ্য দিয়ে পবিত্র হজ পালিত হয়েছে। ১০ লাখ মুসলমানের অংশগ্রহণে এবারের হজ পালিত হয়। শনিবার সৌদি আরবে ঈদুল আজহা উদযাপিত হয়েছে। সকালে মুজদালিফা থেকে ফিরে হাজীরা মিনায় অবস্থান করে পশু কোরবানিসহ হজের অন্যান্য কার্যাদি সম্পাদন করেন।

মুসলিম প্রধান বাংলাদেশে ঈদুল আজহা ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য, আনন্দ ও উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে উদযাপিত হয়। ঈদুল আজহা হজরত ইবরাহিম আ: ও তার পুত্র হজরত ইসমাঈল আ:-এর সাথে সম্পর্কিত। হজরত ইবরাহিম আ: স্বপ্নে আদিষ্ট হয়ে পুত্র ইসমাইলকে আল্লাহর উদ্দেশ্যে কোরবানি করতে গিয়েছিলেন। আসলে আল্লাহর পক্ষ থেকে এ আদেশ ছিল হজরত ইবরাহিম আ:-এর জন্য পরীক্ষা। তিনি পুত্রকে আল্লাহর নির্দেশে জবাই করার সব প্রস্তুতি নিয়ে সেই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। আল্লাহর নির্দেশে ইসমাঈলের পরিবর্তে কোরবানি হয় দুম্বা। সেই ঐতিহাসিক ঘটনা স্মরণে হজরত ইবরাহিম আ:-এর সুন্নত হিসেবে পশু জবাইয়ের মধ্য দিয়ে কোরবানির বিধান এসেছে ইসলামী শরিয়তে। সামর্থ্যবানদের জন্য পশু কোরবানি করা ওয়াজিব। আল্লাহর উদ্দেশ্যে কোরবানি করার পর আনন্দ থেকেই উদযাপিত হয় ঈদুল আজহা বা কোরবানির ঈদ। জিলহজ মাসের ১০ তারিখ। এছাড়াও ১১ ও ১২ তারিখ কোরবানি করা যায়।

ইসলামে কোরবানি খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। পবিত্র কুরআনের সূরা কাউসারে এ ব্যাপারে বলা হয়েছে, ‘অতএব আপনার পালন কর্তার উদ্দেশে নামাজ পড়–ন এবং কোরবানি করুন।’ সূরা হজে বলা হয়েছে ‘কোরবানি করা পশু মানুষের জন্য কল্যাণের নির্দেশনা।’ কোরবানির মূল উদ্দেশ্যই তাকওয়া বা খোদাভীতি। এ প্রসঙ্গে কুরআনে বলা হয়েছে, ‘এগুলোর গোশত আমার কাছে পৌঁছায় না। কিন্তু তোমাদের তাকওয়া পৌঁছে যায়।’

রাসূল সা: বলেছেন, ‘ঈদুল আজহার দিন কোরবানির চেয়ে আর কোনো কাজ আল্লাহর কাছে অধিক পছন্দনীয় নয়।’ অন্যত্র বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি সামর্থ্য থাকার পরও কোরবানি দিলো না সে যেন আমার ঈদগাহে না যায়।’

বিভিন্ন বর্ণনা থেকে জানা যায়, পৃথিবীতে মানবজাতির সূচনা থেকেই কোরবানির প্রচলন। হজরত আদম আ:-এর দুই পুত্র হাবিল ও কাবিল সর্বপ্রথম কোরবানি দিয়েছিলেন। এ প্রসঙ্গে কুরআনে এসেছে, ‘আপনি তাদের আদমের দুই পুত্রের বাস্তব অবস্থা পাঠ করে শোনান। যখন তারা উভয়ে কিছু কোরবানি করেছিল। তখন তাদের একজনের কোরবানি গৃহীত হয়েছিল এবং অপরজনেরটি গৃহীত হয়নি’ (সূরা মায়েদা-২৭)।

আল্লাহর সন্তুষ্টিই কোরবানির মূল উদ্দেশ্য। তাঁর পথে প্রয়োজনে জীবন ও সবচেয়ে প্রিয় বস্তু উৎসর্গের জন্য তৈরি হওয়ার শিক্ষাই এতে নিহিত। এ জন্যই কোরবানির পশু জবাইয়ের সময় বলা হয়- ‘ইন্না সালাতি ওয়া নুসুকি ওয়া মাহ্ইয়াইয়া ওয়া মামাতি লিল্লাহি রাব্বিল আলামিন।’ অর্থাৎ- নিশ্চয় আমার নামাজ, আমার কোরবানি আমার জীবন, আমার মৃত্যু সবই আল্লাহর জন্য, যিনি নিখিল বিশ্বের প্রতিপালক।’

গরু, মহিষ, উট, ভেড়া, ছাগল, দুম্বা থেকে যেকোনো একটি প্রাণী দিয়ে কোরবানি করা যায়। কোরবানির পশুর গোশত তিন ভাগ করে একভাগ আত্মীয়স্বজনকে, আরেক ভাগ গরিবদের মধ্যে বণ্টন এবং বাকি এক ভাগ নিজেরা খাওয়া সুন্নত। ঈদুল আজহার দুই রাকাত নামাজ জামাতে আদায় করা ওয়াজিব।

কোরবানিকৃত পশুর রক্ত বা বর্জ্য পদার্থের কারণে যাতে পরিবেশ দুর্গন্ধময় না হয় সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ফেনী পৌরসভার মেয়র নজরুল ইসলাম স্বপন মিয়াজী।

ফেনীতে ঈদ জামাত কোথায় কখন :

ঐতিহাসিক মিজান ময়দানে ঈদগাহ মাঠে ঈদুল ফিতরের প্রধান জামাত শুরু হবে সকাল ৮টায়। ফেনী কেন্দ্রীয় বড় জামে মসজিদে ৭টা ১৫ মিনিটে, জহিরিয়া জামে মসজিদে ৭টা ও পুলিশ লাইনস মসজিদে ৮টায় অনুষ্ঠিত হবে।

এছাড়া সার্কিট হাউজ জামে মসজিদে সাড়ে ৭টায়, মহিপাল চৌধুরী বাড়ী জামে মসজিদে ৮টা, পুরাতন রেজিষ্ট্রি অফিস জামে মসজিদে ৭টা ৪৫ মিনিটে, ফেনী রেল স্টেশন জামে মসজিদে সাড়ে ৭টা, মুন্সীবাড়ী জামে মসজিদে সাড়ে ৭টা, মসজিদ ই নুর কোর্ট বিল্ডিং সংলগ্ন মসজিদে ৭টা, উপজেলা পরিষদ জামে মসজিদে ৮টা, জেলা কারাগার মসজিদে ৮টা, বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ড জামে মসজিদে সাড়ে ৮টা, হাজারীপাড়া জামে মসজিদে ৬টা ৪৫ মিনিট, কামাল হাজারী জামে মসজিদে ৮টা, শর্শদী উচ্চ বিদ্যালয় প্রাঙ্গণ কেন্দ্রীয় ঈদগাহ মাঠ সাড়ে ৮টা ও মমিন জাহান জামে মসজিদে সাড়ে ৭টায় ঈদের জামাত শুরু হবে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: কন্টেন্ট সুরক্ষিত!!