‘কবিতার জাগরণ উপকূলে আমরন’ এই প্রতিপাদ্য শ্লোগান উপজিব্য করে গত ২৩ ও ২৪ মে নোয়াখালী শহরতলীর জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে বেশ সাড়ম্বর ভাবে নোয়াখালী কবিতা উৎসবের ঘটা আয়োজন সম্পন্ন হয়। উৎসবের দ্বিতীয় দিন ২৪ মে ২০২৪ শুক্রবার কবি সাঈদ লিটনের আমন্ত্রনে ফেনীর সাহিত্য সংগঠন বলপয়েন্টের সাথী হয়ে সকাল ১০.১০ এ তীব্র গরম উপেক্ষা করে আমাদের নিয়ে মটরযান চলা শুরু করে কবিতার শহরের দিকে। গাড়ীতে নবীণ প্রবীণ একঝাঁক চেনামুখ কবিদের সাথে গান, গল্প, আড্ডায় দারুণ সময় পার করে প্রায় এগারটা নাগাদ আমরা পৌঁছে যাই গন্তব্যে। কবি ইকবাল আলমের নেতৃত্বে অংশীজন কবিদের মধ্যে কবি ইকবাল চৌধুরী, সীমান্তের কবি ওবায়েদ মজুমদার, ফিরোজ আলম, উত্তম দেব নাথ, হাসান সাঈদ, সাইফ ফরহাদী, বিপ্লব রায়, ইমরান ইমন, মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম, সাইফুল ইসলাম, সাঈদ লিটন, জাহাঙ্গীর আলম, উত্তম অরন, দিপংকর শীল প্রমূখ।
মিলনায়তনের প্রবেশ মুখে সুদৃশ্য তোরণ ছিলো বেশ নজর কাড়া। ডুকতেই চিত্রশিল্পী ও কবি বিপ্লব রায়ের আহবানে তোরণ সম্মুখে হয় ফটো সেশন। এরপর সবাই মিলনায়তনে প্রবেশ করি। জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনের দৈন্যদশা ছিলো পীড়া দায়ক। বিবর্ণ দেয়াল গুণেধরা আর ভাঙ্গাচোরা আসবাব। বসবার আসন গুলো ছিলো সাংঘাতিক রকমের রুগ্ন। অধিকাংশ আসন মরিচা খাওয়া লোহা দন্ড শূণ্য। দুইজন কবিতো পাশাপাশি আসন ভেঙে দপাস করে উল্টে পড়েই গেলেন। আসবাবপত্রের এমন ভগ্নদশা ছিলো বিব্রতকর।
মঞ্চে চলছিলো কবিতা আলাপন। অর্থাৎ বদ্বীপ বৃহত্তর নোয়াখালীর ইতিহাস-ঐতিহ্য, এখানকার মানুষের জীবনাচরণ, কৃষ্টি, সভ্যতা, কবিতা ও সাহিত্য ‘নোয়াখালীর কবি ও কবিতা’ বিষয়ে সরস আলোচনা। আলোচনায় অংশ গ্রহণ করেন নোয়াখালী কবিতা উৎসব -২০২৪-এর আহবায়ক কবি বদরুল হায়দার চৌধুরী, সদস্য সচিব কবি জামিল জাহাঙ্গীর, কবি আলমগীর রেজা চৌধুরী, কবি ম, পানা উল্যাহ, কবি আবু হেনা আবদুল আউয়াল, কবি ওবায়েদ মজুমদার, কবি শাবিহ মাহমুদ, কবি মিন্টু সারেং প্রমূখ। ওপার বাংলা কলকাতা থেকে আগত কবি বিজন বোস ও কবি অভীককুমার দে’র আলোচনা ছিলো ভক্তি ও কৃতজ্ঞতা পূর্ণ। সবার শেষে আলোচনায় অংশগ্রহন করেন আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন সংগঠন এনআরডিএস এর নির্বাহী পরিচালক কবি আব্দুল আউয়াল। ড. সেলিম আলদীনের কাব্য যাত্রা নিয়ে আলোচনা করেন ওবায়েদ মজুমদার।
বাংলা সাহিত্যের অনেক লেখক জন্মসূত্রে কিংবা পৈতৃক নিবাসের সূত্রে বৃহত্তর নোয়াখালী জেলার অধিবাসী। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছেন সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ, শহীদুল্লাহ কায়সার, জহির রায়হান, জহুর হোসেন চৌধুরী, গাজীউল হক, ওবায়েদ উল হক, বেলাল চৌধুরী, সেলিনা হোসেন, হোসনে আরা শাহেদ, আব্দুল হাকিম, মাখন লাল রায় চৌধুরী, কমরেড মুজাফফর আহমদ চৌধুরী, হবিবুর রহমান, মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী, আবদুর রশীদ ওয়াসেকপুরী, জাতীয় অধ্যাপক কবীর চৌধুরী, মুনীর চৌধুরী, ড. আবদুল কাদের ও আবদুস শাকুর। অনেকের আলোচনায় উল্লেখিত কবি ও লেখকদের নাম ও কর্ম কৃর্তি বেশ জোরালো ভাবে উঠে আসে।
আলোচনা পর্ব শেষে শুরু হয় নিবন্ধিত কবিদের স্ব-রচিত কবিতা পাঠ। এর মাঝে জুমার নামাজের জন্য একঘন্টার বিরতি। বিরতির পর আবার শুরু হয় কবিতা পাঠ। নোয়াখালীর কবিদের পর লক্ষীপুর জেলার কবিরা কবিতা পাঠ করে শোনান। সবার শেষে ফেনীর কবিরা দুই ভাগে কবিতা পাঠে অংশগ্রহণ করেন। প্রথম ভাগে বলপয়েন্টের হয়ে কবি ইকবাল আলমের নেতৃত্বে থাকা কবিগণ এবং দ্বিতীয় ভাগে অর্থাৎ অনুষ্ঠানের সমাপনীতে ফেনী সাহিত্য সভা কবি শাবিহ মাহমুদের নেতৃত্বে অংশগ্রহণ করা কবিগণ কবিতা পাঠ করে শোনান। এ পর্বে কবি মনজুর তাজিম, বকুল আকতার দরিয়া, জাহাঙ্গীর আলম, শিরিন রহমান প্রমূখ কবিরা কবিতা পাঠ করে শোনান।
উৎসব উদযাপন পরিষদের পক্ষ থেকে আগত কবিদের উৎসবের লঘু প্রিন্ট করা চমৎকার ব্যাগ, বিবিধ পুস্তিকা ও স্মারক ক্রেস্ট প্রদান করা হয়। দুইদিনে চার শতাধিক কবির উপস্থিতি অংশগ্রহন সমগ্র আয়োজনটি কে সফল ও সার্থক করে তুলেছে। যে বিষয়টি দৃষ্টিকটু ঠেকেছে তা হলো- ফেনীর কবিদের দুটি সংগঠনের আন্ত কোন্দল। যা আয়োজকদের মনে কালো তিলক চিহ্নের রেখাপাত করেছে। এটি কোন ভাবেই কাম্য ছিলোনা। সংগঠন থাকবে, যা চিন্তা ও চর্চাকে বিকশিত করবে। কিন্তু পরস্পরে রেশারেশি কখনোই শিল্পের সহায়ক হতে পারেনা। আমাদের সবার চিন্তার জানালা উদার ও উন্মুক্ত করা উচিত। পরিশেষে বলবো কবি ও কবিতার জয় হোক।
লেখক : চিত্রশিল্পী, নাট্যকার, প্রাবন্ধিক ও সাংবাদিক।