দৈনিক ফেনীর সময়

ইহুদিদের সাথে আল্লাহর প্রতিশ্রুতি

ইহুদিদের সাথে আল্লাহর প্রতিশ্রুতি

ইহুদিরা হলো হযরত ইয়াকুব আ. এর বংশধর।তাদেরকে বলা হয় বাণী ইসরাইল ।বাণী অর্থ সন্তান আর ইসরাইল অর্থ আবদুল্লাহ,যা হযরত ইয়াকুব আ. এর আরেকটি নাম।সুতরাং বাণী ইসরাইল অর্থ ইয়াকুব আ. এর সন্তানগণ।তারা ছিলেন বার জন।এ বার জন থেকে বারটি বংশ হয়েছে।বর্তমান ইহুদিরা তাদেরই বংশধর। বাণী ইসরাইলের সূচনা হযরত ইসহাক আ. এর পূত্র হযরত ইয়াকুব আ. থেকে, আর শেষ হযরত ঈসা আ. পর্যন্ত। আমাদের প্রিয় নবী সা. হযরত ইসমাঈল আ. এর বংশের । ইহুদিদের সাথে আল্লাহর প্রতিশ্রুতি: আল্লাহ তায়ালা কুরআন মাজীদের সূরা বাকারার ৮৩ ও ৮৪নং আয়াতে বাণী ইসরাইলের থেকে ১০টি অঙ্গীকার নেয়ার কথা বর্ণনা করেছেন।তন্মধ্যে ৮টি হলো করণীয়,আর দুটি বর্জনীয়।করণীয় ৮টি হলো-

একমাত্র আল্লাহর ইবাদত করবে : অর্থাৎ সর্ব বিষয়ে তাঁর আনুগত্য করবে,তার আদেশ-নিষেধ মান্য করবে। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন-আমি প্রত্যেক জাতির কাছে এ নির্দেশিকা দিয়ে রাসূল প্রেরণ করেছি যে,তোমরা আল্লাহর ইবাদত করবে এবং তাগুত থেকে বেচে থাকবে (সূরা আন নাহল-৩৬)। আরো ইরশাদ করেন-তোমার প্রভূ এ নির্দেষ দিয়েছেন যে,তাকে ছাড়া কারো ইবাদত করবে না (সূরা ইসরা-২৩)।অন্যত্র ইরশাদ করেন আর তোমরা আল্লাহর ইবাদত কর এবং তাঁর সাথে কাউকে শিরক করো না (সূরা নিসা-৩৬)।

পিতা-মাতার সাথে সুন্দর আচরণ করবে : আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন আমি মানবজাতিকে তার পিতা-মাতার সাথে সদাচরণের নির্দেশ দিচ্ছি।তার মাতা তাকে কষ্ট করে গর্ভে ধারন করেছেন এবং দু’বছর দুধ পান করিয়েছেন।সুতরাং শুকরিয়া আদায় কর ও পিতা-মাতার আনুগত্য কর,আমার কাছেই তোমাকে ফিরে আসতে হবে ( সূরা লুকমান-১৪)।আরো ইরশাদ করেন,আমি মানুষকে তার পিতা-মাতার সাথে সদাচরণের নির্দেশ দিয়েছি ( সূরা আহকাফ-১৫)।মহানবী সা. বলেছেন- হযরত আবদুল্লাহ ইবন মাসউদ রা. থেকে বর্ণিত,তিনি বলেন,আমি মহানবী সা. কে জিজ্ঞেস করলাম,আল্লাহর নিকট কোন কাজ অধিক পছন্দনীয়? তিনি বলেন,সময়মত সালাত আদায় করা।ইবন মাসউদ রা. জিজ্ঞেস করেন তারপর কোনটি? তিনি বলেন,পিতা-মাতার সাথে উত্তম ব্যবহার করা। আবদুল্লাহ ইবন মাসউদ রা. আবার প্রশ্ন করেন তারপর কোনটি? তিনি বলেন আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করা (সহীহ বুখারী হাদীস নং ৫৯৭০)।জনৈক সাহাবী মহানবী সা. কে প্রশ্ন করল,হে আল্লাহর রাসূল,আমার নিকট কে উত্তম ব্যবহার পাওয়ার হকদার? রাসূল সা. বলেন তোমার মা।সাহাবী আবার প্রশ্ন করেন তারপর কে? রাসূল সা. বলেন তোমার মা।সাহাবী আবার প্রশ্ন করেন তারপর কে? রাসূল সা.বলেন- তোমার মা। সাহাবী আবার প্রশ্ন করেন তারপর কে? রাসূল সা.বলেন তোমার পিতা।( সহীহ বুখারী হাদীস নং ৫৯৭১)। জনৈক সাহাবী জিহাদে যাওয়ার অনুমতি চাইলে তিনি বলেন,তোমার পিতামাতা আছে? সাহাবী বলেন হ্যাঁ । রাসূল সা. বললেন তাদের সেবার মাধ্যমে জিহাদ কর (সহীহ বুখারী হাদীস নং ৫৯৭২)।

আত্মীয়-স্বজনের সাথে ভাল ব্যবহার করবে : মহানবী সা. বলেন, আল্লাহ তায়ালা যখন সৃষ্টিকুল সৃষ্টি করে তা সমাপ্ত করেন,তখন “রেহেম” দন্ডায়মান হয়ে বলে,এটা আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করা থেকে আশ্রয় প্রার্থনাকারীর স্থান।তিনি বলেন,হ্যাঁ।তুমি কি এতে সন্তুষ্ট নও যে, তোমার সাথে সম্পর্ক অক্ষুন্ন রাখবে, আমিও তার সাথে সম্পর্ক অক্ষুন্ন রাখবো,আর যে তোমার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করবে আমিও তার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করবো ( সহীহ বুখারী হাদীস নং ৬২৮৭)। রাসূলুল্লাহ সা. আরো বলেন,রেহেম বা আত্মীয়তা আল্লাহর আরশের সাথে ঝুলে আছে।সে বলে,যে ব্যক্তি আমার সাথে সম্পর্ক বজায় রাখবে আল্লাহ তার সাথে সম্পর্ক ঠিক রাখবেন।আর যে আমার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করবে আল্লাহ তার সাথে সম্পর্কচ্ছেদ করবেন ( সহীহ মুসলিম হাদীস নং ৬২৮৮)। তিনি আরো ইরশাদ করেন আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী জান্নাতে প্রবেশ করবে না ( সহীহ মুসলিম হাদীস নং ৬২৮৯)।

ইয়াতীমের সাথে সুন্দর ব্যবহার করবে : আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, হে হাবীব: আপনি ইয়াতিমের প্রতি কঠোর হবেন না ( সূরা আদ দুহা-৯)।এখানে রাসূলুল্লাহ সা. কে বলে সকল উম্মতকে উদ্দেশ্য করেছেন।

মিসকীনদের সাথে ভাল ব্যবহার করবে : আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন,আত্মীয়-স্বজনকে তার হক দিয়ে দাও এবং মিসকীন ও মুসাফিরকেও তাদের হক প্রদান কর ( সূরা ইসরা-২৬)।

মানুষের সাথে ভাল কথা বলবে : মহানবী সা. বলেন- উত্তম পথ গাম্ভীর্যপূর্ণ উত্তম আচরন,আর পরিমিতিবোধ নবুওয়্যাতের পচিঁশ ভাগের এক ভাগ ( সহীহ আবু দাউদ-৪৭৭৭)। মহানবী সা. আরো বলেন- কিয়ামতের দিন আল্লাহর নিকট ঐ ব্যক্তিই সবচেয়ে মন্দ বলে বিবেচিত হবে, যাকে মানুষ তার অশালীন কথার ভয়ে ত্যাগ করেছে (আবু দাউদ হাদীস নং ৪৭৯২)। রাসূলুল্লাহ সা. বলেন, হে আয়েশা! সবচেয়ে খারাপ মানুষ তারাই যাদেরকে মানুষ তাদের জিহ্বার অনিষ্ট হতে আত্মরক্ষার জন্য সম্মান করে (আবু দাউদ হাদীস নং ৪৭৯১)।

নামায কায়েম করবে : নামায ইসলামের পঞ্চস্তম্ভের দ্বিতীয় স্তম্ভ।সকল নবীর উপর নামায ফরয ছিল।ইহূদীদের নামায ফরয ছিল,তবে আমাদের ন্যায় পাঁচ ওয়াক্ত ছিল না। খ্রীষ্টানদের উপরও নামায ফরয ছিল।হযরত ঈসা আ. বলেছেন,আমার প্রভু আমাকে যতদিন জীবিত থাকি নামায ও যাকাতের নির্দেষ দিয়েছেন ( সূরা মরিয়ম আয়াত-৩২)।

যাকাত প্রদান করবে : যাকাত ইসলামের চতুর্থ স্তম্ভ।কুরআন মাজীদে নামাযের সাথে যাকাতেরও নির্দেষ দেয়া হয়েছে। সকল নবী-রাসূলের উপর যাকাত ফরয ছিল।যাকাত হলো আর্থিক ইবাদত।যাকাত গরীব-মিসকীনের হক।যাকাত আদায়ের ফলে অবশিষ্ট মাল পবিত্র হয় এবং বৃদ্ধি পায় তথা বরকত হয়।

বর্জনীয় প্রতিশ্রুতিগুলো হলো- ১. পরস্পর রক্তপাত করবে না: কিন্তু তারা মারামারি ও রক্তপাতে সীমা ছাড়িয়ে গিয়েছিল।আউস ও খাযরাজ গোত্রদ্বয় পরস্পর ঝগড়া-বিবাদে লিপ্ত ছিলেন।বনু নযীর ও বনু কুরাইযার মধ্যে চরম শত্রুতা ছিল। বনু কুরাইযা ছিল আউস গোত্রের মিত্র আর বনু নযীর ছিল খাযরাজ গোত্রের মিত্র। যখনই ইহূদীদের দুই গোত্র ঝগড়া করতো,তখন তাদের মিত্ররা তাতে যোগ দিত। ২. বিজিতদেরকে দেশ থেকে বহিষ্কার করবে না।ইহূদীরা ঝগড়া-বিবাদে সীমালংঘন করে এবং বিজিতদেরকে দেশ ছাড়তে বাধ্য করে। ইহূদীরা তাদের সকল প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে।ফলে আল্লাহ তা’য়ালা তাদের প্রতি অসন্তুষ্ট হন এবং তাদের জন্য কঠিন শাস্তি ঘোষনা দেন।তারা যদি এসব নির্দেষ অমান্য করে তবে ইহূদীদের ন্যায় শেষ নবীর উম্মতকেও উভয় জাহানে কঠিন পরিনতি ভোগ করতে হবে।

লেখক : বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: কন্টেন্ট সুরক্ষিত!!