দৈনিক ফেনীর সময়

ইহুদীদের বৈশিষ্ট্য

ইহুদীদের বৈশিষ্ট্য

আল্লাহ তা’য়ালার আশি হাজার সৃষ্টির মধ্যে সেরা সৃষ্টি হলো- মানুষ, ফেরেশতা ও জ্বীন। এ সবের মধ্যে মানুষ হলো আশরাফুল মাখলুকাত সৃষ্টিরাজির সর্বাধিক সম্মানিত সৃষ্টি। মহানবী (স) বলেছেন। বিচার দিবসে আল্লাহ তা’য়ালার নিকট মানবজাতি অপেক্ষা অন্য কোন সৃষ্টিই অধিক সম্মানের হবে না। প্রশ্ন করা হলো, হে আল্লাহর রাসুল!

আল্লাহ্ তা’য়ালার নিকটবর্তী ফেরেশতাগণের ক্ষেত্রেও কি এটা প্রযোজ্য হবে? অর্থাৎ নিকটবর্তী ফেরেশতাদের চেয়েও কি মানুষের মর্যাদা বেশি হবে? মহানবী (স) প্রত্যুত্তরে বলেন, নিকটবর্তী ফেরেশতারাও (এক শ্রেনীর) মানুষের চেয়ে অধিক মর্যাদাবান হবে না। (বায়হাকী – ১ম খন্ড, পৃ -১৭৪)

সকল মানুষের মধ্যে মু’মিনের মর্যাদা অতুলনীয়। আল্লাহ তা’য়ালা স্বয়ং ইরশাদ করেন – যখন আমার নিদর্শনাবলীতে বিশ^াসীগণ আপনার কাছে আসবে তখন বলুন তোমাদের প্রতি সালাম (সূরা আল আনয়াম – ৫৪)। আরো ইরশাদ করেন – মু’মিনদের সাহায্য করা আমার দায়িত্ব (সূরা আর রূম – ৪৭)।

এই ম’ুমিনদের প্রধান শত্রু বণীইসরাইল তথা ইহুদী সম্প্রদায়। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তা’য়ালা ইরশাদ করেন,“(হে রাসূল!) আপনি সব মানুষের চেয়ে মু’মিনদের অধিক শত্রু হিসেবে দেখতে পাবেন ইহুদী ও মুশরিকদেরকে।”
(সূরা আল মায়িদা – ৮২)।

ইহুদীদের পরিচয় : হযরত ইয়াকুব (আ) এর বারজন পুত্র সন্তান ছিল। তাঁরা হলেন- ১. রুবান ২. শামউন ৩. লাদী ৪. ইয়াহুদাহ ৫. আশকার ৬. যাবুলুন ৭. ইউসুফ ৮. বিন ইয়ামীন ৯. জেদ ১০. আশর ১১. দান ১২. নাফতালী।

হযরত ইয়াকুব (আ) এর পুত্র ইয়াহুদার নামানুসারে তাদেরকে ইয়াহুদী বলা হয়। হযরত ইয়াকুব (আ) এর আরেক নাম ইসরাঈল, যার অর্থ আবদুল্লাহ। এ হিসেবে তাঁর বংশধরকে বনী ইসরাঈল বলা হয়। ইহুদী নামটি তারা নিজেরাই রেখেছে। কারো কারো মতে তারা তাওরাত পাঠের সময় সামনে-পেছনে ঝুঁকে যেত বলে এদেরকে ইহুদী বলা হয়। কেউ কেউ বলেন -(তাওবা করার পর) তারা বলেছিল আমরা আপনার প্রতি প্রত্যাবর্তন করলাম (সূরা আরাফ – ১৫৬)। এ আয়াতের ভিত্তিতে তাদের নাম ইহুদী হয়েছে (কুরতুবী)।

ইহুদীরা পার্থিব ও ধর্মীয় জ্ঞানে সুদক্ষ। জেনে-বুঝে সুকৌশলে তারা ইসলামের বিরোধীতা করে। আল্লাহ তাঁয়ালা সুরা ফাতিহায় “আল মাগদুবি আলাইহিম” দ্বারা তাদেরকে উদ্দেশ্য করেছেন। ইহুদীদের প্রতি আল্লাহ তাঁয়ালার ক্রোধ ও রাগ এ জন্যে যে, তারা শেষ নবী ও ইসলামের সত্যতা উপলব্ধি করার পর তা অস্বীকার করছে। আল্লাহ তা’য়ালা ইরশাদ করেন, “তাদের উপর আপতিত হয়েছে লাঞ্চনা ও দারিদ্রতা এবং তারা আল্লাহর ক্রোধে পতিত হয়েছে।” (সূরা নিসা – ৬১)।

তাদের প্রধান প্রধান বৈশিষ্ট্য-
অন্যের ঘাড়ে দোষ চাপানো : তারা তাদের ভাই হযরত ইউসুফ(আ) কে কুপে ফেলে দিয়ে পিতার কাছে এসে বলেছে, তাকে বাঘে খেয়ে ফেলেছে। সূরা বাকারায় বর্ণিত গাভীর ঘটনায় ভাতিজা স্বীয় চাচাকে হত্যা করে
অন্যের উপর দোষ চাপানোর চেষ্টা করেছে।

দখলদার : ইহুদীরা ফিলিস্তিনের ভূমি জোরপূর্বক জবর দখল করে ইহুদী রাষ্ট্র ইসরাইল প্রতিষ্ঠা করেছে। ১৯৪৭ সালে জাতিসঙ্গের সাধারণ পরিষদে ফিলিস্তিনি ভূখন্ড দ্বিখন্ডিত করা সংক্রান্ত ১৮১ নম্বর প্রস্তাব অনুযায়ী মাত্র ৪৫ শতাংশ ভূখন্ড ফিলিস্তিনিদের প্রদার করে, অবশিষ্ট ৫৫ শতাংশ ইহুদীদের ছেড়ে দেয় এবং বর্তমানে আমেরিকার সহযোগীতায় জেরুজালেমকে তাদেরকে রাজধানী ঘোষনা করেছে। যার বিরুদ্ধে বাংলাদেশসহ বিশে^র ৫৬টি মুসলিম রাষ্ট্র ও.আই.সি. সম্মেলনের মাধ্যমে নিন্দা জ্ঞাপন করেছে ও প্রতিবাদ জানিয়েছে।

বর্বর আচরণকারী : ইসরাঈল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর থেকে প্রতিটি রাষ্ট্র বিশেষ করে ফিলিস্তিনিদের সাথে তাদের আচরণ অত্যন্ত খারাপ। দমন-নিপীড়ন, হত্যা, জবরদখল ইত্যাদি বর্বর আচরণের মাধ্যমে তারা মধ্যপ্রাচ্যে অশান্তি সৃষ্টি করে রেখেছে।

বায়তুল মাকদাসে নামায পড়তে বাধা : মুসলমানদের প্রথম কিবলা বায়তুল মাদাস দীর্ঘদিন ধরে দখল করে রেখেছে এবং সেখানে তাদেরকে ঠিক ভাবে নামায আদায় করতে দিচ্ছেনা।

চরিত্রহীন : ইহুদীরা চরিত্রহীন জাতি। আল্লাহর ক্রোধে পতিত ইহুদীরা যিনা-ব্যভিচার, পতিতাবৃত্তি ইত্যাদি অনৈতিক কার্যকলাপের সাথে জড়িত।

গোঁড়া জাতি : তারা শিক্ষিত গোঁড়া জাতি। গোঁড়ামীর কারণে পৃথিবীর অনেক রাষ্ট্রে সাথে তাদের সুসম্পর্ক নেই। আল্লাহর দুশমন ও মানবতার শত্রু এ জাতি সমস্ত বিশে^র অশান্তির প্রধান কারণ।

নবীদের হত্যা : তারা অন্যায়ভাবে নবী-রাসূলদেরকে হত্যা করেছে। যেমন- আল্লাহ তা’য়ালা ইরশাদ করেন, “আর তারা বিনা কারণে নবীগণকে হত্যা করতো।” তারা একদিনে সাতচল্লিশ জন নবী এবং একশত আলেমকে হত্যা করেছে। হযরত যাকারিয়া (আ) ও তদীয়পুত্র ইয়াহিয়া (আ) কে হত্যা করেছে। (মা‘য়ারিফুল কুরআন)।

বাইবেলে বর্ণিত আছে, হযরত যাকারিযা (আ) কে প্রস্তরাঘাতে হত্যা করা হয়, ( ২ বংশাবলী, ২৪ অধ্যায়, ২১ শ্লোক); মিকাইয়াহ নামক নবীকে বিপদের খাবার ও বিপদের পানি দ্বারা হত্যা করে (১রাজাবলী, ২২ অধ্যায়, ২৬- ২৭ শ্লোক)।

আসমানী কিতাব পরিবর্তন : ইহুদীরা আল্লাহর কিতাব তাওরাতে বিকৃতি ঘটিয়েছে। তারা তাতে শাব্দিক পরিবর্তন করে অর্থকে বিকৃত করেছে। যেমন- ব্যভিচারের শাস্তি হিসেবে প্রস্তরাঘাতের স্থলে বেত্রাঘাত লিখে দেয়েছে। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন – ইহুদীদের মধ্যে কিছুলোক (আল্লাহর) বাণীকে কিৃত করে এবং বলে, আমরা শুনলাম এবং অমান্য করলাম (সূরা নিসা – ৪৬)

ইহুদীদের অপকর্ম অগণিত। যেমন- আল্লাহর কিতাবকে অস্বীকার করা, উত্তম খাদ্য মান্না ও সালওয়ার পরিবর্তে খারাপ জিনিস চাওয়া, আমালেকা বংশের সাথে যুদ্ধে অস্বীকৃতি জানিয়ে হযরত মুসা (আ) ও আল্লাহ তা’য়ালাকে যুদ্ধ করতে বলা। আল্লাহ তা’য়ালার অগণিত নিয়ামত প্রাপ্তির পরও অকৃতজ্ঞ হওয়া, শেষ নবী (স) কে বিশ^াস না করা ইত্যাদি।

লেখক : বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: কন্টেন্ট সুরক্ষিত!!