নিজস্ব প্রতিনিধি :
আলোচিত ফুলগাজী উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সভাপতি একরামুল হক একরাম হত্যার মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত ১৭ আসামীর ১০ বছরেও হদিস পাচ্ছেনা। আর রায় ঘোষণার ৬ বছর পার হলেও ৩৯ আসামীর দন্ড এখনো কার্যকর হয়নি।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০১৪ সালের ২০ মে ফেনী শহরের একাডেমী এলাকায় প্রকাশ্যে একরামের গাড়ির গতিরোধ করে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যার পর তাকে বহনকারী গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। ২০১৮ সালের ১৩ মার্চ বর্বরোচিত এ হত্যা মামলায় ফেনী জেলা ও দায়রা জজ আমিনুল হক ৫৬ আসামির মধ্যে ৩৯ জনের ফাঁসির আদেশ ও ১৬ জনকে খালাসের রায় দেন। এদের মধ্যে সোহেল নামের এক আসামি রায় ঘোষণার আগেই র্যাবের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ মারা যান।
সূত্র আরো জানায়, এ মামলায় মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত ১৭ আসামী এখনো পলাতক রয়েছে। এদের মধ্যে ৮ জন জামিনে বেরিয়ে পালিয়ে যায়। অপর ৯ জন ঘটনার পর থেকে ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছেন। বাকি ২২ আসামী জেলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির আদেল, ফেনী পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সাবেক সভাপতি আবদুল্লাহিল মাহমুদ শিবলু, সাজ্জাদুল ইসলাম পাটোয়ারী সিফাত, আবু বক্কর সিদ্দিক, মো. আজমির হোসেন রায়হান, মো. শাহজালাল উদ্দিন শিপন, জাহিদুল ইসলাম জাহিদ ওরফে আজাদ, কাজী শানান মাহমুদ, মীর হোসেন আরিফ ওরফে নাতি আরিফ, আরিফ ওরফে পাঙ্কু আরিফ, রাশেদুল ইসলাম রাজু, মো. সোহান চৌধুরী, জসিম উদ্দিন নয়ন, নিজাম উদ্দিন আবু, আবদুল কাইউম, নুর উদ্দিন মিয়া, তোতা মানিক, মো. সজিব, মামুন, রুবেল, হুমায়ুন ও টিপু কারাগারে রয়েছেন।
জামিনে গিয়ে পলাতক আসামীর মধ্যে ফুলগাজী উপজেলা আওয়ামীলীগের তৎকালীন যুগ্ম-সম্পাদক জাহিদ চৌধুরী, জেলা মহিলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক লায়লা জেসমিন বড় মনির ছেলে আবিদুল ইসলাম, এমরান হোসেন রাসেল, জাহিদুল হাসেম সৈকত, চৌধুরী মোহাম্মদ নাফিজ উদ্দিন অনিক, জিয়াউর রহমান বাপ্পি, আরমান হোসেন কাউসার ও জসিম উদ্দিন। শুরু থেকে পলাতক রয়েছেন ইসমাইল হোসেন ছুট্টু, কফিল উদ্দিন মাহমুদ আবির, রাহাত মোহাম্মদ এরফান আজাদ, শফিকুর রহমান, একরাম হোসেন, মোসলেহ উদ্দিন আসিফ, মহিউদ্দিন আনিছ, টিটু ও বাবলু।
মামলা থেকে খালাসপাওয়া ১৬ জন হলেন- বিএনপি নেতা মাহতাব উদ্দিন আহম্মেদ চৌধুরী মিনার, পৌর যুবলীগের সাবেক যুগ্ম-আহবায়ক জিয়াউল আলম মিস্টার, আওয়ামী লীগ নেতা বেলাল হোসেন পাটোয়ারী ওরফে টুপি বেলাল, মো. আলমগীর ওরফে আলাউদ্দিন, আবদুর রহমান রউপ, সাইদুল করিম পবন ওরফে পাপন, জাহিদ হোসেন ভূইয়া, ইকবাল হোসেন, মো: শাখাওয়াত হোসেন, শরিফুল ইসলাম পিয়াস, কালা মিয়া, নুরুল আবসার রিপন, মো: ইউনুস ভূইয়া শামীম ওরফে টপ শামীম, মো. মাসুদ, কাদের ও ফারুক।
ফেনী মডেল থানার ওসি মো: নিজাম উদ্দিন জানান, পলাতক আসামীদের গ্রেফতারের জন্য ফেনী মডেল থানা পুলিশের পক্ষ থেকে চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
জানতে চাইলে পুলিশ সুপার জাকির হাসান বলেন, তারা দীর্ঘদিন দেশে-বিদেশে বিভিন্ন স্থানে পলাতক রয়েছে। অবস্থান নিশ্চিত না হওয়ায় গ্রেফতারে বিলম্ব হচ্ছে। তাদের গ্রেফতারে পুলিশ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
ফেনী জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর হাফেজ আহম্মদ জানান, রায় ঘোষণার পর কিছু আসামী আপিল করেছেন। ডেথ রেফারেন্সের শুনানী না হওয়ায় রায় কার্যকরে বিলম্ব হচ্ছে।
আদালত সূত্রের তথ্যমতে, একরামকে পুড়িয়ে মারার ঘটনায় তার ভাই রেজাউল হক বাদি হয়ে ফেনী মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন। গোয়েন্দা পুলিশের তৎকালীন ওসি আবুল কালাম আজাদ দীর্ঘ তদন্ত শেষে ৫৬ জনের বিরুদ্ধে ২০১৪ সালের ৩০ আগস্ট আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন। ৫৯ জন সাক্ষীর মধ্যে তদন্ত কর্মকর্তাসহ ৫০ জন আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন। ৫৬ জন আসামির মধ্যে ১৬ জন আদালতে ১৬৪ ধারায় হত্যাকান্ডের ঘটনায় জড়িত থাকার দায় স্বীকার করে জবানবন্দি প্রদান করেছেন।