অনলাইন ডেস্ক:
করোনা সংক্রমণের কারণে গত দুই বছর হজ করার ক্ষেত্রে নানা সীমাবদ্ধতা ছিল। গত বছর শুধু আরবের লোকজন হজ করতে পেরেছিলেন।
চলতি বছর ১০ লাখ হজযাত্রীকে হজ করতে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সৌদি আরব। করোনা মহামারি পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আগের বছর স্বল্পসংখ্যক হজযাত্রী হজের অনুমতি পেয়েছিলেন।
সৌদির হজ ও ওমরাহ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, হজযাত্রীদের বয়স ৬৫ বছরের নিচে হতে হবে এবং পূর্ণ ডোজ টিকা নেওয়া থাকা লাগবে। আর সৌদির উদ্দেশে রওনা হওয়ার ৭২ ঘণ্টার মধ্যে পিসিআর টেস্টের নেগেটিভ সনদ লাগবে। স্বাস্থ্য পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে বর্ধিত হজযাত্রীর এ সংখ্যা কোটা অনুযায়ী দেশগুলোর মধ্যে ভাগ করে দেওয়া হবে।
চলতি বছর বাংলাদেশ থেকে সরকারি ব্যবস্থাপনায় হজে যাওয়ার সর্বনিম্ন প্যাকেজ ৪ লাখ ৬২ হাজার ১৫০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। আর বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হজে যাওয়ার সর্বনিম্ন প্যাকেজ ৪ লাখ ৫৬ হাজার ৫৩০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
উল্লেখিত প্যাকেজটি ছাড়া আরেকটি প্যাকেজে সরকারি ব্যবস্থাপনায় হজে যেতে ৫ লাখ ২৭ হাজার ৩৪০ টাকা খরচ হবে।
বাংলাদেশ ছাড়াও মুসলিম প্রধান দেশগুলোসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে সামর্থবান মুসলমানরা হজ পালন করতে সৌদি আরব যান। এশিয়ার বিভিন্ন দেশে হজযাত্রার খরচ কত পড়ে, এ নিয়ে একটি বিশেষ প্রতিবেদন করেছে ডয়চে ভেলে। এতে এশিয়ার কয়েকটি দেশের হজে যাওয়ার খরচ তুলে ধরা হয়েছে।
ভারত
আনন্দবাজার পত্রিকা ২০২০ সালের নভেম্বরে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জানিয়েছিল, ২০১৯ সালে পশ্চিমবঙ্গ থেকে হজে যেতে জনপ্রতি খরচ হয়েছিল প্রায় তিন লাখ বাংলাদেশি টাকা৷ তবে ওই সময় পশ্চিমবঙ্গ হজ কমিটি ২০২১ সালের হজের খরচ অনেক বাড়িয়ে চার লাখ ২৩ হাজার ৫৭১ টাকা নির্ধারণ করেছিল৷ আর এবছর হজ প্যাকেজ ঘোষণা করা হলেও এখন পর্যন্ত চূড়ান্ত খরচের হিসাব জানানো হয়নি৷ ২০১৮ সালে ভারতে হজ ভর্তুকি বন্ধ করে দেওয়া হয়৷
পাকিস্তান
দেশটিতে এখনও হজের চূড়ান্ত খরচ জানানো হয়নি৷ তবে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মুহাম্মদ উমর বাট গত শনিবার জানান, এবার জনপ্রতি খরচ তিন লাখ ১১ হাজার ৭৪২ বাংলাদেশি টাকা থেকে প্রায় সাড়ে চার লাখ বাংলাদেশি টাকা হতে পারে৷
ইন্দোনেশিয়া
এ বছর ইন্দোনেশিয়া থেকে হজে যেতে একজন মুসল্লিকে দুই লাখ ৩৮ হাজার ৪৫৩ বাংলাদেশি টাকা (৩,৯৮,৮৬,০০৯ ইন্দোনেশীয় রুপি) দিতে হবে বলে গত ১৪ এপ্রিল জানান দেশটির ধর্মমন্ত্রী ইয়াকুত ছলিল৷ যদিও মুসল্লি প্রতি খরচ হবে চার লাখ ৮৮ হাজার ২৬০ টাকা৷ বাকি টাকাটা ‘হজ ফাণ্ড ম্যানেজমেন্ট এজেন্সি’ বা বিপিকেএইচ এর মাধ্যমে ভর্তুকি হিসেবে দেবে সরকার৷
মালয়েশিয়া
গত ২২ এপ্রিল হজে যাওয়ার খরচ ঘোষণা করা হয়৷ বি৪০ গ্রুপের (যে পরিবারের মাসিক আয় সাড়ে ৯৬ হাজার টাকার কম) মুসল্লিদের জন্য খরচ দুই লাখ ১৮ হাজার ৭৫৪ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে৷ আর যাদের আয় বেশি তাদের খরচ নির্ধারণ করা হয়েছে দুই লাখ ৫৮ হাজার ৬০০ টাকা৷
দেশটির প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ধর্ম বিভাগের মন্ত্রী ইদ্রিস আহমাদ সম্প্রতি জানান, প্রতিবছর হজ ভর্তুকি হিসেবে সরকার প্রায় ছয়শ থেকে আটশ কোটি টাকা খরচ করে থাকে৷
আসিয়ানে সর্বনিম্ন খরচ ইন্দোনেশিয়ায়?
২০১৯ সালে ইন্দোনেশিয়ার তৎকালীন ধর্মমন্ত্রী লুকমান হাকিম দাবি করেছিলেন, আসিয়ান অন্তর্ভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে ইন্দোনেশিয়া থেকে হজে যেতে একজন মুসল্লিকে সবচেয়ে কম টাকা খরচ করতে হয়৷ ২০১৫ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত প্রতিবছর ব্রুনাই, সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়া থেকে হজে যাওয়ার খরচ উল্লেখ করে তিনি এই দাবি করেছিলেন৷
এ বছর ইন্দোনেশিয়া থেকে সবচেয়ে বেশি মানুষ হজ করার সুযোগ পাবেন। ইন্দোনেশিয়া থেকে ১ লাখ ৫১ জনকে এবার হজ করার সুযোগ দেওয়া হবে। দ্বিতীয় স্থানে পাকিস্তান থেকে হজ করার সুযোগ পাবেন ৮১ হাজার ১৩২ জন হজযাত্রী। তৃতীয় অবস্থানে থাকা ভারতের ৭৯ হাজার ২৩৭ জনকে এবার হজ করার সুযোগ পাবেন। এদিকে চতুর্থ অবস্থানে থাকা বাংলাদেশ থেকে হজের সুযোগ পাবেন ৫৭ হাজার ৫৮৫ জন হজযাত্রী।
আরব দেশগুলোর মধ্যে মিসর থেকে ৩৫ হাজার ৩৭৫ জন হজ করার সুযোগ পাবেন এবার। আফ্রিকার দেশগুলোর মধ্যে নাইজেরিয়া থেকে সবচেয়ে বেশি ৪৩ হাজার ৮ জন এবার হজ করতে পারবেন। এ ছাড়া ইরানের ৩৮ হাজার ৪৮১ ও তুরস্ক থেকে ৩৭ হাজার ৭৭০ জন হজের সুযোগ পাবেন।
যুক্তরাষ্ট্র থেকে ৯ হাজার ৫০৪, রাশিয়া থেকে ১১ হাজার ৩১৮, চীন থেকে ৯ হাজার ১৯০ ও ইউক্রেন থেকে এবার ৯১ জনকে হজের সুযোগ দেবে সৌদি আরব।
এবার আফ্রিকার দেশ অ্যাঙ্গোলা থেকে সবচেয়ে কম মানুষ হজ করার সুযোগ পাবেন। দেশটি থেকে মাত্র ২৩ জনকে হজের অনুমতি দিয়েছে সৌদি আরবের হজ ও ওমরাহবিষয়ক মন্ত্রণালয়।