দৈনিক ফেনীর সময়

কাফির মুশরিকদের আকাক্সক্ষা

কাফির মুশরিকদের আকাক্সক্ষা

মানুষের এ জীবন শেষ নয় বরং আরেকটি জীবন আছে। তাহলো পারলৌকিক জীবন। সে জীবনে মুমিনগণ সুখ-শান্তিতে জান্নাতে বসবাস করবে। আর কাফির-মুশরিকগণ জাহান্নামের কঠিন শাস্তি ভোগ করবে। বিচার দিবসে যখন বুঝতে পাবে যে, তারা নিশ্চিত জাহান্নামী তখন যেসব বিষয়ে আকাংখা করবে তাহলো- ১. যদি মাটি হয়ে যেতাম ঃ হযরত আবদুল্লাহ ইবন ওমর (রা) থেকে বর্ণিত, বিচার দিবসে সমগ্র ভূপৃষ্ঠ এক সমতল ভূমি হয়ে যাবে। এতে মানব-দানব, গৃহপালিত জন্তু, বন্য জন্তু, পশু-পাখি সবাইকে একত্রিত করা হবে। জীব জš‘দের মধ্যে কেউ দুনিয়াতে অন্য জীবজন্তুর উপর জুলুম করে থাকলে তার কাছ থেকে প্রতিশোধ নেয়া হবে। এমনকি কোন শিং বিশিষ্ট ছাগল কোন শিংহীন ছাগলকে আঘাত করে থাকলে সেদিন তারও প্রতিশোধ নেয়ার ব্যব¯’া করা হবে। এ কর্ম সমাপ্ত হলে সকল জীব জন্তুকে আদেশ করা হবে- “মাটি হয়ে যাও”। তখন সকল জীব জš‘ মাটি হয়ে যাবে। কাফিররা এ দৃশ্য দেখবে, আর তাদের নিশ্চিত দোযখী হওয়ার বিষয়ও বুঝবে। তখন তারা আকাংখা করবে- হায়! আমরাও যদি (জীব-জন্তুদের ন্যায়) মাটি হয়ে যেতাম, তাহলে আমরা হিসাব নিকাশ ও জাহান্নামের শাস্তি থেকে নিস্কৃতি পেতাম (সূরা নাবা-৪০ তাফসীরে মারিফুল কুরআন)।

নেক কাজ করার আকাংখা : পার্থিব জগত হলো নেক অর্জনের সময়। কিন্তু এ জগতে নেক কাজ না করলে পরকালে কঠিন আযাব ভোগ করতে হবে। কাফির-মুশরিকগণ বিচার দিবসে যখন বুঝতে পারবে যে, পার্থিব জগতে তার কি করা উচিত ছিল, আর সে কি করেছে। কিন্তু তখন এই বুঝে আসা কিছুই কাজে আসবে না। কেননা, পরকাল কর্মজগত নয় প্রতিদান জগত। অতপর কাফিররা তখন বলবে- হায়! এ জীবনের জন্যে যদি কিছু আমি অগ্রে প্রেরণ করতাম (সূরা আল ফজর- ২৪)। অর্থাৎ দুনিয়ার জীবনে যদি ঈমান আনতাম এবং নেক কাজ করতাম, তাহলে আজ শান্তিতে থাকতে পারতাম। কিন্তু কুফর ও শিরকের শাস্তি সামনে আসার পর এ আকাংখায় কোন লাভ হবে না। কারণ, এটি আযাব ও পাকড়াওয়ের সময়।

যদি আমলনামা না দেয়া হত : মানুষ ইহজগতে যত ধরনের কাজ-কর্ম করে সবই লিখা হয়। দু’কাধের ফেরেশতাদ্বয় তা লিপিবদ্ধ করেন। ডান কাঁধের ফেরেশতা নেক এবং বাম কাঁধের ফেরেশতা বদ লিখেন। বিচার দিবসে ব্যক্তির সামনে তা পেশ করা হবে। মু’মিনদের আমলনামা দেয়া হবে ডান হাতে, আর কাফির-মুশরিকদের আমলনামা দেয়া হবে বাম হাতে। তবে সূরা ইনশিকাকে বলা হয়েছে পেছন দিক থেকে দেয়া হবে। সম্ভবত এটা এভাবে হবে, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির নিজের কার্যক্রম ভালো ভাবেই জানা আছে।

ফলে সে নিশ্চিতভাবে মনে করবে যে, তার আমলনামা বাম হাতে দেয়া হবে। তাই সে লজ্জায় নিজের হাত পেছনের দিকে রাখবে। কিন্তু সে হাত সামনে দিকে রাখুক বা পেছনের দিকে, অবশ্যই তার আমলনামা তার হাতে ধরিয়ে দেয়া হবে। বাম হাতে আমলনামা পেয়ে সে আকাংখা করে বলবে- হায়! আমার হাতে এ আমলনামা দিয়ে সবার সামনে লাঞ্ছিত ও অপমানিত না করে যে শাস্তি দেয়ার তা দিয়ে ফেললেই ভালো হতো
(সূরা আল হাক্কাহ- ২৫)। কিন্তু এ আকাংখায় কিছুই ফল হবে না। আমলনামাও বাম হাতে দেয়া হবে এবং শাস্তিও দেয়া হবে।

যদি অমুককে বন্ধুরূপে গ্রহন না করতাম : পার্থিব জীবনে বন্ধুত্বের গুরুত্ব অত্যাধিক। বন্ধু তার বন্ধুর জন্য অনেক কিছু ত্যাগ করে। বন্ধু নির্বাচন করার ক্ষেত্রে মু’মিনের দেখা উচিত তার মধ্যে ধার্মিকতা আছে কি-না। মহানবী (স) বলেছেন কোন অমুসলিমকে সঙ্গী করো না। আর তোমার ধন-সম্পদ যেন পরহেযগার ব্যক্তিই খায়। অর্থাৎ পরহেযগার নয়, এমন ব্যক্তির সাথে বন্ধুত্ব করো না (আহমদ, তিরমিযী, আবু দাউদ) হযরত আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত, রাসূল (স) বলেন- প্রত্যেক মানুষ অভ্যাসগতভাবে বন্ধুর ধর্ম ও চালচলন অবলম্বন করে। তাই কিরূপ ব্যক্তিকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করা হচ্ছে, তা পূর্বেই ভেবে নেয়া উচিত (সহীহ বুখারী)। হযরত ইবন আব্বাস (রা) বলেন- রাসূলুল্লাহ (স)-কে জিজ্ঞেস করা হলো যে, আমাদের মজলিসী বন্ধুদের মধ্যে কারা উত্তম? উত্তরে তিনি বলেন- যাকে দেখে আল্লাহর কথা স্মরণ হয়, যার কথাবার্তায় তোমার জ্ঞান বাড়ে এবং যার কাজ দেখে পরকালের কথা স্মরণ হয় (কুরতুবী)। যে দুই বন্ধু পাপ কাজে সম্মিলিত হয় এবং শরীয়ত বিরোধী কার্যাবলীতে একে অপরকে সাহায্য করে, তাদের সকলের বিধান এই যে, বিচার দিবসে তারা এই বন্ধুত্বের কারণে কান্নাকাটি করে বলবে- হায়! আমার দুর্ভাগ্য, আমি যদি অমুককে বন্ধুরূপে গ্রহণ না করতাম (সূরা আল ফুরকান- ২৮)। মহানবী (স) এর সময়কার দু’বন্ধু উবাই ও ওকবার অবস্থাও অনূরূপ হবে। ওকবা বন্ধুত্ব রক্ষার জন্য বিশ্ব নবী (স)- কে থুথু নিক্ষেপ করতে রাজি হয়ে ছিল।

যদি রাসূল (স) এর পথ ধরতাম : যারা শেষ নবী (স) কে জীবদ্দশায় পেয়ে তাঁর প্রতি ঈমান আনেনি এবং পরবর্তীতে যারা শেষ নবী (স) এর আগমন বার্তা শ্রবণ করার পর তাঁর আনীত জীবন ব্যবস্থা গ্রহন করেনি তারা বিচার দিবসে আফসোস করে বলবে- আর সেদিন জালেম আপন হস্তদ্বয় কর্তন করতে করতে বলবে, হায় আফসোস! আমি যদি রাসূলের পথ অবলম্বন করতাম (সূরা আল ফুরকান- ২৮)

যদি আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (স) এর আনুগত্য করতাম : বিচার দিবসে বিচারের পর কাফির-মুশরিকদেরকে দোযখে নিক্ষেপ করা হবে, আর তাদের মুখমন্ডলকে অগ্নিতে ওলট পালট করা হবে। তারা তখন আফসোস করে বলবে- হায়! আমরা যদি আল্লাহর আনুগত্য করতাম ও রাসূলের আনুগত্য করতাম! (তা’হলে আমাদের অগ্নিতে জ্বলতে হত না) (সূরা আল আহ্ধসঢ়;যাব- ৬৬)। কিন্তু তাদের এ আকাংখা ও আফসোস কিছুই কাজে আসবে না।

যদি দুনিয়ায় ফিরে যেতে পারতাম : পরকালে কাফির-মুশরিকদের অবস্থা অত্যন্ত কঠিন হবে। দোযখের শাস্তি প্রত্যক্ষ করার পর তারা পূনরায় দুনিয়ায় ফিরে যাওয়া কামনা করবে। কিন্তু তা সম্ভব হবে না। আল্লাহ তা’য়ালা ইরশাদ করেন- আর যদি আপনি দেখেন, যখন তাদেরকে দোযখের উপর দাঁড় করানো হবে। তারা তখন বলবে, হায়! কতই না ভাল হত, যদি আমরা ফিরে যেতে পারতাম; তা’হলে আমরা স্বীয় পালনকর্তার নিদর্শন সমূহে মিথ্যারোপ করতাম না এবং আমরা বিশ্বাসীদের অর্šÍভূক্ত হয়ে যেতাম (সূরা আল আনয়াম- ২৭)।

শয়তান যদি দূরে থাকতো : মানুষ মূলত শয়তানের পরোচনায়ই পথ ভ্রষ্ট হয়ে থাকে। কিন্তু ইহকালে তা বুঝতে পারে না। পরকালে যখন দোযখের শাস্তি প্রত্যক্ষ করবে এবং শয়তানই তাকে পথভ্রষ্ট করেছে বলে বুঝতে পারবে তখন বলবে শয়তান ও আমার মাঝে যদি পূর্ব-পশ্চিমের দূরত্ব থাকত, কতই না ভাল হতো। সে আমাকে পথ ভ্রষ্ট করতে পারতো না। আল্লাহর বাণী- অবশেষে যখন আমার কাছে আসবে, তখন সে শয়তানকে বলবে, হায়! যদি আমার ও তোমার মধ্যে পূর্ব-পশ্চিমের দূরত্ব থাকত! কত হীন সঙ্গী সে (সূরা আয- যুখরুক- ৩৮)।

পরকালে সকল পাপীই তাদের পাপের কথা স্বীকার করবে এবং নিশ্চিত শাস্তি দেখে আকাংখা করতে থাকবে। কিন্তু তখন সেই আকাংখা ও আফসোস তার কোন কাজে আসবে না। মৃত্যু আসার আগে পার্থিব জীবনেই পরকালের জন্য সম্বল সংগ্রহ করতে হবে। আল্লাহ আমাদেরকে এ দুনিয়া থেকেই পরকালের সম্বল সংগ্রহ করার তাওফিক দান করুন, আমিন।

লেখক : বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: কন্টেন্ট সুরক্ষিত!!