অভিযোগের তীর রাজনৈতিক প্রভাবশালীদের দিকে
নোয়াখালী প্রতিনিধি:
নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় কিছুতেই নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না “ভয়ানক কিশোর গ্যাং”। এদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে জনসাধারণ। রাজনৈতিক গডফাদারদের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে লালিত-পালিত বেপরোয়া কিশোর গ্যাংদের নিয়ন্ত্রণে পুলিশের চরম অনিহার বিষয়টি সুস্পষ্ট হওয়ায় অভিযোগের তীর এখন সরকার দলীয় শীর্ষ নেতাদের দিকেই।
বেপরোয়া কিশোর গ্যাংয়ের অত্যাচার ভয়ানক রূপ নেয়ায় সর্বমহল থেকে দাবী উঠেছে, এদের লাগাম টেনে ধরা এবং মূল উৎপাটন করার। উপজেলা আইন-শৃংখলা কমিটির প্রতিটি সভায় এসব বিষয়ে ঘটে যাওয়া নানা ঘটনা বিষয় উঠে আসে জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক দলের নেতা, সুশীল সমাজ এবং গণমাধ্যম কর্মীদের বক্তব্যে।
এক্ষেত্রে প্রশাসন দোষ চাপায় রাজনৈতিক নেতৃত্বের প্রতি, আর সরকারি দল আওয়ামী লীগ নেতারা পুলিশের ব্যর্থতাকেই দায়ী করেন। অবশ্য পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তাদের দাবী, রাজনৈতিক নেতাদের অনৈতিক তদবিরের কারনেই কিশোর গ্যাংয়ের লাগাম টানা যাচ্ছে না। অদৃৃশ্য শক্তির ইশারায় গ্যাং সংস্কৃতির বিস্তারে পুলিশের ওপর দায় চাপানো হচ্ছে অহেতুক।
অতি স¤প্রতি কোম্পানীগঞ্জ থানার অভ্যন্তরে এসআই মাসুদের উপস্থিতিতে একটি শালিশ বৈঠকে এক পক্ষ ওয়ারেন্টভুক্ত কিশোর গ্যাং সদস্য বিজয় প্রকাশ জয়, মোহন, আসিফ, বাদশাসহ তাদের সহযোগিদের নিয়ে ওই বৈঠকে বসে। তাদের মধ্যে এক পর্যায়ে থানার মধ্যেই মারামারির ঘটনা ঘটে। এক পর্যায়ে পুলিশ তাদেরকে থানা থেকে বের করে দিলে গ্যাং সদস্যরা প্রতিপক্ষ একজনকে মারতে মারতে থানার সামনে রাস্তায় নিয়ে আসে এবং রাস্তায় ব্যাপক যানবাহন ভাংচুর করতে থাকে। এসময় এখানে কর্মরত দৈনিক আমাদের সময়ের কোম্পানীগঞ্জ প্রতিনিধি নুর উদ্দিন মুরাদ ছবি তুলতে গেলে গ্যাং লিডার বিজয়, মোহন, বাদশা, আসিফের নেতৃত্বে তার ওপর হামলা করে। মুরাদকে উদ্ধার করতে এসে আরও ৪-৫জন হামলার শিকার হন। এঘটনায় ওই সাংবাদিক থানায় অভিযোগ করার পরও অদৃশ্য রাজনৈতিক গডফাদারদের ইশারায় পুলিশ এখনও পর্যন্ত অভিযান বা কোন আসামীকে গ্রপ্তার করেনি। অথচ ঘটনার সাথে জড়িতরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে পুলিশের নাকের ডগায়। এতে এখানে কর্মরত গণমাধ্যম কর্মীরা ক্ষোভ ও নিন্দা জানিয়েছে। ঘৃণা জানিয়েছে, সামাজিক শক্রু কিশোর গ্যাং লালনকারীদের প্রতি।
কোথায় নেই কিশোর গ্যাং সংস্কৃতি?
রাজনৈতিক সভা-সমাবেশ, শালিশ বৈঠক, বাল্য বিবাহের বিস্তার, মাদক ব্যবসার প্রসার, চুরি, ছিনতাই, অপহরণ, ভেজাল ও চোরাকারবারী, অবৈধ মোটর সাইকেল, সিএনজি অটো রিকসা চুরি-ছিনতাই ও ক্রয়-বিক্রয়, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি, ফর ফিলাপ, ঘর-বাড়ী নির্মাণসহ সর্ব ক্ষেত্রেই এদের অবাধ-অবৈধ বিচরণ প্রকাশ্যে চলছে। পুলিশের গ্রেপ্তারী পরোয়ানা থাকলেও তাদের পুলিশের সাথে বসে আড্ডা, মামলা সংক্রান্ত সালিশ বাণিজ্য এবং ভোজন-বিলাশে মত্ত থাকতে দেখা যায় কিশোর গ্যাং প্রধানদের।
কিশোর গ্যাং সদস্যদের অত্যাচারে অনেক অভিভাবক তাদের মেয়েদের শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানে পাঠাতে ভয় ও আতঙ্কে ভোগেন। অভিযোগ করলেও প্রতিকারের পরিবর্তে উল্টো শাসনে পড়তে হয় বলে অভিযোগ ভুক্তভোগিদের।
২০২০ সালে ৮ মে রাতে উপজেলার রামপুর ইউনিয়নে ২নং ওয়ার্ডে মিয়াধনের ছেলে মাদ্রাসা ছাত্র আবু জাহেদ (২২) খুন হয়েছিল কিশোর গ্যাং সদস্যদের অমানবিক নির্যাতনে। আজও জাহেদের খুনের বিচার পায়নি পরিবারটি। কয়েকদিন পূর্বে উপজেলার ঐতিহ্যবাহী পেশকারহাট উচ্চ বিদ্যালয়ে অকৃতকার্য শিক্ষার্থীদের এসএসসির ফরম ফিলাপ না করায় কিশোর গ্যাং নিয়ে এসে শিক্ষকদের হেনস্তা করা হয়। অননোন্যপায় হয়ে সকল বিষয়ে অকৃতকার্য বেশ কয়েকজন ছাত্র-ছাত্রীকে ফরম ফিলাপে বাধ্য হন স্কুল কর্তৃপক্ষ।