দৈনিক ফেনীর সময়

কিয়াতের পূর্বে যা ঘটবে

কিয়াতের পূর্বে যা ঘটবে

কিয়ামত আরবি শব্দ। অর্থ মহাপ্রলয়, পুনরুত্থান। ইয়াউমুল কিয়ামা অর্থ কিয়ামত দিবস। কিয়ামত দিবসের আরো নাম রয়েছে যেমন- ইয়াউমুল জাযা- প্রতিদান দিবস, ইয়াউমুল হিসাব- হিসাবের দিবস, ইয়াউমুল কাযা- বিচার দিবস, ইয়াউমুদ দিন- শেষ বিচারের দিন, ইয়াউমুল হাশর- সমাবেশের দিন, ইয়াউমুল জাময়ে- একত্রিত করার দিন, ইয়াউমুল বায়াছ- পুনরুত্থান দিবস ইত্যাদি। হযরত জিব্রাঈল আ. একদা ছদ্মবেশে মহানবী সা.। এর নিকট হাজির হয়ে আরজ করেন- কিয়ামত কখন অনুষ্ঠিত হবে? মহানবী সা. বলেন, জিজ্ঞাসিত ব্যক্তি জিজ্ঞাসাকারী থেকে অধিক জ্ঞাত নয়। (এ ব্যাপারে আপনার চেয়ে আমি অধিক জ্ঞাত নই) কিয়ামত কখন অনুষ্ঠিত হবে তা আল্লাহ তা’য়ালা ছাড়া আর কেউ জানে না (মিশকাত)।

কিয়ামতের পূর্বে যা ঘটবে : আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন- তারা কি শুধু এই অপেক্ষায় রয়েছে যে, কিয়ামত তাদের কাছে হঠাৎ এসে পড়ুক। বস্তুত কিয়ামতের লক্ষণ সমূহ তো এসেই পড়েছে। সুতরাং এসে পড়লে তারা কিভাবে উপদেশ গ্রহণ করবে? (সূরা মুহাম্মদ-১৮)। হযরত জিব্রাঈল আ. মহানবী সা. থেকে কিয়ামতের কতিপয় আলামত জানতে চাইলে তিনি বলেন, কিয়ামতের একটি আলামত হলো- দাসী তার মনিবকে প্রসব করবে অর্থাৎ ছোট লোকের ঘরে বড় লোক জন্মগ্রহণ করবে আরেকটি আলামত হলো- নগ্ন পা বিশিষ্ট, বস্ত্রহীন মেষ চালক বিশাল বিশাল প্রাসাদ তৈরী করবে এবং এ কাজে তারা পরস্পর গর্ব করবে। অর্থাৎ এক সময় যারা গরীব ছিল, পরবর্তীতে তারা ধনী হয়ে অহংকারী হবে (মিশকাত:২)।

মহানবী সা. বলেন- কিয়ামতের পূর্বে- সরকারী মালকে নিজের মাল মনে করা হবে; আমানতের মালকে নিজের মালের মত ব্যবহার করা হবে; যাকাতকে জরিমানা মনে করা হবে; ইসলামী আকীদা বর্জিত বিদ্যা শিক্ষা করা। হবে; পুরুষ নারীর অনুগত হবে; মায়ের সাথে দুর্ব্যবহার করা হবে; বন্ধুকে আপন মনে করা হবে; পিতাকে পর ভাববে; মসজিদে শোরগালে করবে; পাপীলোক গোত্রের নেতা হবে; অসৎ ও নিকৃষ্ট লোকেরা জাতির চালক হবে; ক্ষতির ভয়ে কোন লোককে সম্মান করা হবেদ; গায়িকা ও বাদ্যযন্ত্রের প্রচলন হবে; মদ পানের আধিক্য ঘটবে; এই উম্মতের পরবর্তী লোকেরা পূর্ববর্তী লোকদের বদনাম করবে (তিরমিযী)। কিয়ামতের পূর্বে আগো যা ঘটবে তাহলো- দ্বীনি ইলমের ঘাটতি, নগ্নতা-উলঙ্গপনা, ফিৎনা-ফাসাদের বিস্তার, অশ্লীলতার সয়লাব, হত্যাকান্ড, ভূমিকম্পের আধিক্য। এমনটি হত্যাকারী বলতে পারবে না কেন সে খুন করছে। মানুষ অট্টালিকা নির্মাণের প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হবে, মানুষ জীবনের প্রতি বীতশ্রদ্ধ হয়ে মৃত্যুকে বেশি পছন্দ করবে। ধন-সম্পদ এত বেড়ে যাবে যে, ধনীরা সদকা করার মত কাউকে পাবে না। দু’টি বৃহৎ দল একই দাবিতে ভয়াবহ যুদ্ধে লিপ্ত হবে। কিয়ামতের পূর্বে ত্রিশজন নবুওয়তের দাবিদার হবে। মুসলমানরা ইহুদী ও খ্রীস্টানদের অনুকরণ ও অনুসরণ করবে। মানুষ যালিমকে যালিম বলবে না, খারাপ কাজ থেকে কেউ কাউকে বারণ করবে না। নারীদের আধিক্য হবে, পঞ্চাশ জন নারীর দেখাশুনার ভার একজন পুরুষের উপর অর্পিত হবে। যিনা, ব্যভিচার ও মদের ছড়াছড়ি হবে। ইহুদীদের সাথে মুসলমানদের যুদ্ধ হবে এবং যুদ্ধে মুসলমানগণ বিজয়ী হবে। এমনকি জড় পদার্থ পাথরও তোমাদের সাহায্যে এগিয়ে এসে বলবে, হে মুসলমান! দেখ আমার পেছনে এক ইহুদী লুকিয়ে আছে, তাকে হত্যা কর। (সহীহ বুখারী ও মুসলিম)।

কিয়ামতের বড় বড় নিদর্শন সমূহ এখনো পরিদৃষ্ট না হলেও ছোট ছোট নিদর্শন সমূহ সর্বত্র বিস্তার লাভ করেছে। মানুষের মধ্যে কুরআন-হাদীস চর্চা এবং তা অনুযায়ী আমল করা কমে যাচ্ছে। কুরআন ও হাদীসের জ্ঞান থেকে মানুষদেরকে দূরে রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে। বদ দ্বীনি আচরণ ধীরে ধীরে বিস্তার লাভ করছে। মানুষ থেকে নীতি-নৈতিকতা হারিয়ে যাচ্ছে। হিংসা, লোভ ও অহংকারের সীমা ছাড়িয়ে গেছে। প্রতিযোগিতা করে অট্টালিকা নির্মাণ করা হচ্ছে। দুষ্টের দমন ও শিষ্টের লালনের পরিবর্তে দুষ্টের লালন ও শিষ্টের দমনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। শিরক, বিদআত, নিফাক ইত্যাদি বৃদ্ধি পাচ্ছে, মিথ্যা, আমানতের খিয়ানত, ওয়াদা খিলাফ অহরহ হচ্ছে। সন্তান পিতা-মাতার শুধু অবাধ্য নয় বরং পিতা-মাতাকে খুন করছে। পিতা-মাতা সন্তানকে আদর স্নেহ দিয়ে মানুষ করার পরিবর্তে নিজেই হত্যা করছে। ভাইয়ের কাছে বোন, পিতার কাছে নিরাপত্তা পাচ্ছে না, অথচ তারাই তার আশ্রয়স্থল। পিতা কন্যাকে, ভাই বোনকে ধর্ষন করছে, পুরুষ পুরুষকে, নারী নারীকে বিবাহ করছে; যা জাহেলী যুগেও করা হতো না। অন্যায়-অবিচার এত প্রকট আকার ধারণ করেছে যে, মানুষ অন্যায়কে অন্যায় মনে করছেনা। ন্যায়-নীতির পরিবর্তে অন্যায়-যুলুম চরমভাবে করা হচ্ছে। নারীরা পর্দা করার পরিবর্তে পর্দাহীনতাকে অহংকারের বিষয় বানিয়ে নিয়েছে। পোশাকের স্বাধীনতার নামে নগ্নতার জন্য সংগ্রাম করছে। সুদ-ঘুষ, মদ, জিনা-ব্যভিচার অধিক হারে বেড়ে গেছে। জাহেলী যুগের মত সুদকে ব্যবসার ন্যায় হালাল মনে করা হচ্ছে। ঘুষকে স্বাভাবিক ভাবে দেখা হচ্ছে। মদ পানকে তুচ্ছ করে দেখা হচ্ছে। পাঁচ বছরের বালিকা পর্যন্ত ধর্ষিতা হচ্ছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যুবতীরা যুবকদের হাতে নির্যাতিত হচ্ছে। সমাজে সৎ ও নেককার লোকেরা লাঞ্চিত হচ্ছে ও দুষ্ট লোকদের দৌরাত্ম বেড়ে গেছে। মহানবী সা. বলেছেন- কিয়ামতের পূর্বে অজ্ঞতা বেড়ে যাবে, ইলম উঠিয়ে নেয়া হবে, মানুষের হৃদয় কঠিন হয়ে যাবে এবং মারামারি, হত্যাযজ্ঞ বেড়ে যাবে (সহীহ বুখারী)।

লেখক : বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: কন্টেন্ট সুরক্ষিত!!