নোয়াখালী প্রতিনিধি :
নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় সেটেলমেন্ট কর্মকর্তার ঘুষ গ্রহণের ভিডিও ভাইরাল হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। ভাইরাল হওয়া ভিডিও’টি এখন সকলের মুঠোফোনে এবং মুখে মুখে নানা আলোচনা-সমালোচনা চলছে। উপজেলা সেটেলমেন্ট অফিসের উপ-সহকারী সেটেলমেন্ট কর্মকর্তা সামছুল হকের ঘুষ বাণিজ্যের ৪১ সেকেন্ডের ভিডিও’টি কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় “টক অব দ্যা কোম্পানীগঞ্জ”এ পরিণত হয়েছে।
শুক্রবার রাতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া ৪১সেকেন্ডের ভিডিও চিত্রে দেখা যায়, উপ-সহকারী সেটেলমেন্ট কর্মকর্তা সামছুল হক উপজেলা চরহাজারী ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের আমেরিকা প্রবাসী নুরুল আলম চাষীর কাছ থেকে তার (সামছল হক) নিজ বাসার কক্ষে বসে ঘুষের টাকা গ্রহণ করে গুণে নিচ্ছেন। স্থানীয় বেলাল আমিন ঘুষ বাণিজ্যের মধ্যস্থতা করে দেন বলে স্থানীয়রা জানায়।
এছাড়াও চরহাজারী ইউনিয়নে চলমান জরীপ কাজে ভূমি মালিকদের কাছ থেকে প্রতিটি খতিয়ানের বিপরীতে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে এবং একজনের জমি ঘুষের বিনিময়ে অন্যের নামে রেকর্ড করার অভিযোগ রয়েছে। এসব বিষয়ে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় আইন-শৃংখলা কমিটির সভায় একাধিক বার অভিযোগ উত্থাপিত হবার পর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো: মেজবা উল আলম ভুইয়া সেটেলমেন্ট অফিসের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সাথে দফায়-দফায় বৈঠক করেন। অনেক ভুক্তভোগি অভিযোগকারীর অভিযোগের সত্যতা পেয়ে তাদের কাছ থেকে আদায়কৃত ঘুষের টাকা সেটেলমেন্ট অফিসের সংশ্লিষ্টরা ফেরত দেয়ার ঘটনাও ঘটেছে। চরহাজারী ইউনিয়নে ব্যাক্তি মালিকাধীন শত শত একর জমি খাস খতিয়ানভুক্ত করে, তা আবার রাজনৈতিক প্রভাবশালী, ভূমিদস্যু ও কোন কোন জনপ্রতিনিধি নিজ দখলে রেখেছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে। এসব বিষয়ে সকল মধ্যস্থতা করেন, স্থানীয় বেলাল আমিন।
এর আগে গত অক্টোবর মাসে একই ইউনিয়নের ভুক্তভোগি যুবলীগ নেতা শাহাদাত উল্যাহ স্বাভাব ঘুষ বাণিজ্যের মাধ্যমে তাদের পৈত্রিক জমি অন্যের নামে অবৈধ ভাবে রেকর্ড করার অভিযোগে নোয়াখালী জোনাল সেটেলমেন্ট অফিসে লিখিত অভিযোগ দেন। ওই অভিযোগে উপ-সহকারী সেটেলমেন্ট কর্মকর্তা সামছুল হক ও সার্ভেয়ার আবদুল হান্নানকে অভিযুক্ত করা হয়। পরবর্তিতে সার্ভেয়ার আবদুল হান্নানকে কোম্পানীগঞ্জ সেটেলমেন্ট অফিস থেকে বদলী করা হলেও উপ-সহকারী সেটেলমেন্ট কর্মকর্তা সামছুল হক বহাল তবিয়তে থেকে ঘুষ বার্ণিজ্য, নানা দূর্ণীতি এবং জন দূর্ভোগ সৃষ্টি করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
চরহাজারী ইউনিয়নে মাঠ জরীপে হয়রানীর স্বীকার সোনাগাজী উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি প্রফেসর নাফিস জানান, আমার পৈত্রিক সম্পত্তি দিয়ারা রেকর্ড, সরকারি খাজনাসহ সকল কাগজপত্র ঠিক থাকার পরও ভুমিদস্যু আমেরিকা প্রবাসী নুরুল আলম অবৈধ মালিকানা দাবী করে সেটেলমেন্ট কর্মকর্তা সামছুল হককে ঘুষ দিয়ে তার (আলম চাষী) নামে রেকর্ড করার চেষ্টা করে। এ নিয়ে আমি নোয়াখালী জোনাল সেটেলমেন্ট কর্মকর্তা বরাবরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। অভিযোগ দেয়ার পর কাগজে আমার নামে রেকর্ড করা হলেও কোন কাগজপত্র না থাকলেও দখল কলামে ভূমিদস্যু আলম চাষীর নাম রেকর্ডে উল্লেখ করা হয়েছে। সেটেলমেন্ট কর্মকর্তা সামছুল হকের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “টাকা যার-জমি তার”। অথচ সরকারি আইন হচ্ছে, “কাগজ যার-জমি তার”। উপজেলা সেটেলমেন্ট কর্মকর্তাও এ অফিসটি সামছুল হক গংয়ের কাছে জিম্মি হয়ে আছে।
চরহাজারী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন সোহাগ জানান, আমার এলাকায় মাঠ জরীপে নিয়োজিত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আমার পরিষদ ভবনে একটি ক্যাম্প করেছেন। সেখানে জরীপ কাজে প্রতিনিয়ত জনসাধারণ হয়রানীর স্বীকার হয়। ঘুষ বাণিজ্যের বিষয়টি সত্য, এ নিয়ে আমি উর্ধ্বতন কতৃপক্ষকে একাধিকবার জানিয়েছি। যারা ঘুষ দিয়ে খতিয়ান নিতে পারছেনা, এমন অনেক গরীব মানুষকে তদবির করে আমি খতিয়ান নিয়ে দিয়েছি।
অভিযুক্ত এবং ভাইরাল হওয়া ভিডিও সংশ্লিষ্ট উপ-সহকারী সেটেলমেন্ট কর্মকর্তা (তসদিক কর্মকর্তা) সামছুল হক তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের বিষয় অস্বীকার করে বলেন, ভাইরাল হওয়া ভিডিওটির বিরুদ্ধে আমেরিকা প্রবাসী নুর আলম চাষী অপর একটি ভিডিও’র মাধ্যমে প্রতিবাদ করেছেন। তবে তিনি (সামছুল হক) নুর আলম চাষীর সাথে কিসের টাকা লেনদেন করেছেন তা স্পষ্ট করতে পারেননি।
কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা সহকারী সেটেলমেন্ট কর্মকর্তা আবদুল হাই গাজী জানান, টাকা লেনদেনের ভাইরাল হওয়া ভিডিও’টি আমার কাছেও এসেছে। আমি বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।