দৈনিক ফেনীর সময়

কোরবানির পশুর চামড়া সীমান্ত হাটে বিক্রিতে বাঁধা কোথায় ?

কোরবানির পশুর চামড়া সীমান্ত হাটে বিক্রিতে বাঁধা কোথায় ?

মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী মোর্শেদ

গত দিন কয়েক আগে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রানালয় আহুত এক যৌথ সভায় সরকার দুটি ট্রাস্কফোর্স গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যেখানে থাকবে পুলিশ, বিডিআর, র‌্যাব, বানিজ্য মন্ত্রানালয়ের প্রতিনিধি, জেলা প্রশাসক, উপজেলা প্রশাসন বিভিন্নস্তরের জনপ্রতিনিধি। যাদের কাজ মুসমানদের বৃহত্তম ধর্মীয় ফ্যাস্টিবেল উপলক্ষে যে পশু কোরবানী হবে বিষেশ করে গরু, মহিষ, উট, ছাগল, বেড়া এ সকল পুশুর মুল্যবান চামড়া যেন ভারতে পাচার না হয়ে যায়। দেশপ্রেমিক যে কোন মানুষ চামড়া পাচার বিরোধী টাস্কফোর্স গঠনকে সাধুবাদ জানানোর কথা, কিন্তু অত্যন্ত দুঃখ ও বিনয়ের সাথে পাচার বিরোধী এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানানো বেশ কঠিন।

প্রিয় পাঠক আপনারা জানেন, কোবানির ঈদ আসার মাস খানেক আগেই সরকার দেশের বানিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে কোরবানির পশুর চামড়া খরিদের জন্য অর্থ ঋণ জোগান দিত ২০১৫ সাল পর্যন্ত প্রতি গরুর চামড়া আকার বেদে ১৫০০ থেকে ৪০০০হাজার টাকা চামড়া ব্যবসায়িরা খরিদ করতেন। বানিজ্য মন্ত্রানালয়ও খরচের হিসাব করে চামড়ার মুল্য নির্ধারন করে দিত। শহর, গ্রাম, পাড়া-মহল্লা থেকে একদিকে সিজন ব্যবসায়িরা চামড়া খরিদ করত, আরেকদিকে কাওমি মাদ্রাসা ও সাধারন মাদ্রাসাগুলো চামড়া খরিদ করে ব্যবসায়িদের নিকট বিক্রি করত। চামড়া বিক্রির টাকা কোরবানি দাতার পরিবার দল মত নির্বিশেষে গরিব আত্মীয় স্বজন, মিসকিন, এতিমখানার, গোরাবা বা লিলাহ ফান্ডে দান করতেন। এতে অপ্রকাশিতভাবে দেশে দারিদ্র বিমোচন হত।

আমি হলফ করে বলতে পারি, কোরবানির চামড়ার সব টাকা সবচেয়ে সুশৃংখল ভাবে দরিদ্রদের মাঝে বন্টন হত। এতে সামাজিক একটা ভারসাম্য বজায় থাকত। গেল চার পাঁচ বছর দেখা যাচ্ছে- কোবানির পশুর চামড়া যারা খরিদ করতেন। তারা বেশ কিছু সিন্ডিকেট গঠন করলেন রাতারাতি বাজার থেকে কোবানির পশুর চামড়া ব্যবসায়িরা আড়ালে চলে গেলেন। তারা মনমত চামড়ার দাম ৫০, ১০০, ২০০ টাকায় নির্ধারন করে ঈদের দিন সন্ধ্যাবেলায় চামড়া সিজন ব্যবসায়িদের, মাদ্রাসা ওয়ালাদেরকে ব্যাপক লোকসানের মুখে ফেলে দেয়। প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক্স মিড়িয়ার কল্যানে মানুষ তাদের কান্না দেখেছে। পরের বছর চামড়া সিন্ডিকেট ব্যবসায়িরা ঈদের আগেই প্রচার দিলেন। এবার কুরবানির পশুর চামড়ার বাজার ভালো না। সিজন ব্যবসায়ি, কাওমি মাদ্রাসার লোকজন ও চামড়া খরিদে উৎসাহ হারিয়ে ফেলেন। ঈদের দিন কোরবানির যাবতীয় আনুষ্ঠানিকতা শেষে বিকেল পর্যন্ত কোরবানি দাতারা কোবানির পশুর চামড়া খরিদার, আল্লাহর ওয়াস্তে চামড়া চাওয়ার কাওমি মাদ্রাসার লিলাহ ফান্ড বা কোন সমিতি পাড়া-মহল্লায় না আসায় মানুষজন রাগে ক্ষোভে কোরবানির পশুর মুল্যবান চামড়া যা কিনা জাতীয় সম্পদ তা নদী, খাল, বিলে যত্রতত্র ফেলে দিলেন। আবার অনেকে মাটি খুড়ে গর্ত করে মাটিতে পুতে ফেলেন।

সবচেয়ে ভয়বাহ চিত্র ফুটে উঠলো ২০২০-২১ সালে। অনেক কোরবানী দাতা ৫০-১০০ টাকায় কোরবানি পশুর চামড়া বিক্রয় না করে কেউ আগুন দিয়ে পুড়ে ফেলেন আবার কেউ মাটিতে পুতে ফেলেন। আমাদের দূর্ভাগ্য কোন সংবাদপত্র পশুর চামড়ার এই মূল্য বির্পষয় নিয়ে অনুসন্ধানী কোন রিপোর্ট করলেন না। সরকারী দল. বিরোধী দল কেউই চামড়ার মুল্য বির্পষয় নিয়ে কোন সংবাদ সম্মেলন করলেন না। বানিজ্য মন্ত্রানালয় কেউই একটা তদন্ত কমিটি গঠন করলেন না, কারো যেন কোন দায়ী নাই। আমাদের মহোরার সমিতির সভাপতি যে কিনা রক্তে মাংসে আওয়ামীলীগ আমার কাছে তার ও একটা প্রশ্ন ”এক জোড়া জুতার দাম ৩-৭ হাজার টাকা হলে চামড়ার দাম কেন ২/৩শত টাকা হবে? তার এই প্রশ্নের জবাব আমার পক্ষে দেওয়া সম্ভব হয় নাই, কেন না জসিম হয়তো জানেও না হাঁসফাঁস একজোড়া জুতার দাম ১৫-২০ হাজার টাকা বিক্রি হচেছ। তার আরো প্রশ্ন গরিবের হক নিয়ে কারা নয়ছয় করছে ? ব্যপক সংখ্যক দরিদ্র জনগনের কল্যানে এই চামড়া সিন্ডিকেট ব্যবসায়িদের বিরুদ্ধে কি কোন ব্যবস্থা নেয়া যায় না ? তার এই প্রশ্নের উত্তরেও আমি নিরত্তোর কেন না যারা ব্যবস্থা নেয়ার তারা কিন্তু সবকিছু নিরবে সহে যাচ্চে। দরিদ্র লোক কোন টাকা না পেলে বা কম টাকা পেলে তাদের তেমন কিছু যায় আসে না।

প্রিয় পাঠক, গত কয়েকদিন আগে দেশে পেয়াজের দাম অস্বাভাবিক ভাবে বেড়ে গিয়েছিল কেজি ৯০-১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছিল, অথচ দেশে পেয়াজের উৎপাদন ও মওজুদ যথেষ্ঠ পরিমান থাকায় সরকার দেশীয় পেয়াজ চাষীদের স্বার্থ সংরক্ষনের জন্য ভারত থেকে পেয়াজ আমদানী নিষিদ্ধ করেছিল। এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে কতিপয় অসৎ ব্যবসায়ি কৃষক থেকে ২০-২৫ টাকা পেয়াজ কিনে নানান খরছের কথা বলে ঐ পেয়াজ ৯০ টাকা বিক্রয় করলেন। রাতারাতি বাজার থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট করে ফেললেন, এনিয়ে সংবাদপত্র ও টেলিভিশন মিড়িয়ায় ব্যপক আলোচনা হওয়ায় সরকারের টনক নড়ে। সরকার দ্রæত সিদ্ধান্ত জানায় যে পেয়াজের মুল্য স্বাভাবিক রাখতে ভারত থেকে সরকার পেয়াজ আমদানির অনুমতি দিবে। বিদ্যুতগতিতে সময়োচিত সিদ্ধান্তের কারনে আমদানিকৃত পেয়াজ দেশে আসার আগেই দেশীয় পেয়াজের মুল্য ৪৫-৫০ টাকায় নেমে আসে এতে জনগনের মাঝে স্বস্তি ফিরে আসে।

বাজার অর্থনীতির কথা। কিন্তু এটাই বাজার নিয়ন্ত্রন না করে, আমদানী বন্ধ না করে ভোগ্যপন্যকে প্রতিযোগীতায় রাখতে হবে তখন বাজারই পন্যের মুল্য নির্ধারন করবে। আমাদের আরেক আইনজীবী বন্ধু আমাকে এই রেফারেন্সটিই দিলেন। আামরা যদি ভারত থেকে আমাদানিকৃত পেয়াজ খেতে পারি কম মুল্যে এবং ভারত থেকে পেয়াজ আসায় বাংলাদেশের পেয়াজের বাজার স্থিতিশীল হয় তাহলে ভারতের বাজারে মহামুল্যবান চামড়া আমরা কেন দেশীয় পাদুকা শিল্পের ও ট্যানারি ব্যবসায়ীদের আঙ্গুল ফুলে কলা গাছ হওয়ার জন্য কোরবানীর কাঁচা চামড়া ভারতীয়দের কাছে প্রতি পিছ চামড়া ৪/৫হাজার টাকায় বিক্রি না করে নামমাত্র মুল্যে বাংলাদেশী ব্যবসায়ীদেরকে দিতে যাব। উত্তরে আমি বললাম- এই অল্প সময়ের ভিতর কাঁচা চামড়া ভারতীয়দের কাছে কিভাব্ েবিক্রি করবো ? বয়স্ক আইনজীবী বন্ধু আমাকে বললেন দেখুন পেয়াজ আমদানীর ঘোষনায় যদি পেয়াজের মুল্য কমতে পারে তাহলে সরকার যদি ঘোষনা দেয় চামড়া ন্যায্যমূল্য নিশ্চিতের জন্য স্থানীয় ও সিজনাল চামড়া ব্যবসায়ীরা তাদের নিকটস্তু ভারতীয় সীমান্ত হাট রয়েছে, ঐ সকল সীমান্ত হাটে চামড়া ব্যবসায়ীরা কাঁচা চামড়া বিক্রয় করতে পারবেন, তাহলে দেখবেন চামড়ার সিন্ডিকেট ব্যবসায়িরা প্রতিটি চামড়া ৩/৪হাজার টাকা মুল্যে হুমড়ি খেয়ে প্রতিযোগীতার মাধ্যমে ক্রয় করবেন।

এতে একদিকে যেমন অর্থনৈতিক সুশাসন নিশ্চিত হবে এবং দারিদ্র বিমোচনেও ভুমিকা রাখবে। তাই সরকারের সাথে বিনয়ের সাথে বলতে চাই- কাঁচা চামড়া ভারতে বিক্রির প্রস্তাবনাটি আলোচনায় আনুন সীমান্ত হাট গুলোকে চামড়া ক্রয় বিক্রয়ে ভারতের উচ্চপর্যায়ে যোগাযোগ করলে এমনিতেই বাংলাদেশী চামড়ার বাজার দ্রæত প্রতিযোগীতায় ফিরে আসবে, চামড়া বাজারকে প্রতিযোগীতা মুলক করার জন্যে সীমান্ত হাটে কোরবানীর পশুর চামড়া বিক্রির সম্ভবনা খুজে দেখা দরকার।

লেখক : আইনজীবী, আজীবন সদস্য, ঢাবি রাষ্ট্রবিজ্ঞান এলামনাই এসোসিয়েশন
সভাপতি, গর্ভনেন্স এসোসিয়েশান, ফেনী।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: কন্টেন্ট সুরক্ষিত!!