নিজস্ব প্রতিনিধি :
দাগনভূঞা উপজেলার ইয়াকুবপুর ইউনিয়নের চন্ডিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শ্রেণিকক্ষেই পিয়নের যৌন হয়রানীর শিকার হয়ে স্কুলে যাতায়াত বন্ধ করে দিয়েছে কয়েকজন ছাত্রী। পিয়ন হুমায়ুন কবীর হরহামেশা এমন ঘটনার প্রতিকার চেয়ে প্রধান শিক্ষককে জানানো হলেও তিনি কোন ব্যবস্থা নেননি। এ ঘটনায় উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র ও একাধিক অভিভাবক জানিয়েছেন, বেশ কিছুদিন ধরে হুমায়ুন কবীর শ্রেণিকক্ষে গিয়ে পঞ্চম ও চতুর্থ শ্রেণির কয়েকজন ছাত্রীকে শরীরের বিভিন্ন স্পর্শকাতর স্থানে হাত দেয়া সহ নানাভাবে যৌন হয়রানী করে। একইভাবে প্রধান শিক্ষক জাহাঙ্গীর হোসেন ছাত্রীদের দিয়ে শরীর ম্যাসেজ করিয়ে নেয়। এসব বিষয়ে প্রধান শিক্ষকের একাধিক অভিভাবক জানালেও তিনি কর্ণপাত করেননি। একপর্যায়ে অভিভাবকরা তাদের মেয়েদের স্কুলে যাতায়াত বন্ধ করে দিয়েছেন।
ভুক্তভোগী একাধিক ছাত্রী জানান, পিয়ন হুমায়ুন কবীর শিক্ষক না হয়েও ক্লাস রুমে গিয়ে ছাত্রীদের শরীরের বিভিন্ন স্থানে হাত দেন। এ ব্যাপারে মারধরের ভয় দেখিয়ে শিক্ষক-অভিভাবকদের না জানাতে শাসিয়ে দেন।
উত্তম কুমার নামে এক অভিভাবক জানান, পিয়ন হুমায়ুনের কর্মকান্ডে অভিভাবকরা ক্ষুদ্ধ হয়ে উঠছেন। তার স্ত্রী বিষয়টি প্রধান শিক্ষককে অবহিত করলেও কোন ব্যবস্থা না নিয়ে উল্টো বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন। মেয়েদের স্কুলে পাঠিয়ে পরিবার শংকার মধ্যে থাকেন। শুধু তাই নয়, স্কুল সংলগ্ন বাড়ির খামারে গরু-ছাগল ও মুরগির খামারে ছাত্র-ছাত্রীদের ব্যস্ত রাখেন প্রধান শিক্ষক। এ ব্যাপারে তিনি জেলা প্রশাসক ও জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
শহীদুল ইসলাম পলাশ নামে আরেক অভিভাবক জানান, অনেক মেয়েরা লজ্জায় বলতে পারেনা। তার মেয়ে স্কুলে যেতে না চাইলে বিষয়টি প্রকাশ হয়। এভাবে একেএকে একাধিক অভিভাবক মুখ খুলতে শুরু করেছেন। এ ব্যাপারে প্রতিকার পেতে তিনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
অভিভাবক হান্নান ভুট্টু জানান, ঘটনা শোনার পর তার মেয়ে সহ ৪-৫ জন ছাত্রী গত ৭-৮ দিন ধরে স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাহিদা আক্তার তানিয়া জানান, অভিযোগের তদন্ত করতে প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।
তদন্তের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপজেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা সুজন কান্তি শর্মা জানান, ঘটনার তদন্তে সরেজমিনে গিয়ে স্থানীয় এলাকাবাসী, ভুক্তভোগী ছাত্রী, তাদের অভিভাবক ও অভিযুক্ত পিয়নের বক্তব্য নেয়া হয়েছে। প্রধান শিক্ষককে কর্মস্থলে না পাওয়ায় তাকে রবিবার সকালের মধ্যে হাজির হতে জানানো হয়েছে। দ্রæতসময়ের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়া হবে।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, হুমায়ুন কবীরের বিরুদ্ধে আগেও যৌন নিপীড়নের অভিযোগের তদন্ত চলমান রয়েছে। গরু-ছাগলের খামারে ছাত্র-ছাত্রীদের ব্যাবহারের বিষয়টি তিনি অস্বীকার করেন।
অভিযোগ অস্বীকার করে অভিযুক্ত পিয়ন হুমায়ুন কবীর দাবী করেন, পরিকল্পিতভাবে তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। অতীতেও নানাভাবে তাকে ফাঁসানোর চেষ্টা করা হয়েছে।
ফেনী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নাসির উদ্দিন আহমেদ জানান, বিষয়টি জানার পর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে খোঁজখবর নিতে নির্দেশ দেয়া হযেছে।