নিজস্ব প্রতিনিধি :
ফেনী সরকারি জিয়া মহিলা কলেজের শিক্ষকদের থেকে আর্থিক সহযোগিতা পেয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তির অনিশ্চয়তা কাটলেও পড়াশোনার খরচ চালানো নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন প্রতীমা রানী দে। সে সদর উপজেলার কাজিরবাগ ইউনিয়নের কাজিরবাগ গ্রামের রাখাল চন্দ্র দে এর বড় মেয়ে।
স্থানীয় সূত্র জানায়, ৩ ভাইবোনের মধ্যে প্রতিমা সবার বড়। তার পরিবারের আর্থিক অবস্থা জীর্ণশীর্ণ। তার বাবা রাখাল চন্দ্র দে দিনমজুরি করে সংসার চালান। আগে একসময় পান বিক্রি করতেন। দুই মেয়ের পড়াশোনা আর সংসারের টানাপোড়নে দারদেনায় জর্জরিত হয়ে আগেকার বাড়ি জায়গা বিক্রি করে দিয়েছিলেন রাখাল। এরপর নিজ গ্রামেই বাসা ভাড়া নিয়ে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে বসবাস করেন।
রাখাল চন্দ্র দে জানান, প্রতীমা রানী পড়াশোনায় বেশ ভালো। আগামী সপ্তাহে এখন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হবেন। কিন্তু চট্টগ্রামে থাকা-খাওয়া এমনকি কীভাবে পড়াশোনার খরচ জোগাড় করবেন, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন তিনি।
প্রতিমা রানী কাজিরবাগ হাজী দোস্ত মোহাম্মদ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০১৯ সালে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ ৪.৮৯ পায়। এরপর ২০২১ সালে ফেনী সরকারি জিয়া মহিলা কলেজ থেকে জিপিএ ৫ পান। পরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে মেধাক্রমে ৪৪৯তম হয়ে বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তিতে মনোনীত হন। ভর্তির জন্য আর্থিক সংকটে পড়ার বিষয়টি জেনে ফেনী সরকারি জিয়া মহিলা কলেজ অধ্যক্ষ প্রফেসর কামরুন নাহার সহ শিক্ষকরা এগিয়ে আসেন। গত রবিবার প্রতিমাকে ডেকে নিয়ে সহায়তা স্বরূপ ভর্তির খরচ বাবদ ১৭ হাজার টাকা প্রদান করেন।
প্রতিমা রানী দে ফেনীর সময় কে জানান, ছোটবেলা থেকেই পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার স্বপ্ন দেখতেন। সেই স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। আগামী ১৯ সেপ্টেম্বর থেকে ২৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নির্ধারিত সময়ের যেকোন দিন ভর্তি হবেন। পলিত রসায়ন বিভাগে পড়ে এবার বিসিএস ক্যাডার হওয়ার স্বপ্ন তার। চট্টগ্রামে থাকা-খাওয়ায় প্রতিমাসে অন্তত ৬ থেকে ৭ হাজার টাকা প্রয়োজন।
তিনি আরো জানান, এসব খরচের কথা ভেবে ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণের পর মা পড়াশোনা চালাতে পারবেনা বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন। এজন্য আমি ও মা-বাবা সবাই খুব দুশ্চিন্তায় আছেন। আগামী দেড়-দুই বছর সহায়তা পেলে ভালো হতো। পরে নিজেই প্রাইভেট পড়িয়ে চলতে পারবে বলে প্রতিমার আশা।
ফেনী সরকারি জিয়া মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর কামরুন নাহার ফেনীর সময় কে জানান, প্রতিমা খুব ভালো মেয়ে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েছে শুনে কলেজের শিক্ষকেরা খুশি হয়েছেন। তার পারিবারিক টানাপোড়নের কথা জেনে ভর্তির সহায়তায় শিক্ষকরা এগিয়ে এসেছেন। তার আগামীতে পড়াশোনার জন্য সহযোগিতা মেয়েটি তার লক্ষ্যে পৌঁছতে পারবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।