-নাজমুল হক
আমরা যখন ছাত্র ছিলাম তখন পাঠ্যক্রমে কবি রবিন্দ্রনাথ ঠাকুরের জুতা আবিস্কার পড়ে ছিলাম। হবুচন্দ্র রাজার গবুচন্দ্র মন্ত্রী জাতিকে ধুলো থেকে রক্ষা করার কোন উপায় বের করতে পারেন নাই। একজন মুচি ১ জোড়া চামড়ার জুতা আবিষ্কার করে জাতিকে ধুলাবালি থেকে মুক্ত করে দিল। ফেসবুকে ভিডিও ফুটেজ দেখতে পেলাম একজন সাংসদের নীতির কথা ফুটন্ত বক্তৃতা। তার মেয়ের দ্বিতীয় জামাই ঢাকা সিটি কর্পোরেশন দক্ষিনের ৩০নং ওয়াড কমিশনার পদপ্রার্থী হিসেবে ইলেকশনের জনসভা। সাংসদ তার জামাইকে নিয়ে গবিত ও উৎফুল্ল। কারন জামাই ইরফান একজন ভালো ছেলে, শশুরের গুনধন জামাই সম্পকে মূল্যায়ন (১) তিনি চাঁদাবাজ নহেন (২) সন্ত্রাসী নহেন (৩) টাকার অভাবী নহেন। এইজন্য তিনি গবিত। জামাইয়ের বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ পেলে সাংসদ বেয়াইকে নিয়ে লাঠি দিয়ে পেটাবেন। কথাগুলো শুনতে খুবই চমত্কার ও সুমধুর।
কিছুদিন পরে হিন্দুদের দুর্গাপুজার দিন বাংগালী জাতি কি দেখতে পেলো। নিরাপত্তা সংস্থা র্যাব এবং ম্যাজিস্ট্রেট সরওয়ার আলম সাহেব একজন ওয়ার্ড কমিশনারকে মদ, বেআইনি অস্ত্র রাখার অপরাধে গ্রেফতার করে ১ বছর কারাদন্ড দিয়েছে। পিতা এবং শশুর সংসদ সদস্য হয়েও তাকে (সন্ত্রাসী জামাইকে) রক্ষা করতে পারেন নাই। কি বিচিত্র দৃশ্যের বাংলাদেশ, সাংসদের পছন্দ চিহ্নিত সন্ত্রাসের রাজা জামাই। আবার লালবাগের জনপ্রতিনিধি। সাংসদ শশুর এই রকম জামাই পেয়ে গর্বিত। বেয়াই সাহেব জাল দলিল করে সরকারী ব্যাংকের জায়গা দখল করে আছে একযুগেরও বেশী। সেই সাংসদের বিরুদ্ধে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের হল ও জায়গা দখল, নদী খাল দখলের অসংখ্য অভিযোগ। সাংসদ এবং তার ছেলের কার্যকলাপ দেশের আইন আদালত এবং সংবিধান পরিপন্থী। তারপরও বেয়াই ও জামাইয়ের পরিবার এবং তাদের নীতি-নৈতিকতা নিয়ে বেয়াই সাহেব গর্বিত। হায়রে বাংলাদেশ একি তোমার প্রতিচ্ছবি।
বিভিন্ন জেলায় সরকারী অফিসে ডিজিটাল ব্যানার আছে আমি এবং আমার অফিস দুর্নীতিমুক্ত। অথচ সেই সকল অফিসে ঘুষছাড়া কোন কাজ হয় না। এভাবে আর কতকাল বাংগালী জাতিকে বোকা বানানো যাবে। দুইটা ঘটনা মনে পড়ে গেল।
(১) আশির দশকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে একজন সরকারী ছাত্র সংগঠনের ছাত্রনেতা ছিল তার নাম ছিল আব্দুল হামিদ। তিনি চলাফেরা করতেন প্রকাশ্যে পিস্তল হাতে নিয়ে। তিনি বক্তব্য রাখার সময় পিস্তলসহ এক হাত উঁচু করে বলতেন আমি সন্ত্রাসে বিশ্বাস করিনা। তখন ওনার শার্টের নিচ থেকে অন্য পিস্তলটা দেখা যেতো।
(২) ১৯৯৬ সালে আমার আন্তর্জাতিক সংস্থায় চাকরি কালীন উল্লাপাড়া উপজেলার ইউএনও জনাব আলতামাস সাহেব একটা ঘুষের টাকার লেনদেন নিয়ে গল্প করলেন। তিনি বললেন, জেলা প্রশাসক সাহেব বলেছেন-প্রধানমন্ত্রী সিরাজগঞ্জ আসছেন তার আগমন উপলক্ষে প্রত্যেক উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে ১০ হাজার- টাকা ম্যানেজ করে দিতে হবে। তিনি দাঁড়িয়ে বললেন স্যার আমার কাছে এতো টাকা নেই, আমি ব্যক্তিগতভাবে ৩( তিন) হাজার টাকা দিতে পারি। জেলা প্রশাসক সাহেব ধমক দিয়ে বললেন আপনাকে ব্যক্তিগতভাবে দিতে হবেনা, উপজেলা সাব এসিসস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ারকে ডেকে বলুন টাকার ব্যবস্থা হয়ে যাবে। তিনি আসতে আসতে চিন্তা করলেন যিনি ১০ হাজার টাকা ম্যনেজ করে দিতে পারেন তিনি নিশ্চয়ই ২০ হাজার টাকার ব্যবস্থা করতে পারবেন। তিনি ইঞ্জিনিয়ার সাহেবকে নিদেশ দিলেন, নিদ্দিষ্ট দিন ইঞ্জিনিয়ার সাহেব টাকা নিয়ে অফিসে হাজির। তিনি ইঞ্জিনিয়ার আসামাত্র দরজা বন্ধ করে দিলেন এবং জিজ্ঞেস করলেন তিনি কিভাবে টাকা ম্যনেজ করলেন। ইঞ্জিনিয়ার সাহেব বললেন তিনি ৮০ হাজার টাকা ম্যানেজ করে ৬০ হাজার টাকা নিজে নিয়েছেন। ইউএনও সাহেব জানতেন না কিভাবে মাঠ প্রশাসনে টাকা ম্যনেজ ও লেনদেন হয়। তিনি ১০ হাজার টাকা ভবিষ্যৎ প্রোগ্রামের জন্য রেখেছেন।
(৩) ভারতের প্রধানমন্ত্রী চরন সিং এর ঘুষ লেনদেন। একদিন তিনি কৃষক সেজে ময়লা কাপড় পরিহিত অবস্থায় স্থানীয় থানায় গেলেন। তার গরু চুরি হয়েছে এই মর্মে অভিযোগ দায়ের করতে। থানার বড় কর্তাবাবু দু’চারটি শক্তমন্দ প্রশ্ন করে অভিযোগ নিলেন না। বিফল মনোরথে সেই কৃষক থানা থেকে বেরিয়ে আসছিলেন। পিছন পিছন এক কনস্টেবল এসে কৃষককে বললেন, কিছু খরচাপাতি দিলে অভিযোগ লিপিবদ্ধ করা হবে। ৩৫ টাকায় রফা দফা করে অভিযোগ লিখালেন। দারোগাবাবু কৃষককে জিজ্ঞেস করলেন, সই দিবেন না টিপ সই দিবেন? উনি বললেন, সই দিবো। এ কথা বলে পকেট থেকে স্ট্যাম্প সীল বের করলেন। দারোগা বাবু আবার প্রশ্ন করলেন, সই দিলে স্ট্যাম্প সীল কেন? কৃষক বললেন, দুটোই দিবো। এই বলে সই করলেন, নীচে সীল মারলেন। সীলের বর্ণনা ছিলো, চৌধুরী চরণ সিং, প্রাইম মিনিস্টার, গভর্নমেন্ট অব ইন্ডিয়া। এই দেখে দারোগাবাবু ও কর্তাবাবুর চোখ মাথায় উঠে গেলো। ভালো করে পরখ করে দেখে পায়ে পড়লেন। থানার কাজকর্ম যাচাই করতে চৌধুরী চরণ সিং কাপড়-চোপড় ময়লা করে নিজের কনভয় দূরে রেখে থানায় প্রবেশ করেন।
(৪) উগান্ডায় যখন দেশের সবাই চোর। উগান্ডায় একবার এক চোরকে সামান্য ম্যানহোলের ঢাকনা চুরির অপরাধে মৃত্যুদন্ড দেয়া হল। তখন সে চোর তার শেষ ইচ্ছা হিসেবে দেশের প্রধানমন্ত্রীর সাথে দেখা করার সুযোগ চাইল। যখন তাকে প্রধানমন্ত্রীর কাছে নিয়ে আসা হলো তখন সে প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে বলল স্যার, আপনার সাথে দেখা করতে চাওয়ার একটাই কারণ তা হলো, আমার কাছে এমন একটা গাছের বীজ আছে যে গাছটা মনের সব ইচ্ছা পূরন করতে পারে। আমি আপনার জন্য এই গাছটা রোপণ করে দিয়ে যেতে চাই। প্রধানমন্ত্রী তাকে জিজ্ঞেস করল- ‘তোমার চারা লাগাতে কত দিন লাগবে?’ চোর উত্তর দিল, ‘এইতো স্যার, সাত দিন।’
সাতদিন পর তাকে আবার মন্ত্রিসভায় হাজির করা হল। একজন জিজ্ঞেস করল, ‘তোমার চারার কী খবর? চোর বলল, ‘আসলে জমি তো রেডি কিন্তু বীজটা পরিপক্ক হতে আরও তিনদিন লাগবে। তিনদিন পর তাকে আবার হাজির করা হল। প্রধানমন্ত্রী জিজ্ঞেস করলেন, ‘বীজ রেডি তো এবার? চোর বলল, ‘স্যার জমি বীজ সবই রেডি কিন্তু আমিতো তা রোপণ করতে পারব না। প্রধানমন্ত্রী জিজ্ঞেস করলেন, কেন? চোর বলল, এটা এমন একজনের হাতে রোপণ করতে হবে যে কোনদিন চুরি করেনি। না হলে এটা কার্যকারিতা হারাবে। সাথে সাথে প্রধানমন্ত্রী অর্থমন্ত্রীকে নির্দেশ দিলেন বীজ রোপন করতে।। অর্থমন্ত্রী কাচুমাচু হয়ে বললেন, স্যার সারাদেশের অর্থ নিয়ে আমার কাজ। এত কাজের মধ্যে দু’একটা তো এদিক-সেদিক হতেই পারে।’ এরপর প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিলেন পরিবহনমন্ত্রীকে পরিবহনমন্ত্রী কাচুমাচু হয়ে বললেন, স্যার, কত কত গাড়িঘোড়া আমার প্রতিনিয়ত অনুমোদন দিতে হয়, এর মাঝে তো দু’একটা এদিক-সেদিক হতেই পারে। এরপর প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে। পররাষ্ট্রমন্ত্রীও কাচুমাচু হয়ে বললেন, স্যার, এতো দেশের সাথে যোগাযোগ, এতো দেশে যাওয়া আসা, বাণিজ্য লেনদেন এর মধ্যে তো আমারও দু’একটা এদিক-সেদিক হতেই পারে।’
প্রধানমন্ত্রী এরপর যাকেই বলেন সেই এদিক-সেদিকের দোহাই দিয়ে এড়িয়ে যায়। হঠাৎ সবাই প্রধানমন্ত্রীকে ধরলেন, ‘স্যার, আপনিই রোপণ করুন না। তখন প্রধানমন্ত্রী বললেন, ‘তোমাদের তো দায়িত্ব ছোট ছোট, আমি পুরো দেশ চালাই। আমার কি একটু আধটু এদিক-সেদিক হতে পারে না। তখন সবাই চুপ হয়ে গেল। হঠাৎ একজন বলে উঠলেন, ‘তাহলে স্যার, এই লোক তো সামান্য একটা ম্যানহোলের ঢাকনা চোর। একে মৃত্যুদন্ড দেয়া কি ঠিক? একে ছেড়ে দেয়া হোক। আরেকজন বললেন, ‘না একে ছেড়ে দেয়া যাবে না। তাহলে সে বাইরে গিয়ে সব ফাঁস করে দেবে। সবাই চিন্তায় পড়ে গেল একে নিয়ে কী করা যায়? তখন একজন বলল,- স্যার এক কাজ করুন। একে আমাদের মতোই একটা পদ দিয়ে আমাদের সাথে শামিল করে নেন।’ যেই কথা সেই কাজ, সেই চোর হয়ে গেল মন্ত্রীসভার সদস্য। এভাবেই মন্ত্রিসভা গঠিত হচ্ছে সারা দুনিয়া।
৫) সাংসদ পুত্রের আত্মজীবনী : ইরফান ছোটবেলা থেকেই টাকার জন্য তার মাকে আটকে রাখত, মারধর করত। সাংসদ নিজেই লালবাগ এলাকায় একজন সন্ত্রাসী হিসেবে পরিচিত। রাজনীতিতে তার উত্থানই সন্ত্রাসের মাধ্যমে। সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, জমি দখল, বুড়িগঙ্গা দখল ইত্যাদি তার নিত্য-নৈমিত্তিক কাজ। মানুষের সাথে জবরদস্তি করা থেকে শুরু করে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলও দখলের অভিযোগও রয়েছে সাংসদের বিরুদ্ধে। এলাকার মানুষকে ভয়-ভীতি দেখানো বা জিম্মি করে রাখাই ছিল তার রাজনৈতিক কৌশল। আর এই কৌশলের কারণেই প্রথমে ওয়ার্ড কমিশনার এবং পরে ‘৯৬ সালে এমপি হয়ে সংসদে। সাংসদের দুই পুত্র। দু’জনের মধ্যে বড় ছেলেকে নিয়ে কোন অভিযোগ নেই। কিন্তু ছোট ছেলেটি শুরু থেকে ছিল সন্ত্রাসী এবং অবাধ্য হয়ে উঠে। লালবাগের একাধিক ব্যক্তি জানায়, ইরফান ছোটবেলা থেকেই বখে যায় এবং নানারকম অপকর্মের সঙ্গে যুক্ত হতে শুরু করে।
ইরফানের সঙ্গে এক সময় চলাফেরা ছিল এই একজন বলেন, ‘বখে যাওয়ার কারণে ইরফান শিক্ষা জীবনও শেষ করতে পারেনি। বিবিএ ভর্তি হলেও পড়াশোনা শেষ করতে পারেনি’। মহল্লার স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, ইরফানের এমন হয়ে উঠার কারণেই হাজী সেলিম তাকে বিয়ে দিয়েছিলেন। সেইসাথে রাজনীতিতেও তাকে আনতে চেয়েছিলেন। জানা গেছে, ইরফান আগামী নির্বাচনে এমপি হওয়ার লড়াইয়ে নামতেন। এই বিষয়ে হাজী সেলিমকেও তিনি আগে থেকে সতর্ক করে দিয়েছেন বলে খোঁজ নিয়ে জানা যায়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন জানান, ২০১১ সালের একটা ঘটনার কথা উল্লেখ করে তারা বলেন, তখন হাজী সেলিমকে পিস্তল নিয়ে তাড়া করেন ইরফান সেলিম। আর এরপর থেকে হাজী সেলিম ছেলে ইরফানকে ‘সমঝে’ চলতে শুরু করেন। লালবাগের বেশ কয়েকজন জানায়, ইরফান বড় হওয়ার সাথে সাথে এলাকায় আধিপত্য বিস্তার করতে থাকে। সেইসাথে চাঁদাবাজি আর দখল জবরদস্তিতে হাজী সেলিমকেও কোণঠাসা করে ফেলে। হাজী সেলিমের ঘনিষ্ঠরা বলেন, ‘শেষ দিকে এসে হাজী সেলিমের সাথেও ইরফানের দূরত্ব তৈরি হয়। এটাকে ঠিক দূরত্ব বললেও ভুল বলা হবে। একরকমের দ্বন্ধই বলা চলে’। তারা জানায়, বিভিন্ন বিষয়ে হাজী সেলিমের সঙ্গে প্রতিনিয়নই তার ঝগড়া বিবাদ হতো।
এর এইরকম ঘটনায় পুরান ঢাকায় অনেকেই লাঞ্ছিত ও নিগ্রহের স্বীকার হয়েছেন বলে জানা যায়। লাঞ্চনার হাত থেকে নারীরাও বাদ যায়নি বলে জানায় মহল্লার অনেকে। গত বছরেই লালবাগ এলাকায় একটি বড় ঘটনা ঘটে। সে সময় ইরফানের গাড়ির সামনে দিয়ে রাস্তা পার হচ্ছিলেন এক কলেজ পড়ুয়া ছাত্রী। তখন ইরফান সেলিমের লোকজন ছাত্রীটিকে উঠিয়ে নিয়ে মদিনা আশিক টাওয়ারে আটকে রাখে। অবশ্য পরে অনেক অনুনয় করে মেয়েটিকে উদ্ধার করে তার অভিভাবকরা।
একাধিক ব্যক্তি জানায় যে, হাজী সেলিম বাকশক্তি হারানোর আগেও তার ছেলেকে নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করতেন। আর এখন হাজী সেলিমের এই উদ্বেগই যেন সত্যি হল! সুত্র: বাংলা ইনসাইডার। জানা গেছে, গত ১ বছরে ইরফান বাহিনী এলাকায় পুরো ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে রেখেছিল। আর এই বাহিনীতে ৭০ জনের মতো ক্যাডার ছিল। র্যাবের মতে, এদের সবার হাতেই অস্ত্র ছিল, যার সবকটিই আবার অবৈধ। আর এসবের কারণে এলাকায় ইরফান সেলিমের কথাই ছিল শেষ কথা। আর এই কারণে হাজী সেলিমও ছেলের ব্যাপারে হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। শেষের দিকে একেবারে হাল ছেড়ে দিয়েছিলেন বলেও জানা যায়।
এ ঘটনার পরও ইরফান সেলিম কীভাবে কাউন্সিলর হল- সেটা একটি বড় প্রশ্ন। এলাকাবাসী জানায়, তাদের কোন উপায় ছিল না। ইরফান সেলিম এলাকায় এক আতঙ্কের নাম। তাদের মতে, হাজী সেলিমের তাও কিছু গুণ ছিল- সে এলাকার গরীব মানুষদের কিছু সাহায্য সহযোগিতা করত। মানুষের অভাব, অভিযোগ কিছুটা হলেও শুনত। কিন্তু ইরফান সেলিম এসবের ধারেকাছেও নেই। এলাকার মানুষকে মারপিট করা আর সন্ত্রাস করাই ছিল তার কাজ।
আমাদের দেশে এলিট ফোর্স র্যাব এবং নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সরওয়ার আলম মাঝে মাঝে আমাদেরকে জাতীর সচেতনতার জন্য কিছু বখাটে, রাঘববোয়ালদের আইনের আওতায় এনে শাস্তি দিয়ে চমক দিয়ে থাকেন। সোস্যাল মিডিয়া, টকশো, সিনিয়র সিটিজেন এবং দেশপ্রেমিক নাগরিক কিছুটা বিনোদন পেয়ে থাকে। ক্যাসিনো, পাপিয়া, সাহেদ, সাবরিনা, মেজর সিনহা, ওসি প্রদিপ, নৌবাহিনীর অফিসার, ইরফান সেলিম, ফুলমতি ইত্যাদি।
রবিন্দ্রনাথ ঠাকুর বেঁচে থাকলে বাঙ্গালী জাতির জন্য ২য় জুতা আবিষ্কার লিখতেন। তার নাম হতো বাঙ্গালীর মূল্যবোধ ডাকাতদের হাতে বন্দী। দেশের আইন প্রনেতা, উপজেলা চেয়ারম্যান, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, মেয়র ইত্যাদি জনপ্রতিনিধিদের আয়-রোজগার, ছেলে-মেয়ে ও স্ত্রীদের জীবন কাহিনি নিয়মিত পত্রপত্রিকায় আসলে জাতি জানতে পারতো প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে বাংলাদেশ। মূল্যবোধের সূচকে পিছিয়ে আছে বাংলাদেশ। স্বাধীন জাতীর লাগামটা সঠিক পথে আনবে কে।
লেখক : গবেষক ও উন্নয়ন বিশেষজ্ঞ।