মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী মোর্শেদ
জাতীয় পার্টি অভ্যন্তরীন গোলযোগের দলীয় রাজনীতি নিয়ে দেশের জনগন ও সিভিল সোস্াইটি তেমন আলোচনা করত না। কিন্তু গেল কিছুদিন আগে জাতীয় পাটির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের এরশাদ স্ত্রী রৌশন এরশাদকে বিরোধী দলীয় নেতার পদ থেকে হটিয়ে জিএম কাদেরকে বিরোধী দলীয় নেতা করার জন্য প্রেসিডিয়াম সুপারিশ সহ সংসদীয় কমিটির বৈঠকে সর্বস্বম্মত সিদ্ধান্ত গ্রহন করে জাতীয় সংসদের স্পীকার বরাবরে পত্র দিয়েছেন। স্পীকার কার্যালয় তা গ্রহন করে পরিক্ষা নিরিক্ষা করছেন তাই সময় লাগছে গোলাম মোহাম্মদ কাদেরের বিরোধী দলীয় নেতার আসনে বসার জন্য।
জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, হঠাৎ জিএম কাদের কেন বিরোধী দলীয় উপনেতা থেকে বিরোধী নেতা হতে হবে? এ প্রশ্ন যখন ঘুরপাক খাচ্ছিল তখনি জানা গেল সংসদে বিরোধী দলীয় চিফ হুইপ জাতীয় পার্টি সাংসদ মশিউর রহমানকে প্রেসিডিয়ামের পদ সহ সাধারন সদস্য এর পদ থেকে বহিস্কার করা হইয়াছে , এবং রৌশন এরশাদ জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় সম্মেলন ডেকেছেন। সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহবায়ক তিনি নিজে , বুঝতে বাকি রইলনা জাতীয় পার্টির মধ্যে রৌশন এরশাদ ও জিএম কাদের কেন্দ্রীক উপদল কাজ করছে। মশিউর রহমান রাঙ্গা তাকে বহিস্কারের প্রতিবাদে বিভিন্ন ইলেকট্রনিক্স মিড়িয়ায় তার বক্তব্যে তিনি রাগ ডাক না রেখে বলেছেন যে জিএম কাদের বিএন পির পেটে ডুকে গেছে তারা বিএনপির সাথে আতাত করে সরকার হটানোর আন্দোলনে শরীক হচ্ছে অন্যদিকে এরশাদ পুত্র এরিক এরশাদ ও বিদিশাও রাঙ্গার সাথে রৌশনের পক্ষে আছেন। রাঙ্গা কম যান নাই তিনি রৌশনকে বিরোধী নেতার পদ থেকে না সরানোর জন্য স্পিকার বরাবর আর একটি চিঠি দিয়েছেন।
এটা ঠিক মানুষ এখন জাতীয় পাটিকে বিশ্বাস করে না। কেন না ২০১৪ সালের নির্বাচনে জাতীয় পার্টির যে নাটকীয়তা ভোট বর্জন আবার ভোট না করে এমপি হওয়া ট্রেইজারী বেঞ্চ এ বসে বিরোধী দল হওয়ার নজীর গণতান্ত্রিক সমাজে নাই। সে যাকগুলো ভিন্ন কথা, দলে একক কতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে জি,এম কাদের রাঙ্গার মত প্রভাবশালী এমপিকে বহিস্কার করলেন আত্মপক্ষ সর্মথনের সুযোগ না দিয়ে, এটি অবশ্য স্বৈরশাসন থেকে রাজনীতীতে আসা নেতাদের দলে এটি অহরহ ঘটছে। জিএম কাদের রাঙ্গার বিভিন্ন বক্তব্যের ¯পষ্ট করে বলেছেন যে তারা সরকারের গনবিরোধী কর্মকান্ড একদলীয় কতৃত্বীবাদীতার বিরূদ্ধে বিএনপির সাথে প্রয়োজনে জোট বাধতে পারেন। গত ১৭ই সেপ্টেম্বর হিন্দু মহাজোটের সাথে আলোচনায় বলেছেন, ‘জাতীয় পার্টি এখন কোন জোটে নাই, গত নির্বাচনে আওয়ামীলীগের সাথে জাতীয়পার্টির কিছু আসনে র্নিবাচনী সমঝোতা হয়ে ছিল যে কারনে জাতীয় পার্টির সঙ্গে আওয়ামীলীগের একটা বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আছে, ভালো কাজ করলে আমরা আওয়ামীলীগের সাথে থাকতে পারি আর আওয়ামীলীগ যদি গণমানুষের আস্থা হারিয়ে ফেলে তাহলে আমরা ভবিষ্যতে তাদের সাথে না ও থাকতে পারি।
তিনি আরো বলেন, দেশের মানুষ নির্বাচনী ইভিএম চায় না। আমরা শুরু থেকে ইভিএম এর বিরুদ্ধে কারন ইভিএম হচেছ শান্তিপূর্ন কারচুপির মেশিন, ইভিএম এ নির্বাচন হলে যাকে খুশি বিজয়ী করতে পারে, আমরা নির্বাচন র্বজনের ঘোষনা দিই নাই। নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা অত্যান্ত কঠিন, আমরা অবস্থা পর্যাবেক্ষন করে সিদ্ধান্ত নিব। আমার আজকের এই লেখা জিএম কাদেরের এ বক্তব্যকে ঘিরেই।
প্রিয় পাঠক, আপনাদের অনেকেরই মনে আছে এরশাদ তার জীবদ্দশায় তিনি কখনও সিদ্ধান্তে অনড় থাকতে পারতেন না তিনি তার দলে যে কোন সময় যে কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারতেন তিনি কখনও জিয়া উদ্দিন বাবলুকে দলীয় মহাসচিব করতেন আবার কখন রুহুল আমিন হওলাদার কে মহাসচিব করতেন। ক্ষমতায় থাকতে তিনি যেমন এককভাবে দেশ চালাতেন, ক্ষমতা হারিয়ে তার দলে তিনি একক ক্ষমতা সম্পূর্ণ চেয়ারম্যান ছিলেন । তার দলীয় গঠনতন্ত্র তাকে ঐ রকম ক্ষমতাই দিয়েছে। জিএম কাদের রাঙ্গাকে বহিস্কার এর মধ্য দিয়ে ঐ ক্ষমতার একটু চর্চা করলেন। তিনি কৌশলী বক্তব্য দিলেন একদিকে বললেন আওয়ামীলীগ মানুষের আস্থা হারালে তিনি আওয়ামীলীগের সাথে থাকবেন না আবার বললেন তারা ইভিএম এ নির্বাচন চান না এবং শুরুতে তিনি ইভিএম বিরোাধী, অবশ্য নির্বাচন কমিশনে সংলাপে ও তিনি ইভিএম এর বিরোদ্ধে বলেছেন, সা¤প্রতিক জিএম কাদের এর বক্তব্য আর বিএনপি যারা রাজপথে জ্বালানি, দ্রব্যমূল্যে উর্ধ্বগতির বিরুদ্ধে এবং নিরোপেক্ষ সরকারের অধীন সংসদ নির্বাচনের দাবীতে আন্দোলন করে জনতার সাথে একটা সেতুবন্ধন গড়ে তুলেছেন। তারা ও বলছেন তারা ইভিএম এ নির্বাচন চান না। এ জায়গাটাতে জাতীয় পার্টি ষওবিএনপি সহ গনপরিশোধ ও বাম দলগুলোর সাথে একমত হয়েছে। কিন্তু বিএনপি সহ অধিকাংশ বিরোধী দল পরিস্কার বলেছে নির্বাচনকালীন নিরেপেক্ষ সরকার ছাড়া এ সরকারের অধীনে তারা নির্বাচন করবেন না । জিএম কাদেরও বলছেন, দলীয় সরকারের অধীন স্বচ্ছ নির্বাচন সম্ভব নয়। তিনি কিন্তু একটিবারের জন্যও বলেন নি, যে ইভিএম এ কারচুপির ভোট হলে জাতীয় পার্টি নির্বাচন করবেন না অথবা নির্বাচন কালীন নিরেপেক্ষ সরকার ছাড়া তারা নির্বাচন করবেন না। তার এ বক্তব্য দ্বারা তার চাতুর্য্য পূর্ণ কৌশল বুঝতে আর কারো বাকি নাই।
একদিকে তিনি সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনের হুঁশিয়ারী দিয়ে জাতীয়পার্টির বিষয়ে সরকার যেন নাক না গলায় তার ব্যবস্থা করেছেন। এই ফাকে মশিউর রহমান রাঙ্গাকে বহিস্কার করে দলে একক প্রভাব বিস্তার করেছেন। আবার বিএনপি সহ সকল বিরোধী দলকে এই বার্তা দিচেছন যে তারা দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন চান না এবং ইভিএমেও নির্বাচন চান না। বিএনপিও তাদের ব্যপারে অনেক উদার এখন প্রশ্ন হচ্ছে সরকার কেন জিএম কাদেরকে বিরোধী দলীয় নেতা করছেন না ? জাতীয় পার্টি দ্বিখন্ডিত রাখলে সরকার কি লাভবান হবে? আমার ধারনা এতে সরকার ক্ষতিগ্রস্তই হবেন। কেন না নিরপেক্ষ সরকার না হলে বিএনপি সহ অধিকাংশ বিরোধী দল নির্বাচনে আসবেন না। ফলে সরকারের বৈধতা প্রশ্নে আওয়ামীলীগকে প্রতিনিয়ত বেগ পেতে হবে। সরকার যদি কৌশলী জিএম কাদেরকে স্বতন্ত্র রাজনীতি করার সুযোগ দেয় তবে আগামী সংসদ নির্বাচনের যে সময় বাকি আছে ঐ সময়ের মধ্যে জিএম কাদের জাতীয় পার্টিকে বিএনপির দাবীর সাথে শামিল করে, আন্দোলন-সংগ্রাম করে দেশব্যাপি জন আস্থা নিয়ে আগামী নির্বাচনে বিএনপি সহ অধিকাংশ রাজনীতিক দল নির্বাচন বর্জন করলে শক্তিশালী জাতীয় পার্টি বিএনপির বিকল্প বিরোধী দল হিসাবে ৩০০ আসনে প্রার্থী দিয়ে কম বেশি প্রতিধন্ধীতা করে নির্বাচনকে বৈধতা দিবে।
বিএনপিকে মনে রাখতে হবে জাতীয়পার্টিকে দুধকলা দিয়ে পাশে রাখলেও তারা কখনোই বিএনপির সাথে জোট করেবেনা, কেন না ৯১ সনে বিএনপি ক্ষমতায় এলে জাতীয়পার্টিকেই বিএনপি সবচেয়ে বেশি জেলে পুরেছে। এছাড়াও এরশাদ ক্ষমতা থাকাকালীন ৮৬ র্নিবাচনে এরশাদের অধীন আওয়ামীলীগ নির্বাচন করে জাতীয় পার্টিকে বৈধতা দিয়েছিল। তাই আওয়ামীলীগের কাছে জাতীয়পার্টির ঋণ ও দায় রয়েছে। জিএম কাদের মূলতঃ সরকার বিরোধী বক্তব্য দিয়ে ২০২৪ সালের জাতীয় র্নিবাচনের জন্য একধরনের ভাগেইনিই করছে রংপুর আসন ধরে রাখতে এবং জিএম কাদেরও আবার বিরোধীদলীয় নেতা হওয়ার জন্য এবং বিশাল বিজয় নিয়ে আওয়ামীলীগকে নির্বাচনে বৈধতা দেওয়ার জন্য জাতীয়পার্টি লাইন আপ এ আছেন। বিএনপি যদি জাতীয় পার্টি ও সরকারের ফাঁদে পা দেয় তবে কেল্লা ফতে। তাই সরকারের কৌশল হওয়া উচিত জাতীয়পার্টিকে বিরোধী দল হিসাবে কাজ করতে দেওয়া। জাতীয় পার্টি বিকল্প বিরোধী দল হলে আওয়ামীলীগই বেশি লাভবান হবে।
লেখক : আইনজীবী ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক।