নিজস্ব প্রতিনিধি :
সাবেক এলজিআরডি মন্ত্রী তাজুল ইসলামের পাঁচ খলিফার তান্ডবে আওয়ামী লীগের পুরোটা সময় তটস্থ ছিল মন্ত্রনালয়। তাদের একজন মন্ত্রীর সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস) জাহিদ হোসেন। তার গ্রামের বাড়ি ছাগলনাইয়া উপজেলার বল্লভপুর এলাকায়। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বদলি, টেন্ডার বাণিজ্য, নিয়োগে ঘুষ বাণিজ্য, স্থানীয় সরকার পর্যায়ে বিভিন্ন স্থানে অর্থ বরাদ্দ, স্থানীয় সরকারের জনপ্রতিনিধিদের বরখাস্ত কিংবা প্রত্যাহার সবকিছু হতো তাদের ইশারায়। বড় বড় আমলাও ছিলেন তাদের ভয়ে তটস্থ। মন্ত্রী নিয়মিত সচিবালয়ে না গেলেও তারা অফিস করতেন নিয়মিত। মন্ত্রী তাজুল ইসলাম হলেও মন্ত্রণালয় পরিচালনা করতেন এই ‘ছায়া’ মন্ত্রী। অনৈতিক কাজ করে তিনি এখন বিশাল সম্পদের মালিক। তবে গত ৫ আগস্টের পর থেকে আর প্রকাশ্যে দেখা যাচ্ছে না।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনে পটপরিবর্তন হওয়ার পর মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা মুখ খুলতে শুরু করেছেন। তারা বলছেন, এপিএস জাহিদ ছায়ামন্ত্রী হিসেবে নানা অনিয়ম-দুর্নীতি করেছেন। সবকিছু ছিল তার কবজায়। এপিএস ও ভাতিজার সঙ্গে দেখা না করে মন্ত্রীর কাছে গেলে কোনো কাজ হতো না। মন্ত্রী নিজেই জিজ্ঞেস করতেন তাদের সঙ্গে দেখা হয়েছে কি না। এ সুযোগে তারা এখন কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছেন।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি), জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর (ডিপিএইচই), ওয়াসা, সিটি করপোরেশন, জেলা ও উপজেলা পরিষদ, পৌরসভার প্রকল্প গ্রহণ, টেন্ডার ও ঠিকাদার নিয়োগ করতেন ভাতিজা ও এপিএস। একই সঙ্গে এসব সংস্থার কর্মকর্তাদের বদলি, থোক বরাদ্দ গ্রহণ, বিশেষ কর্মসূচি গ্রহণসহ সব কার্যক্রমই মূলত তাদের দুজনের নিয়ন্ত্রণে হতো। এসব প্রকৌশলীর বদলি হতে ৩০ থেকে ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত নিতেন তারা। আর তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী বদলি ও প্রকল্প পরিচালক নিয়োগ ৫০ লাখ থেকে ১ কোটি টাকা রেট ধার্য ছিল। ঢাকার বনশ্রীতে তারে রয়েছে তার হাউজিং ব্যবসা। এসব করে রাতারাতি শতকোটি টাকার মালিক বনে যান তারা। এলাকাবাসীর ধারণা, ৫ আগস্টের আগে জাহিদ ও তারা দুবাইয়ে পালিয়ে গেছেন। দুবাইয়েও রয়েছে তাদের অবৈধ সম্পদ। বিদেশে পালিয়ে থাকায় তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি।
জানা গেছে, সারাদেশে সিন্ডিকেটের পাশাপাশি এপিএস জাহিদ তার নিজ জেলা ফেনীর জন্য গড়ে তোলেন আলাদা সিন্ডিকেট। এই সিন্ডিকেট ফেনী সদর আসনের সাবেক সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন হাজারী সহ জনপ্রতিনিধিদের কাছ থেকে নিয়মিত কমিশন আদায় করতো। তাদের কাছ থেকে মাসোয়ারা জমা নিতেন ছোট ভাই শাখাওয়াত হোসেন কায়সার। এদের সাথে চেয়ারম্যান ও মেয়ররা যোগাযোগ করে কমিশন দিয়ে কাজ ভাগিয়ে নিতেন।
সূত্র আরো জানায়, ফেনী জেলা এলজিইডি অফিসের মাধ্যমে তার ছোট ভাই শাখাওয়াত হোসেন কাউছারকে সুপারভাইজার হিসেবে চাকুরী দেন জাহিদ। শুধু তাই নয়, এপিএস জাহিদ ফেনীর পাশাপাশি চট্টগ্রামেও তার আরেক সিন্ডিকেট গড়ে তোলে। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল মন্ত্রনালয়ের অধিন বিভিন্ন দপ্তরে টেন্ডারবাজি ও বদলির কমিশন আদায় করতেন। এই সিন্ডিকেটে তার প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করেছেন তার ছোট বোন ফারজানা আক্তার এবং ভগ্নিপতি চট্টগ্রাম গণপূর্ত অফিসের উপ-সহকারি প্রকৌশলী মো: নুর নবী। প্রভাব খাটিয়ে ফারজানাকে চট্টগ্রাম মহানগরীর জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অফিসের মনিটরিং অফিসার হিসেবে চাকুরী দেন। ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে ফারজানা নিয়মিত অফিস না করেও বেতন ভাতা গ্রহণ করতেন। ছাগলনাইয়ার বাংলাবাজার এলাকায় গ্রামের বাড়িতে বিশাল বাংলোবাড়ী, মাছের প্রজেক্ট, পশুর খামার, ছাগলনাইয়া পৌরসভা মার্কেটে দোকান, ঢাকায় বাড়ী, ফ্ল্যাট, বনশ্রী ও পূর্বাচলে একাধিক প্লটের পাশাপাশি ভূমি ব্যবসাসহ নামে বেনামে অনেক প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ রয়েছে তার॥ তার নিজের নামে, স্ত্রী, মা, ভাই, বোন, বোন জামাইসহ নিকট আত্মীয়দের নামে ব্যাংক একাউন্টে বিপুল অর্থ জমাসহ দেশ-বিদেশে অনেক সম্পদের মালিক হয়েছেন জাহিদ হোসেন।
এলাকাবাসীর ধারণা, ৫ আগস্টের আগে তারা দুবাইয়ে পালিয়ে গেছেন। দুবাইয়েও রয়েছে তাদের অবৈধ সম্পদ।
এসব বিষয়ে জাহিদ হোসেনের মোবাইল ফোনে একাধিকবার চেষ্টা করেও সংযোগ পাওয়া যায়নি। তার ছোট ভাই শাখাওয়াত হোসেন কায়সার ফেনীর সময় কে জানান, জাহিদের বর্তমান অবস্থান সম্পর্কে তার জানা নেই। এর বেশি তিনি কিছু বলতে অপরাগতা প্রকাশ করেন।