আলী হায়দার মানিক :
ফেনী শহরের ব্যস্ততম সড়ক ট্রাংক রোডের দাউদপুর ব্রীজ সংলগ্ন সড়কের পাশে প্রায় তিনশত বছরের পুরোনো বিরল প্রজাতির গাছ ইতিহাসের নিরব স্বাক্ষী হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে। বিরল প্রজাতির এ গাছটির জাত বা বয়স স্থানীয়রা কেউ-ই জানেন না বলে জানা গেছে। তবে গাছটি ঘিরে রয়েছে নানা ইতিহাস ও ঐহিত্য। গাছের ডালে অতিথি পাখিদের কলকাকলিতে মুখরিত হয়ে ওঠে পুরো এলাকা।
স্থানীয়রা জানায়, দাউদপুর এলাকায় জনগুরুত্বপূর্ণ সড়কের পাশে সুবিশাল প্রাচীন গাছটি প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম দেখে আসছেন। অনেকের মতে গাছের বয়স তিনশত বছর হলেও আসলে গাছটির বয়স নির্ধারণ করা কঠিন। কারণ ফেনীর জনপদ বিভিন্ন নামে প্রায় চার শ’ থেকে সাড়ে চারশ’ বছরের পুরোনো। সুতরাং গাছটির বয়স তিনশত বছরের বেশি হতে পারে। গ্র্যান্ড ট্রাংক রোডটি শেরশাহর আমলে নির্মাণ হয়েছে। তখন সড়কটি গ্র্যান্ড শেরশাহ রোড হিসেবে পরিচিত ছিল। কালের পরিবর্তনে রোডটি ট্রাংক রোড নামে পরিচিত। তখনকার সময়ে সড়কটি ফেনী সদর উপজেলার ফরহাদনগর ইউনিয়ন হয়ে জোরারগঞ্জ গিয়ে যুক্ত হয়। বর্তমানে সড়কটি ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সঙ্গে যুক্ত হয়। প্রতিদিন পথচারীরা গাছটির নিচে গেলে উপরের দিকে তাকিয়ে দেখেন এবং কিছু সময় সেখানে দাঁড়িয়ে থাকেন। প্রচন্ড গরমে স্থানীয়রা ছাড়াও আশপাশের মানুষ এবং পথচারীরা গাছের নিচে দাঁড়িয়ে স্বস্তি নেন। গাছটি আশপাশে রয়েছে টং দোকান ও চা দোকান। সুবিশাল গাছটির নিচে শীতল আবহাওয়ায় হওয়ায় মানুষরা এসে ছায়া পায় একই সঙ্গে চা দোকানগুলোতে মানুষের ভিড় সবসময় দেখা যায়। গাছটি বিশাল এলাকা জুড়ে বিস্তিত। পুরো জেলা জুড়ে আলোচিত এ গাছটি। সড়ক বড় করার জন্য বিভিন্ন সময় বন বিভাগ গাছটি কাটার জন্য এসেও স্থানীয়দের অনুরোধে ইতিহাসের অংশ হিসেবে গাছটি কাটা হয়নি। তবে শুধু ফেনী নয় আশপাশের জেলায়ও এমন পুরোনো গাছ আছে বলে কারো জানা নেই। জেলায় গাছটি জুড়ে সবার মাঝে কৌতুহল বিরাজ করছে। ওই জায়গাটি দাউদপুর বড় গাছ নামে সবার কাছে পরিচিত।
ওই এলাকার বাসিন্দা ফেনী কেন্দ্রীয় বড় জামে মসজিদ পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব মনোয়ার হোসাইন চৌধুরী জানান, পরিবেশ সুরক্ষায় গাছের বিকল্প গাছই। ফেনীর বিরল প্রজাতির গাছটি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা রয়েছে। তবে এ গাছের হায়াত ও ইতিহাস কিছুই জানা নেই। ফেনীর ইতিহাসে গাছটিও ঐতিহ্য বহন করে আছে। পরিবেশ রক্ষায় গাছটি নিধন না করে সংরক্ষণ করা সময়ের দাবী।
জানতে চাইলে স্থানীয় বাসিন্দা আমির হোসেন চৌধুরী মোজাম্মেল জানান, গাছ পরিবেশ রক্ষার একমাত্র হাতিয়ার। গাছের পশ্চিম পাশে আমার পৈত্তিক বাড়ি। গাছটি সম্পর্কে আমারও কৌতুহল রয়েছে। আমার বাবা ও দাদাও গাছটি এমন দেখেছেন। সুতরাং গাছটি জাত ও বয়স কিছুই আমাদের সবার অজানা। গাছটি বাঁচিয়ে রাখতে আমরা সবাই চাই। দেশের বিভিন্ন জায়গায় আমার যাওয়ার সুযোগ হয়েছে এমন গাছ এখন আর কোথাও দেখা যায় না।
স্থানীয় সাংবাদিক মুহাম্মদ মামুনুর রশিদ জানান, বিরল প্রজাতির গাছটি ফেনীর ইতিহাস ও ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে। গাছে অনেক ডাল রয়েছে বজ্রপাত হলেও সেই ডালগুলো ভাঙ্গে না। একসময় গাছের নিচে এসে বসে সাধু সন্যাসীরা আরাধনা করতো। আশির দশকের দিকে একজন মানুষকে গাছের নিচে মেরে ফেলারও অভিযোগ রয়েছে।
ফেনী রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি ও দৈনিক ফেনীর সময় সম্পাদক মোহাম্মদ শাহাদাত হোসেন জানান, ঐতিহাসিক নিদর্শন এ গাছটি সংরক্ষণ করা আবশ্যক। এ গাছ শুধুমাত্র অক্সিজেন দেয় না সঙ্গে অতীতের অনেক ঘটনার স্বাক্ষী হয়ে আছে। অচিন এ বৃক্ষটি রক্ষা করা খুবই জরুরী বলেও তিনি মনে করেন।
সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুলতানা নাসরিন কান্তা জানান, গাছটি সত্যি বিরল প্রকৃতির। এ গাছ সংরক্ষণ করা আমাদের সবার দায়িত্ব। সেই হিসেবে জেলা প্রশাসক মহোদয় গাছ সংরক্ষণে যন্ত্রবান রয়েছেন। বন বিভাগও আন্তরিক রয়েছেন।
ফেনী সামাজিক বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মোহাম্মদ রুহুল আমিন জানান, গাছটি কখনো বন বিভাগ কর্তন করবে না। গাছটি সংরক্ষণে আমরা সচেষ্ট রয়েছি। বিভিন্ন ঔষধ কোম্পানীর লোকজন ফেস্টুন লাগাতে লাগাতে গাছে প্রচুর পেরেগ দৃশ্যমান ছিল। সেগুলো বন বিভাগের কর্মচারীরা তুলে ফেলেন। বিরল প্রজাতির গাছটি সংরক্ষণে জেলা প্রশাসকও আন্তরিক রয়েছেন।
ফেনী জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম জানান, গাছ পরিবেশ সুরক্ষা দেয়। গাছটির সুরক্ষার জন্য পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করা হবে। প্রাচীন গাছগুলো পরিবেশ ছাড়াও ইতিহাস ঐতিহ্যের অংশ। ঐতিহ্যবাহী গাছটি সংরক্ষণে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে উদ্যোগ গ্রহন করা হয়েছে। গাছে যেন কেউ পেরেগ মারতে না পারে সে জন্য গাছের আশপাশে সংরক্ষণ করা হবে। বন বিভাগ ইতিমধ্যে কাজ শুরু করে দিয়েছেন। আমরা হাজার হাজার গাছ লাগাই কিন্তু এ গাছটি ঐতিহ্যবহন করছে। জেলার অন্যান্য জায়গায় মধ্যে ফুলগাজী ও দাগনভূঞায় এমন গাছের সন্ধান পাওয়া গেছে। পুরো জেলায় খবর নেয়া হচ্ছে আরো এমন গাছ পাওয়া গেলে সংরক্ষণ করা হবে বলেও তিনি জানান।