নিজস্ব প্রতিনিধি :
রাতের অন্ধকারে লাগানো ফেস্টুনকে ঘিরে দাগনভূঞা আওয়ামীলীগের রাজনীতিতে হঠাৎ উত্তাপ ছড়িয়ে পড়েছে। বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় উঠে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, গতকাল শনিবার সকাল থেকে দাগনভূঞা পৌর শহরের বিভিন্ন স্থানে বেশ কিছু ফেস্টুন লাগানো হয়। এসব ফেস্টুনের উপর অংশে দাগনভূঞা উপজেলা চেয়ারম্যান দিদারুল কবির রতনের ছবি দিয়ে “দাগনভূঞা উপজেলার সম্মানিত তিন-তিনবারের শ্রেষ্ঠ চেয়ারম্যান ও ফেনী জেলা আওয়ামী যুবলীগের সভাপতি দিদারুল কবির রতনকে ফেনী-৩ (দাগনভূঞা-সোনাগাজী) আসনের এমপি হিসেবে দেখতে চাই।” ফেস্টুনের নিচ অংশে ছোট করে ২০০৮ সালের নির্বাচনে মহাজোট প্রার্থী আবুল বাশারের ছবি দিয়ে লেখা হয়েছে “সৌজন্যে- আবুল বাশার, বায়রা সভাপতি, সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য, আওয়ামী যুবলীগ বাংলাদেশ।” বিষয়টি নজরে আসলে সকাল থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মিশ্র প্রতিক্রিয়া ছড়িয়ে পড়ে।
দলীয় নেতাকর্মীরা জানায়, যুবলীগের সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য আবুল বাশার ২০০৮ সালে এ আসনে দলীয় মনোনয়ন পেয়ে বিএনপি প্রার্থীর কাছে হেরে যান। ২০১৪ সালেও তিনি মনোনয়ন পেয়ে আসনটি জোট শরীক জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দেন। ২০১৮ সালে মনোনয়ন চেয়ে পাননি। এবার তিনি আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে আগেভাগে মাঠে নেমেছেন।
অপরদিকে দাগনভূঞা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা যুবলীগ সভাপতি দিদারুল কবির রতন ২০১৮ সালে দলের মনোনয়ন চেয়ে ব্যর্থ হন। বিগত নির্বাচনের পর থেকেই তাকে পরবর্তী নির্বাচনে এমপি প্রার্থী হতে সমর্থকরা জোর প্রচারণা চালাচ্ছেন। বাশার-দিদার একই উপজেলার বাসিন্দা। দীর্ঘদিন ধরে দুইজনের সমর্থকদের মধ্যে একধরনের স্নায়ু যুদ্ধ চলে আসছে। এর আগেও আবুল বাশারের পোস্টার, ব্যানার ও বিলবোর্ড নষ্ট করা হয়। শনিবার সকালে দাগনভূঞায় উপরোক্ত ফেস্টুনটি দেখে দুইজনের সমর্থকরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পরস্পরকে দোষারোপ করেন।
দাগনভূঞা উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি নুরুল আবছার তার ফেসবুকে লিখেছেন, “একজন আদর্শবান নেতা আদর্শবান কর্মী তৈরি করে। দাগনভূঞায় গত এক যুগে আদর্শহীন রাজনৈতিক চর্চার প্রতিফলন এই ফেস্টুন। এখানে গত এক যুগে রাজনৈতিক কর্মী তৈরি নয়, রাজনৈতিক কুলাংগার তৈরি হয়েছে। ধিক্কার জানাই ওইসব চোর-কুলাংগারদের।”
রাজাপুর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ সভাপতি মোহাম্মদ শাহাজাহান লিখেছেন, “বাশার ভাইয়ের ছবি দিয়ে কাউকে এমপি চাওয়া কোন রাজনৈতিক আচরণ ? দাগনভূঞা-সোনাগাজীর মানুষের কাছে বিচার চাইতেছি। ইজ্জতের মালিক আল্লাহ। এ ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি।”
সোনাগাজীর আমিরাবাদ ইউনিয়ন যুবলীগ সাদারণ সম্পাদক আইয়ুব নবী ফরহাদ লিখেছেন, “দিদারুল কবীর রতন ভাই এই নোংরা রাজনীতি পছন্দ করেন না। দিদার ভাই তৃনমূল থেকে উঠে এসেছেন তার কাছে প্রত্যেক নেতা-কর্মীর সম্মান সবার উপরে। দিদারুল কবির রতন ভাইয়ের জননপ্রিয়তায় ঈষ্বান্বিত হয়ে একটি কূচক্রিমহল তার বিরুদ্ধে এই ষডযন্ত্র করেছে। আমিরাবাদ ইউনিয়ন যুবলীগ এর পক্ষ থেকে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।”
উপজেলা ছাত্রলীগ সভাপতি সামছুদ্দীন মামুন লিখেছেন, “প্রিয়নেতা জনাব দিদারুল কবীর রতন মহোদয়ের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ও ভাবমূর্তি বিনষ্টের অপচেষ্টার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। যে বা যারাই করুন ফেষ্টুন গুলো সরিয়ে ফেলার জন্য বিনীত অনুরোধ করছি।”
এ প্রসঙ্গে আবুল বাশার বলেন, “আমার নাম ও ছবি ব্যবহার করে লুটেরার দল সমাজে তাদের গ্রহনযোগ্যতা প্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছে। কিন্তু সচেতন নাগরিক সমাজ ও সাধারণ মানুষ তাদের এই জঘন্যতম কাজকে ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছে। তারা অতিতেও এসব অপকর্ম করেছে। তাদের এসব অপকর্মের কারনে তারা জনগন থেকে দূরে সরে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত।”
তিনি বলেন, “তারাতো লুট করে নিয়ে যাচ্ছে, জনগনকে কি দিচ্ছে ? তারা এসেছে নেয়ার জন্য, দিবে কিভাবে ? আর অন্য কেউ জনগনকে কিছু দিতে চাইলে তারা ষড়যন্ত্র করতে থাকে। তাদের কোন ষড়যন্ত্রই সফল হবেনা।” ভবিষ্যতে এসব ষড়যন্ত্রের সমুচিত জবাব দেয়া হবে বলে তিনি জানান।
এ প্রসঙ্গে দিদারুল কবির রতন বলেন, “আমার জনপ্রিয়তায় ঈষার্নিত হয়ে একটি কুচক্রিমহল এরকম একটি জঘন্যতম কাজ করেছে। আমি মনে করি আমার সুনাম ক্ষুন্ন করার জন্য ষড়যন্ত্রকারীরা এ ফেস্টুনটি ছড়িয়েছে। যারা এ কাজটি করেছে দাগনভূঞা-সোনাগাজীতে তাদের সাংগঠনিক ভিত্তি কতটুকু এটা সর্বমহল অবগত আছেন। জনগনের কাছে তাদের কোন গ্রহনযোগ্যতা না থাকায় তারা আমার ছবি ব্যবহার করে জনগনের আস্থা অর্জন করতে চায়। তাদের এসব দিবাস্বপ্ন কখনো সফল হবেনা। এ আসনের জনগন তাদের অতিতেও প্রত্যাখান করেছে, ভবিষ্যতেও করবে।”
তিনি আরো বলেন, “এ আসনের জনগন অনেক সচেতন তারা জানে সারাবছর তাদের পাশে কে থাকে আর কে ভোটের মৌসুমে আসে। তাছাড়া মনোনয়ন দেয়ার একমাত্র মালিক আমাদের মাননীয় নেত্রী জাতির জনকের কণ্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মনোনয়ন যাকে দিবেন আমরা আওয়ামী পরিবার তার পক্ষে কাজ করবো। এবং ভোটের মালিক জনগন, জনগনই তাদের ভবিষ্যত এমপি কে হবে তা নির্বাচিত করবে। তাই আমি বলবো আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র না করে জনগনের কাছে যান।”