দৈনিক ফেনীর সময়

ধনী ও গরিব

ধনী ও গরিব

ধনী ও গরীব মানুষের দু’টি অবস্থার নাম। আল্লাহ তা’য়ালা কাউকে ধনী আবার কাউকে গরীব করেছেন। তা আল্লাহ তায়ালার ইচ্ছাধীন বিষয়। ধনী-গরীবের এ পার্থক্য প্রজ্ঞাময় বিশ^ স্রষ্টার কুদরতের এক মহা নিদর্শন।

ধনী ও গরিবের মধ্যে কে উত্তম : ধনী ও গরিবের মধ্যে কে উত্তম এ বিষয়টি নিয়ে মনিষীদের মধ্যে মতভেদ করেছে। কতিপয় মনিষী বলেন- ধনী গরিবের চেয়ে উত্তম।

তারা নিজেদের দাবীর স্বপক্ষে নিম্নবর্ণিত দলিল পেশ করেন- ১. আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন- তিনি কি আপনাকে নি:স্ব অবস্থায় পাননি, অত:পর তিনি আপনাকে অমুখাপেক্ষী করে দিয়েছেন (আদ দোহা- ৮)। আল্লাহ তায়ালা ধনী করে নবীর প্রতি অনুগ্রহ করেছেন। যেমনিভাবে হেদায়াত দান করে অনুগ্রহ করেছেন। যদি দারিদ্রতা ধনাঢ্যতা থেকে উত্তম হতো, তাহলে অনুগ্রহের কোন প্রয়োজন হতো না। তা’ছাড়া সমস্ত নবী-রাসূল ধনী ছিলেন। যেমন- দাউদ আ. হযরত সুলায়মান আ., হযরত ইউসুফ আ., হযরত ইবরাহীম আ. হযরত মুসা হযরত শুয়াইব আ.। অনুরূপ সাহাবীগণ ছিলেন ধণী। আবদুর রহমান ইবনে আউফের ধর্নাঢ্যতার কথা সর্বজন স¦ীকৃত। অনুরূপ মহানবী সা. থেকে বর্ণিত আছে, দারিদ্রতা কুফুরীর নিকটবর্তী। ধর্নাঢ্যতা দু’টি দাসত্বকে একত্রিত করে।

১) আত্মার দাসত্ব, ২) সম্পদের দাসত্ব। সুতরাং ধনাঢ্যতা দারিদ্রতা থেকে উত্তম। মহানবী সা. থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেছেন উত্তম সম্পদশালী ব্যক্তির মাল কতই না উত্তম। অধিকাংশ মনিষী বলেন- ধৈর্যশীল দরিদ্র ব্যক্তি কৃতজ্ঞশীল ধনী ব্যক্তি থেকে উত্তম। এ কথাটি ফকীহ আবুল লাইস র. গ্রহণ করেছেন। মনীষীগণ এ মত
পোষণ করেছেন যে, ধৈর্যশীল দরিদ্র ব্যক্তি অপচয়কারী ও কৃপণ ধনী ব্যক্তি থেকে উত্তম।

তারা নিজেদের দাবীর স্বপক্ষে নিম্নবর্ণিত দলিল সমূহ পেশ করেন- ১. আল্লাহর বাণী- আশ্চর্য! এ মানুষটিই (এক সময়ে) বিদ্রোহে মেতে উঠে; কেননা, সে নিজেকে স্বয়ং সম্পূর্ণ মনে করেছে (আল-আলাক- ৬, ৭)।

২. মহানবী সা. বলেছেন- আমার নিকট পৃথিবীর ধন ভান্ডার উপস্থাপন করা হয়েছিল। আমি তা গ্রহণ করিনি। আমি বলেছি আমি একদিন উপাস থাকবো, আরেক দিন তৃপ্তভরে খাবো (তিরমিযী- ৪/১৬৮)। অনুরূপ মহানবী স. থেকে বর্ণিত আছে- তা’ছাড়া নবীগন ছিলেন দরিদ্র।

যেমন- যাকারিয়া আ., ইয়াহিয়া আ., ঈসা আ. খিজির আ. ইলিয়াস আ., প্রমূখ এবং অনেক মানুষই দরিদ্র। বর্ণিত আছে যে, এক দিনে ৪০ জন নবী দুর্ভিক্ষে ও ক্ষুধায় মৃত্যুবরণ করেছেন। কা’বা শরীফের চতুষ্পার্শে ৩০০ জন নবীর কবর রয়েছ এবং রুকনে ইয়ামানী ও রুকনে আসওয়াদের মাঝে ৭০ জন নবীর কবর রয়েছে যারা ক্ষুধায় মৃত্যুবরণ করেছেন।

আমাদের প্রিয় নবী সা. দারিদ্রতা ও জিহাদকে গ্রহণ করেছেন। রাসূল সা. ইরশাদ করেন প্রত্যেক নবীরই পেশা ছিল। আমার পেশা হলো দু’টি। একটি দারিদ্রতা অপরটি জিহাদ করা। যে ব্যক্তি দুনিয়াতে এ দু’টি গ্রহণ করবে, সে যেন আমাকে ভালবাসলো। আর যে ব্যক্তি এ দু’টিকে ঘৃণা করলো সে যেন আমাকে ঘৃণা করলো। অপর হাদীসে বলেছে- অর্থাৎ ধনাঢ্যতা হলো পার্থিব সুখ-শান্তি, পরকালের কষ্ট, আর দারিদ্রতা হলো পার্থিব কষ্ট, কিš‘ পরকালের শান্তি ও সুখ। অপর হাদীসে রয়েছে- দরিদ্রতা ধনীদের চেয়ে পাঁচশত বছর পূর্বে জান্নাতে প্রবেশ করবে। সুতরাং প্রমানিত হলো যে, দারিদ্রতাই উত্তম।

যারা ধর্নাঢ্যতা উত্তম বলেন- তাদের উত্তর হলো- আল্লাহর বাণী- আর তিনি আপনাকে নিঃস্ব পেয়েছেন অত:পর স্বাবলম্বি করেছেন (দোহা-৮)। আয়াতের অর্থ হলো আপনাকে তুষ্ট করার দ্বারা স্বাবলম্বি করেছেন। কেননা আত্মতুষ্টিই বড় তুষ্টি, সম্পদে ধনাঢ্যতা প্রকৃত তুষ্টি নয়। ৩. আপনাকে জ্ঞানের দ্বারা ধনী করেছেন। নবীরা ধনী ছিলেন এর উত্তর হলো তারা হৃদয়ের দ্বারা ধনী ও সাবলম্বি ছিলেন। পার্থিব সম্পদের প্রতি তারা ভ্রুক্ষেপ করতেন না। দুনিয়া ছিল তাদের হাতের মুঠোয় কিন্তু তারা তা গ্রহণ করেননি। নিজের সমস্ত অর্জিত সম্পদ তারা খরচ করতেন। হাদীস শরীফে রয়েছে- দুনিয়া অভিশপ্ত এবং দুনিয়াতে যা আছে তাও অভিশপ্ত, জ্ঞানী এবং শিক্ষার্থী ছাড়া। যদি প্রশ্ন করা হয় যে, দারিদ্রতা কুফরীর নিকটবর্তী, তার উত্তরে বলা হবে এখানে অধৈয্য হওয়া উদ্দেশ্য, মাল শূন্য তথা বিদ্রতা হওয়া উদ্দেশ্য নয়।

ধর্নাঢ্যতা ও দারিদ্রতা আল্লাহ তায়ালার কুদরতের মহা নিদর্শণ। আল্লাহ তায়ালা কাউকে ধন দেন, কাউকে জ্ঞান দেন। কাউকে দরিদ্র করেন, কাউকে মেধা শূন্য করেন। সবই আল্লাহ তায়ালার ইচ্ছাধীন ব্যাপার। পৃথিবীর সকল মানুষ এক রকম হলে পৃথিবী চলতো না। মানব জাতির মধ্যে এসব তারতম্য করার মধ্যে রয়েছে স্রষ্টার সুগভীর কৌশল ও প্রজ্ঞা।

লেখক : বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: কন্টেন্ট সুরক্ষিত!!