মানুষ সদা লাভের চিন্তায় মগ্ন। চাই ইহলৌকিক লাভ হোক বা পারলৌকিক লাভ হোক। মুমিন উভয় জাহানের লাভের প্রত্যাশী হয়। আল্লাহ তায়ালা দোয়া শিখিয়ে দিয়েছেন- হে আমাদের প্রভু! আমাদেরকে দুনিয়ার শান্তি এবং আখিরাতের শান্তি দান করুন। আর জাহান্নামের আযাব থেকে রক্ষা করুন (সুরা বাকারা- ২০১)। পার্থিব সম্পদ বৃদ্ধির অন্যতম মাধ্যম হলো ব্যবসা। তবে পারলৌকিক ব্যবসার লাভ অনেক বেশি, যাতে রয়েছে চির শান্তি ও চির মুক্তি। আল্লাহ তা’য়ালা মু’মিনদেরকে লক্ষ্য করে বলেছেন- হে মুমিনগণ! আমি কি তোমাদেরকে এমন এক ব্যবসার কথা বলবো, যা তোমাদেরকে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি থেকে মুক্তি দিবে? (সূরা আসসফ-১০)। প্রত্যেক ব্যবসার জন্য পুঁজি শর্ত। এ ব্যবসার পুঁজি প্রসঙ্গে আল্লাহ তা’য়ালা বলেন, এ ব্যবসার পুঁজি হলো- তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি বিশ্বাস ¯’াপন করবে এবং তোমাদের জান ও মাল দিয়ে আল্লাহর পথে জিহাদ করবে (সূরা আসসফ-১১)। অর্থাৎ পরকালের ব্যবসার পুঁজি হলো দু’টি। একটি ঈমান অপরটি জিহাদ। মু’মিনের জন্য শেষোক্ত কাজটি করা অপরবিহার্য। কেননা ঈমানের সাথে জিহাদ উৎপ্রোতভাবে জড়িত।
জিহাদ ছাড়া শুধু ঈমান দ্বারা জাহান্নামের আযাব থেকে বাঁচা যাবে না। পৃথিবীর বুকে আল্লাহর বিধান বাস্তবায়িত করতে হলে জিহাদ অপরিহার্য, যার থেকে দুরে থাকার কোন সুযোগ নেই। আল্লাহ তা’য়ালা বলেছেন- আল্লাহ
তা’য়ালা জান্নাতের বিনিময়ে মুমিনদের জান এবং মাল ক্রয় করে নিয়েছেন (সূরা তাওবা-১১১)।
ক্রেতাÑবিক্রেতা : ক্রয় বিক্রয়ের জন্য ক্রেতা ও বিক্রেতা দরকার। এ ব্যবসায় বিক্রেতা হলো- বান্দাহ আর ক্রেতা হলেন- আল্লাহ তা’য়ালা। বান্দাহ নিজের জান ও মাল আল্লাহর কাছে বিক্রয় করে দিয়েছে। আর আল্লাহ তায়ালা জান্নাতের বিনিময়ে তা ক্রয় করে নিয়েছেন।
ব্যবসার কাজ : এ ব্যবসার কাজ প্রসঙ্গে আল্লাহ তা’য়ালা বলেন- তারা (মুমিনেরা) আল্লাহর রাহে যুদ্ধ করে অত:পর মারে ও মরে (সূরা তাওবা-১১)। আল্লাহ তা’য়ালা আরো ইরশাদ করেন- বলুন! যদি তোমাদের নিকট তোমাদের পিতা, তোমাদের সন্তান, তোমাদের ভাই, তোমাদের পত্নী, তোমাদের গোত্র, তোমাদের অর্জিত ধন-সম্পদ, তোমাদের ব্যবসা যা বন্ধ হয়ে যাওয়ার ভয় কর এবং তোমাদের বাসস্থান যাকে তোমরা পছন্দ কর- আল্লাহ, তাঁর রাসূল ও তাঁর রাহে জেহাদ করা থেকে অধিক প্রিয় হয়, তবে আল্লাহর বধান (শাস্তি) আসা পর্যন্ত অপেক্ষা কর। আর আল্লাহ ফাসেক সম্প্রদায়কে হেদায়েত দান করেন না সূরা তাওবা-২৪)। আরো ইরশাদ করেনÑ আর আল্লাহ তাদেরকে ভালবাসেন, যারা তাঁর পথে সারিবদ্ধ ভাবে লড়াই করে, যেন তারা সীসাঢালা প্রাচীর (সূরা আসসফ-৪)।
আরো ইরশাদ করেনÑ আর তোমরা সমবেতভাবে মুশরিকদের সাথে যুদ্ধ কর, যেমন- তারাও তোমাদের সাথে সমবেতভাবে যুদ্ধ করে। আর মনে রেখো, আল্লাহ মুত্তাকীদের সাথে আছেন (সূরা তাওবা-৩৬)। অন্যত্র ইরশাদ করেনÑ হে নবী! আপনি মু’মিনদেরকে জিহাদের জন্য উৎসাহিত করুন। তোমাদের মধ্যে যদি বিশজন দৃঢ়বান ব্যক্তি থাকে, তবে দু’শর মোকাবেলা জয়ী হবে। আর যদি তোমাদের মধ্যে একশ’ লোক থাকে, তবে হাজার কাফেরের উপর জয়ী হবে। কারণ তারা জ্ঞানহীন (সূরা আনফাল-৬৫)।
এ ব্যবসার লাভ : এ ব্যবসার লাভ প্রসঙ্গে আল্লাহ তা’য়ালা ইরশাদ করেন- (এ ব্যবসা করলে) তিনি তোমাদের গুনাহ সমূহ ক্ষমা করবেন এবং এমন জান্নাতে দাখিল করবেন, যার পাদদেশে নদী প্রবাহিত এবং বসবাসের জান্নাতে থাকবে উত্তম বাসগৃহ। এটা মহা সাফল্য এবং আরো একটি অনুগ্রহ প্রদান করবেন, যা তোমরা পছন্দ কর। তা’হলো আল্লাহর পক্ষ হতে সাহায্য এবং আসন্ন বিজয়। (হে হাবীব!) মুমিনদেরকে এর সুসংবাদ দান করুন (সূরা আস সফ-১২, ১৩)। আরো ইরশাদ করেন- আর যারা আল্লাহর রাহে নিহত হয়, তাদেরকে তুমি কখনো মৃত মনে করো না; বরং তারা নিজেদের পালনকর্তার নিকট জীবিত ও জীবিকাপ্রাপ্ত (সূরা আলে ইমরান- ১৬৯)।
অন্যত্র ইরশাদ করেন- আর যারা আল্লাহর রাস্তায় নিহত হয়, তাদের মৃত বলো না। বরং তারা জীবিত, কিন্তু তোমরা তা বুঝ না (সূরা আল বাকারা-১৫৪)। আকাবার বাইয়াতের রাত্রে রাসূলূল্লাহ সা. ও আব্দুল্লাহ ইবনে রাওয়াহা রা. এর মধ্যে এ ধরনের ব্যবসার লেনদেন হয়েছিল। তিনি মহানবী সা. কে বলেছিলেনÑ আপনার রবের জন্য এবং আপনার জন্য আপনি যা পছন্দ করেন তার জন্য আমি নিজেকে পেশ করছি। তখন রাসুল সা. বলেনÑ আমি আমার রবের জন্য এই শর্তে তোমার দান গ্রহণ করছি যে তোমরা একমাত্র তাঁর পূর্ণাঙ্গ নিঃশর্ত আনুগত্য করবে এবং তাঁর সাথে কাউকে শরীক করবে না। আর আমি আমার নিজের জন্য তোমার দানকে এই শর্তে গ্রহণ করছি যে, তোমরা সেসব বিষয় থেকে বিরত থাকবে যা তোমাদের নিজের জন্য এবং তোমাদের সম্পদের জন্য খারাপ মনে কর।
আব্দুল্লাহ বলেন- যদি আমরা এসব কিছু করতে থাকি তাহলে কি ফল পাবো? রাসুল সা. বলেন, জান্নাত পাবে। সাহাবায়ে কিরাম বললেন, আচ্ছা ঠিক আছে- চমৎকার এ ব্যবসায়ের লাভ। আমরা এর থেকে কমও দেব না এবং কমও নেব না। (তাফসির ফি-যিলালিল কুরআন)।
লেখক : বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ।