দৈনিক ফেনীর সময়

নুসরাত হত্যা : বনজ কুমার সহ ৭ পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলার আবেদন

নুসরাত হত্যা : বনজ কুমার সহ ৭ পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলার আবেদন

নিজস্ব প্রতিনিধি :

আলোচিত সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের পুলিশি হেফাজতে নির্যাতন করে টাকা ও স্বীকারোক্তি আদায়ের অভিযোগে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) সাত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আদালতে মামলার আবেদন করেছেন দন্ডপ্রাপ্ত ইমরান হোসেন মামুনের মা নুর নহার।

মামলায় অভিযুক্তরা হলেন- পিবিআই সাবেক ডিআইজি বনজ কুমার, পুলিশ সুপার মাঈন উদ্দিন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইকবাল হোসেন, ওসি শাহআলম, পিবিআই উপ পরিদর্শক সন্তোষ চাকমা, রতেপ চন্দ্র দাস ও লুৎফর রহমান।

বুধবার দুপুরে সোনাগাজী আমলী আদালতের সিনিয়র জুড়িসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ফারহানা লোকমানের কাছে অভিযোগ দায়ের করা হয়। একইদিন বিকেলে নুসরাত হত্যা মামলার পুন:তদন্ত চেয়ে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে স্মারকলিপি প্রদান করেন মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের পরিবারের সদস্যরা।

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ফেনীর আলোচিত নুসরাত হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ১৬ আসামিকে মামলায় অব্যাহতি দেওয়ার আশ্বাসে আসামিদের পরিবার ও স্বজন থেকে বিভিন্ন ধাপে মোট ৭৭ লাখ টাকাসহ নানা সুযোগ সুবিধা গ্রহণ করে পিবিআই কর্মকর্তারা। কিন্তু তারপরও অভিযুক্তরা আসামিদের নির্যাতন করে স্বীকারোক্তিমূলক জবাবন্দি গ্রহণ করে। আসামিদের আদালতে সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদন্ড রায় প্রদান করা হয়। সেই ঘটনার কথা উল্লেখ করে মামলার সাক্ষী পিবিআই উপ পরিদর্শক জাহাঙ্গীর আলম বাবলু গত ১২ আগস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক আইডিতে নুসরাত জাহান রাফির হত্যা মামলার ঘটনাটি পুনরায় তদন্তের প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করে একটি পোস্ট দেন। সেই পোস্টটি আসামিদের স্বজনদের নজরে আসলে অভিযুক্ত সাত পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নুসরাত হত্যা মামলার ১৩ নং আসামি ইমরান হোসেন মামুনের মা নুর নহার বাদী হয়ে আদালতে মামলা দায়ের করেন। আদালতের আদেশের অপেক্ষায় রয়েছে বাদী।

প্রসঙ্গত; গত ২০ জুলাই মামলার প্রধান অভিযুক্ত বনজ কুমার অবসরে যান। অপর অভিযুক্তরা পিবিআইয়ের বিভিন্ন ইউনিটে কর্মরত রয়েছেন। ২০১৯ সালের ২৭ মার্চ সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল (ডিগ্রি) মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলা নিজ কক্ষে ডেকে নিয়ে নুসরাতের শ্লীলতাহানি করেন। এ ঘটনায় তার মা শিরিনা আক্তার বাদী হয়ে সোনাগাজী থানায় মামলা করলে অধ্যক্ষকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। মামলা তুলে না নেয়ায় ৬ এপ্রিল মাদ্রাসার প্রশাসনিক ভবনের ছাদে ডেকে নিয়ে নুসরাতের হাত-পা বেঁধে গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন লাগিয়ে দেয় বোরকা পরা পাঁচ দুর্বৃত্ত। এতে তার শরীরের ৮৫ শতাংশ পুড়ে যায়। ১০ এপ্রিল ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় অগ্নিদগ্ধ নুসরাতের মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় নুসরাতের বড় ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান সোনাগাজী মডেল থানায় মামলা করেন। পরে মামলাটি হত্যা মামলায় রূপান্তরিত হয়। ওই বছরের ২৮ মে পিবিআই তদন্ত শেষে মাদ্রাসার অধ্যক্ষসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে আদালতে ৮৬৯ পৃষ্ঠার অভিযোগপত্র দাখিল করেন। মাত্র ৬১ কার্যদিবসে মামলার কার্যক্রম শেষ হয়। একই বছরের ২৪ অক্টোবর রায়ে ১৬ আসামিকে মৃত্যুদণ্ড দেন ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মামুনুর রশিদ। পাশাপাশি প্রত্যেক আসামিকে এক লাখ টাকা করে জরিমানা করা হয়।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: কন্টেন্ট সুরক্ষিত!!