নিজস্ব প্রতিনিধি :
গত তিনদিনের অবিরাম ভারী বর্ষণ ও ভারতের উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলের পানির চাপে পরশুরাম ও ফুলগাজীতে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। মঙ্গলবার রাত থেকে নতুন করে ছাগলনাইয়া উপজেলার অনেক এলাকা বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে। পরশুরাম, ফুলগাজী ও ছাগলনাইয়া উপজেলার হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। গ্রামীণ সব সড়ক, ফসলি মাঠ এখনো পানিতে তলিয়ে আছে। ভেসে গেছে পুকুর ও খামারের মাছ।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভারী বর্ষণ ও ভারত থেকে আসা পাহাড়ি ঢলের পানিতে মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর পানি বিপৎসীমার অনেক ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। নদীর পানি উপচে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ঘটিয়েছে বলে স্থানীয়রা বলছেন। পরশুরামে বন্যার পানিতে ভেসে গিয়ে একজন নিখোঁজ হয়েছে। ফেনী-পরশুরাম আঞ্চলিক সড়কে সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। কয়েকটি ডিঙি নৌকায় লোকজনকে উদ্ধার করে আশ্রয়কেন্দ্রে নেওয়া হলেও বেশির ভাগ মানুষ এখনো পানিবন্দী। দুর্গতদের উদ্ধারে ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধারকর্মীরাও কাজ করছেন।
পরশুরাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আফরোজা হাবিব শাপলা জানান, উপজেলায় বর্তমানে পানি বিপৎসীমার ৮৬ সেন্টিমিটার উপরে প্রবাহিত হচ্ছে। পৌরসভা ও ৩টি ইউনিয়নের ৪৩ টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। প্রায় ১৪ হাজার ৭শ পরিবার পানিবন্দী রয়েছে। ২ হাজার ৪শ ৬০ জনকে নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ৫শ পরিবারকে শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে।
ফুলগাজী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তানিয়া ভূঁইয়া জানান, ফুলগাজী উপজেলাতে বর্তমানে পানি বিপৎসীমার ৮৬ সেন্টিমিটার উপরে প্রবাহিত হচ্ছে। উপজেলার ৬টি ইউনিয়নের ৫৩টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। ৪ হাজার ৮শ পরিবার পানিবন্দী রয়েছে। ৩শ জনকে উদ্ধার করে নিরাপদ আশ্রয়ে নেয়া হয়েছে। ৫শ প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে।
ছাগলনাইয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম কমল জানান, উপজেলার ৫টি ইউনিয়নের ১৫টি গ্রাম প্লাবিত হয়ে প্রায় ৪শ পরিবার পানিবন্দী রয়েছে। ২৫০ পরিবারকে শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে।
এদিকে বন্যার পাশাপাশি দুর্গত এলাকায় গতকাল রাত থেকেই বিদ্যুৎ নেই। অনেক ঘরে রান্না করাও সম্ভব হচ্ছে না। অনেকে বাড়ির ছাদে আশ্রয় নিয়েছেন।
জেলা প্রশাসক মুছাম্মৎ শাহীনা আক্তার বলেন, বন্যা পরিস্থিতির ওপর সার্বক্ষণিক নজর রাখা হচ্ছে। স্থানীয় প্রশাসন কাজ করছে। পানিবন্দী মানুষকে উদ্ধারে স্থানীয় কিছু স্বেচ্ছাসেবীও কাজ করছেন। প্রয়োজনের তুলনায় সেটা খুব সামান্য।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মো: আবুল কাশেম জানান, টানা বর্ষণ আর ভারতীয় পাহাড়ি ঢলে মুহুরী-কহুয়া-সিলোনীয়া নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ২৭টি ভাঙা অংশ দিয়ে হু-হু করে পানি ঢুকছে লোকালয়ে। গত বন্যায় ভেঙ্গে যাওয়া ২৬টি আর নতুন করে আরও একটি বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় বন্যা পরিস্থিতি অবনতি হয়েছে।