দৈনিক ফেনীর সময়

‘পুলিশের দায়িত্ব নিরাপদ সমাজ ব্যবস্থা করা’

‘পুলিশের দায়িত্ব নিরাপদ সমাজ ব্যবস্থা করা’

আলী হায়দার মানিক :

ফেনী শহর ব্যবসায়ী সমিতির সাথে মতবিনিময়কালে পুলিশ সুপার জাকির হাসান বলেছেন, ফেনী শহরে রাতে টহল পুলিশ বাড়ানো হবে। নিরাপদে যেন ব্যবসায়ীরা ব্যবসা করতে পারেন সেজন্য পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে সবসময় সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে। যানজট নিয়ে আমরা কাজ করতে গিয়ে দেখেছি ফেনীতে যেসব মার্কেট রয়েছে কোথাও কোন পার্কিং নেই। যে রাস্তায় দুইদিকে গাড়ি চলে আমরা যদি একদিক বন্ধ করে আরেকদিক চালু করি তাহলে কিন্তু যানজট হবেই। আমরা যখন এক রাস্তা বন্ধ করে আরেক রাস্তা চালু করি তাহলে এক লাইনে গাড়ি চলে। সেই কারনেও অনেক সময় যানজট হয়। মার্কেটগুলো কিন্তু রাস্তা কেন্দ্রিক। কোন রেস্টুরেন্টে পার্কিং নেই।

তিনি আরো বলেন, সেন্ট্রাল হাই স্কুল ও মডেল হাই স্কুল কেন্দ্রিক প্রায় শতাধিক সিএনজি দাঁড়িয়ে থাকে। এসব সিএনজিগুলোর জন্য আলাদা জায়গা প্রয়োজন। আপনার একটি গাড়ি রয়েছে আপনি একজনকে নামিয়ে আরেকজনকে উঠার জন্য ৪-৫ মিনিট সময় লাগে। সেই সময় কিন্তু যানজটের সৃষ্টি হয়। যানজট নিরসনে আমরা সবাই সবার অবস্থান থেকে কাজ করতে হবে। পুলিশের দায়িত্ব হচ্ছে একটি নিরাপদ সমাজ ব্যবস্থা করা। আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি। আমরা বলছি না যে শতভাগ অপরাধ মুক্ত করবো। কিন্তু আমরা চেষ্টা করে যাবো।

শনিবার বেলা ১১টার দিকে পুলিশ সুপার কনফারেন্স হলে ফেনী শহর ব্যবসায়ী সমিতির নেতৃবৃন্দের সাথে মতবিনিময়কালে তিনি এসব কথা বলেন।

পুলিশ সুপার আরো বলেন, কিশোর গ্যাং নিয়ে আমরা জিরো টলারেন্স কাজ করছি। এ বিষয়ে ইতোমধ্যে এমপি সাহেব ও মেয়রের সাথে মতবিনিময় হয়েছে। আমরা কিশোর গ্যাং বিষয়ে কথা বলেছি উনারা কিশোর গ্যাং দমনে সহযোগীতার আশ্বাস দিয়েছেন। আমরা সবাইকে নিয়ে কাজ করতে চাই। দূর্গাপূজা নিয়ে আমরা এবার খুব বেশী সতর্ক রয়েছি। প্রত্যেক উপজেলা কেন্দ্রিক আমরা আলাদা আলাদা পূজা মন্ডপ কমিটির সাথে কাজ শুরু করে দিয়েছি। জেলা প্রশাসক মহোদয় এক মাস আগে মিটিং করেছেন। আজান ও নামাজের সময় যেন সাউন্ড বন্ধ রাখা হয় সেই ব্যাপারে ইতোমধ্যে আমরা মন্ডপ কেন্দ্রিক সচেতনতা সৃষ্টি করা শুরু করে দিয়েছি।

জাকির হাসান আরো বলেন, ব্যবসায়ীরা সিসি টিভি ক্যামেরার ব্যাপারে সতর্ক থাকবেন। সবাই অবশ্যই সিসি টিভি ক্যামেরা ব্যবস্থা রাখবেন। সিসি টিভি ক্যামেরায় যেন রেকর্ড থাকে সেই বিষয়েও সকর্ত থাকবেন। টাকা বহনে সতর্ক হবেন। আপনি যদি গোস্ত নিয়ে কুকুরের সামনে ঘুরে তাহলে কিন্তু কুকুর গোস্ত কামড় দেয়ার চেষ্টা করবে। সুতরাং আপনারা সতর্ক থাকতে হবে। যে কোন সমস্যা হলে আমাদেরকে জানাবেন। চুরি, ডাকাতি যাই হোক সাথে সাথে জানাবেন। ঘটনা ঘটার সাথে সাথে ব্যবস্থা নেয়া হলে পরবর্তীতে ঘটনা আর ঘটে না। আমরা আমাদের পক্ষ থেকে আন্তরিক আছি। সেবার জন্য আপনারা নিয়মিত যোগাযোগ রাখবেন।

সভায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম ও অপস্) নাদিয়া ফারজানা, ডিআইওয়ান শহীদ উল্যাহ, শহর ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মোশাররফ হোসেন ভ‚ঁঞা, সাধারণ সম্পাদক পারভেজুল ইসলাম হাজারী, ফেনী চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাষ্ট্রির পরিচালক ও বনিটো কমিউনিকেশনের স্বত্ত¡াধিকারী চৌধুরী আহমেদ রিয়াদ আজিজ রাজীব, ব্যবসায়ী সমিতির সহ-সভাপতি গোলাম রসুল ভ‚ঁঞা, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক গিয়াস উদ্দিন হেলাল পাটোয়ারী, নির্বাহী সদস্য ফরিদ উদ্দিন ভ‚ঁঞা, আবদুল মান্নান ফরিদ, গোলাম সারোয়ার নয়ন, জেলা প্রাইভেট হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার ওনার্স এসোসিয়েশনের সভাপতি হারুনুর রশিদ, সুলতান মাহমুদ পৌর হকার্স মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ, রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির জেলা সাধারণ সম্পাদক নুরুল আফছার কবির শাহজাদা, ব্যবসায়ী সমিতির ট্রাংক রোড শাখা কমিটির সভাপতি সাহাব উদ্দিন, একাডেমী এলাকা ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি লকিয়ত উল্যাহ ভ‚ঁঞা ও সাধারণ সম্পাদক মির্জা আবু তাহের, বড় মসজিদ রোড কমিটির সাধারণ সম্পাদক ইমাম উদ্দিন, জামান রোড সাধারণ সম্পাদক কামাল উদ্দিন মিন্টু, বস্ত্র হর্কার মার্কেটের সাধারণ সম্পাদক বাহার উদ্দিন বাহার, শহীদ শহীদুল্লা কায়সার সড়ক পূর্ব সভাপতি মোমিনুল হক দিদার ও সাধারণ সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন তপন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নাদিয়া ফারজানা বলেছেন, ফেনীতে সবচেয়ে বড় সমস্যা কিশোর গ্যাং এটা নিয়ে আমরা কাজ করছি। শুধু কিশোর গ্যাং ধরলে হবে না। যারা যারা মদদ দিচ্ছেছ তাদের সাথেও আমাদের কথা হয়েছে। কিশোর গ্যাংয়ের অনেককে আমরা ডেকে এনে কথা বলেছি। অভিভাবকদের সাথে কথা হয়েছে। অনেক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। ছেলে-মেয়ে সবার আছে, সবাই কিন্তু কিশোর গ্যাং না। যখন যেখানে যে কোন সমস্যা দেখবেন আমাদেরকে জানাবেন। আমরা সাধ্য অনুযায়ী কাজ করার চেষ্টা করবো। আমরা নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় সিসি টিভি ক্যামেরা লাগান। ব্যবসায়ীরা ইচ্ছা করলে সবই করতে পারেন।

তিনি আরো বলেন, মহিপালে রাস্তা দখল করে সবজি ব্যবসায়ীরা রশি লাগিয়ে বসে থাকে। আমি দেখার পর জিজ্ঞেস করলাম এখানে এ অবস্থা কেন। তারা বলল পৌরসভা নাকি তাদেরকে টোকেন দিয়েছে। যখন মেয়রকে বিষয়টি জানালাম তিনি বললেন জানেন না। আমরা যৌথ উদ্যোগ নিয়ে উচ্ছেদ শুরু করবো। ইতিমধ্যে এসপি স্যারের নেতৃত্বে অনেকগুলো কাজে হাত দিয়েছি আপনারা ভালো ফলাফল পাবেন। আপনাদের অবস্থান থেকে সচেতন থাকতে হবে। তাহলে আমরা সবাই ভালো থাকবো।

পারভেজুল ইসলাম হাজারী বলেন, যানজট নিয়ে আমরা বিপাকে রয়েছি। মহিপাল ৬ লেন ফ্লাইওভারের নিচে যানজট থাকার কোন সুযোগ নেই। কোন অদৃশ্য কারনে মহিপালে যানজট লেগে থাকে। এ বিষয়ে পুলিশ প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করেন। বিশেষ করে ফলের আড়তদারদের অবহেলা ও সুগন্ধা-দ্রæতযান বাস নামের শত শত বাস রাস্তার উপর দাঁড়িয়ে থাকার কারনে যানজট লেগেই থাকে। ট্রাংক রোড শহীদ মিনার থেকে খেজুর চত্বর পর্যন্ত শত শত সিএনজি দাঁড়িয়ে থাকার কারনে যানজটের সৃষ্টি হয়। স্টেশন রোড থেকে গুদাম কোয়ার্টার পর্যন্ত যানজট লেগে থাকে। ইদানিং রাজনৈতিক কর্মসূচীর নামে ইসলামপুর রোডে সভা-সমাবেশ হওয়ার কারনে ব্যবসায়ীদের ভীষণ ক্ষতি হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা যেন শান্তিপূর্ণভাবে ব্যবসা-বাণিজ্য করতে পারেন সে ব্যাপারে পুলিশ সুপারের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: কন্টেন্ট সুরক্ষিত!!