fenirshomoy logo black

আলী হায়দার মানিক :

ফেনী যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরে দক্ষ প্রশিক্ষক ও জনবল সংকটের কারনে বেকার যুবকরা সঠিক নিয়মে প্রশিক্ষণ নিতে ব্যাঘাত ঘটছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ২০১৯ সাল থেকে মৎস্য প্রশিক্ষক না থাকায় এ কোর্সে ভর্তি বন্ধ রয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ফেনী যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরে ২৪ জন জনবলের মাঝে রয়েছে ৯ জন নেই। ৩জন ডেপুডিশনের রয়েছে। মডার্ণ অফিস ম্যানেজমেন্ট ১ জন ইন্সট্রাক্টর, ফ্রিজ এয়ারকন্ডিশন ১ জন সহকারি ইন্সট্রাক্টর, ইলেক্ট্রিক্যাল এন্ড হাউজ ওয়ারিংএ ১ জন সহকারি ইন্সট্রাক্টর, ১ জন মৎস্য প্রশিক্ষক সহ ৫ জন গুরুত্বপূর্ণ প্রশিক্ষক নেই। ডেপুডিশনে রয়েছে গাড়ি চালক, কম্পিউটার সহকারি ও অফিস সহায়ক। এখানে ৬টি প্রাতিষ্ঠানিক কোর্স রয়েছে। ৬ মাসের কোর্স রয়েছে কম্পিউটার বেসিক এন্ড আইসিটি এপ্লিকেশন, ফ্রিজ এয়ারকন্ডিশন, ইলেক্ট্রিক্যাল এন্ড হাউজ ওয়ারিং, মডার্ণ অফিস ম্যানেজমেন্ট এবং আইসিটি এপ্লিকেশন, ইলেক্ট্রনিক্স কোর্সে বছরে দুটি ব্যাচ প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। কম্পিউটার প্রশিক্ষণ কোর্সে ৭০ জনকে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়। অন্যান্য কোর্সে ৩০জন করে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। নিয়মিত কোর্সে ৩০জন করে ছিল। তবে এ বছরের জন্য সরকারিভাবে ১০জন করে প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। ৩ মাসের একটি ড্রেসমেসিং কোর্স রয়েছে। উপজেলা পর্যায়ে অপ্রাতিষ্ঠানিক কোর্স রয়েছে ৭, ১০ ও ১৪দিনের প্রশিক্ষক কোর্স রয়েছে। সফলভাবে প্রশিক্ষণ নেয়া বেকার যুবকদেরকে ঋণ প্রদানের মাধ্যমে আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টির সুযোগ রয়েছে। সর্বোচ্ছ একজন প্রশিক্ষার্থী ১ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ গ্রহন করার সুযোগ রয়েছে।

এছাড়া যানবাহন প্রশিক্ষণের একটি কোর্স রয়েছে। ফেনীতে নিবন্ধন করার পর নোয়াখালী থেকে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। প্রতি ব্যাচে ২০জন করে প্রশিক্ষণ নেয়ার সুযোগ রয়েছে।

মাহবুবুর রহমান মানিক নামের এক প্রশিক্ষার্থী বলেন, দেশের বেকার যুবদের দক্ষ মানব সম্পদে রুপান্তর করতে কাজ করছে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর। আধুনিক এ যুগে এসে যুব উন্নয়নের প্রশিক্ষণ নিয়ে তরুন যুবদের মধ্যে চাহিদা, দাবী ও অভিযোগ থাকতেই পারে। এখানে যে বিষয়গুলো বলা হচ্ছে সেগুলোকে স্বাভাবিক ভাবে নিতে হবে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরকে। তরুন যুবদের চাহিদার মূল্যায়ন করে সমস্যা গুলোকে চিহ্নিত করে সেগুলো সমাধানে উদ্যোগ নিতে হবে।

তিনি আরও বলেন, দেশের বেকার যুবকদের তালিকায় শিক্ষিত, অর্ধশিক্ষিত বা অশিক্ষিত সবাই আছে। তবে দুর্ভাগ্যজনক সত্যি হচ্ছে, কোনো যুবককে বেকার অবস্থায় দেখলে আমাদের মনে হয়, হয়তো ঘুষ দেওয়ার সামর্থ্য নেই কিংবা মামা-খালু নেই বলেই বেকার। এখানে প্রশ্ন হচ্ছে এই বেকার যুবকদের আমরা কতটা দক্ষ করে তুলতে পেরেছি। দরিদ্র পরিবারের সন্তানরা আজ দক্ষতার লড়াইয়ে পিছিয়ে থাকার কারণে সঠিক কর্মের সন্ধান পাচ্ছে না। ফলে বেকারত্বের লাইন আরও দীর্ঘ হচ্ছে। এসব থেকে বেড়িয়ে আসতে হবে আমাদের। সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এ সমস্যার সমাধার করতে হবে। যেমন, বেকার যুবকদের জন্য যুগের সাথে তাল মিলিয়ে চাহিদা অনুযায়ী উন্নত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা, যুব উন্নয়নে দক্ষ প্রশিক্ষক এর ব্যবস্থা ও শিক্ষার্থীদের শেখার আগ্রহ থাকলেই এ সমস্যার সামাধান করা সম্ভব হবে।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, ফেনী যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর থেকে গত ২০২০-২১ অর্থ বছর ও ২০২১-২২ অর্থ বছরে বিভিন্ন ট্রেডে প্রশিক্ষন নেয়া শিক্ষার্থীরা জানান, যুব উন্নয়ন থেকে নেয়া এ প্রশিক্ষণ কর্মক্ষেত্রে তাদের কোন কাজে আসছে না। যার মূল কারন হচ্ছে চাহিদা অনুযায়ী দক্ষ প্রশিক্ষক দ্বারা যুগপযোগী প্রশিক্ষণ না পাওয়া। অনেক ক্ষেত্রে শুধুমাত্র সার্টিফিকেটের জন্য ও আর্থিক সুবিধার জন্য প্রশিক্ষণ নেয়াকেও দায়ী করছেন শিক্ষর্থীরা।

নাম প্রকাশে অনিশ্চুক কম্পিউটার কোর্সের এক প্রশিক্ষার্থী বলেন, আমি কম্পিউটার প্রশিক্ষণ নিয়ে ছিলাম। এ প্রশিক্ষনের মাধ্যমে আমি যা শিখেছি, সেটা শুধু মাত্র কম্পিউটার সম্পর্কে প্রাথমিক ধারনা। প্রতিযোগীতার এ যুগে এসে প্রাথমিক ধারনা নিয়ে কর্মক্ষেত্রে কাজ করার সুযোগ কম। যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের দক্ষ প্রশিক্ষকের অভাব রয়েছে। শুধু মাত্র একজন দক্ষ প্রশিক্ষকের অভাবে যুব উন্নয়ন থেকে কাংখিত প্রশিক্ষণ পাওয়া যাচ্ছে না।

মৎস্য কোর্সে ভর্তি হতে আসা কায়েকজন শিক্ষার্থী জানান, আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে মৎস্য চাষের উপর প্রশিক্ষণ নেয়ার জন্য ফেনী যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরে যাই। সেখানে গিয়ে খবর পাই প্রশিক্ষক নেই তাই এ কোর্সে ভর্তি নেয়া হবে না। এমন খবর পেয়ে আমরা হতাশ হয়ে ফিরে আসি। দেশে মৎস্য চাষ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তাই মৎস্য চাষের জন্য আমার আগ্রহী হই। কিন্তু সেই আগ্রহ আবার হতাশায় পরিনত হয়। ফেনীর মতো গুরুত্বপূর্ণ জেলায় যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরে মৎস্য প্রশিক্ষক নেই এটি মেনে নেয়া কষ্টকর বিষয়।
ফেনী যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরে উপ-পরিচালক মো: আবু জাফর ফেনীর সময় কে বলেন, ফেনীতে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর যেন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে রূপ নিয়েছে। এখানে দলে দলে বেকার যুকরা ব্যাপকভাবে প্রশিক্ষন গ্রহন করছে। সেটি বাস্তবেও পরিতন হচ্ছে। এ জেলা অন্যান্য এলাকার তুলানায় অনেকাংশে এগিয়ে রয়েছে।

তিনি আরো বলেন, চাহিদা অনুযায়ী দক্ষ প্রশিক্ষকের অভাব ও জনবল সংকটে থাকলেও সাধ্য অনুযায়ী আন্তরিকতার সাথে কাজ করছেন তারা। যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর ফেনীতে একজন মৎস্য প্রশিক্ষক ২০২২ সালেও নিয়োগ দেয়া হয়েছে কিন্তু সে যোগ দেয়নি। প্রশিক্ষন নেয়া বেকার যুবকদের প্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রাতিষ্ঠাকিভাবে ঋণ প্রদান করার মাধ্যমে উৎসাহ প্রদান করা হচ্ছে। একজন প্রশিক্ষার্থী কোর্স শেষে সার্টিফিকেট দেখিয়ে ১ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ নেয়ার সুযোগ রয়েছে। এক্ষেত্রে মহিলাদেরকে অগ্রাধিকার দেয়া হচ্ছে। তারা হাস-মুরগি, ছাগল ও গরু লালন-পালন করার জন্য ক্ষুদ্র ঋণ প্রদান করা হয়। বিষয়গুলো উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে বলে জানান তিনি।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: কন্টেন্ট সুরক্ষিত!!