নার্গিস সুলতানা
ভাঙ্গা-গড়া প্রকৃতির আপন খেলা,কখনো ভেঙ্গে দেয় নদীর পাড় আবার কখনো সেই ভাঙ্গা নদীর বুকেই জাগিয়ে যায় চর।আর আমাদের কাজ হলো, এই ভাঙ্গা-গড়ার কারিগর প্রকৃতির সাথে নিজেকে মানিয়ে নেয়া। সম্প্রতি ফেনীর ইতিহাসে যুক্ত হলো এক মহা প্লাবণ। এই দূর্যোগে ফেনীবাসী হারিয়েছে অনেক কিছু আবার শিখতেও পেরেছে অনেক কিছু।মানবতার এক অপূর্ব দৃষ্টান্ত স্থাপিত হয়েছিল এ প্লাবণে। বন্যায় আমরা যা হারিয়েছি তা নিয়ে আফসোস না করে, যেটুকু আছে সেগুলোকে সংস্কার ও ব্যবহারযোগ্য করাই আমাদের জন্য শ্রেয়। বন্যার প্রভাব পড়েছে শিক্ষাঙ্গণেও। শিশুরা হারিয়েছে বই, বিদ্যালয় হারিয়েছে তার আপন গতি আর অভিভাবকগণ হারিয়েছেন আত্মবিশ^াস।এই আশাহত শিক্ষা সমাজের পাশে এসে দাঁড়িয়েছি আমরা সমগ্র প্রাথমিক পরিবার। শিক্ষক- অভিভাবক মিলেই আবার গড়ে তুলবো শিশুদের স্বর্ণালী ভবিষ্যৎ। আর এ স্বর্ণালী ভবিষ্যতের আমরা যারা পথপ্রদর্শক, তাদের সর্বপ্রথম কাজ হলো বিদ্যালয়কে যথাসম্ভব দ্রুত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে শ্রেনী কার্যক্রম চালানোর মত একটি মনোরম পরিবেশ তৈরি করা।
দ্বিতীয়ত, হোম ভিজিটের মাধ্যমে যেসকল শিশুর বাড়ী বেশী ক্ষতিগ্রস্ত তাদের যতদূর সম্ভব শিক্ষা উপকরণ যেমন বই, খাতা, কলম ইত্যাদি দিয়ে সহযোগিতা করা এবং ক্ষতিগ্রস্ত অভিভাবকের পাশে দাঁড়িয়ে সাহস ও অনুপ্রেরণা জোগানো। তৃতীয়ত, শিশুদের শিখনের যে ঘাটতি তৈরি হয়েছে, তার জন্য বিশেষ পাঠদানের ব্যব¯’া করা যাতে শিশু অল্প সময়ের মধ্যে কাঙ্খিত শিখনফল অর্জন করে এবং পরবর্তী শ্রেনীতে উত্তরণের জন্য
উপযোগী হয়ে ওঠে। এক্ষেত্রে উপজেলা শিক্ষা অফিস, জেলা শিক্ষা অফিস এবং সংশ্লিষ্ট সকলের সহযোগিতা একান্ত কাম্য।
তবে একথা অনস্বীকার্য যে, বর্তমান অন্তর্বতীকালীন সরকার অত্যন্ত আন্তরিকতা, সহমর্মিতার সাথে শিক্ষা সংক্রান্ত যাবতীয় সমস্যা সমাধানের জন্য তাৎক্ষণিক কর্মসূচী হাতে নিয়েছেন এবং ধীরে ধীরে তা বাস্তবায়নও করছেন। এবার আলোকপাত করছি সম্মানিত অভিভাবকগণের উপর। প্রতিটি অভিভাবকের সর্বপ্রথম কাজ তার সন্তানকে বুকে আগলে রাখা, সন্তানের প্রয়োজনীয় ভরণ-পোষণের ব্যবস্থা করা। সোজা বাংলায় যাকে বলে খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা,নিরাপত্তা প্রভৃতি মৌলিক অধিকারগুলো নিশ্চিত করা।
এই এক কথাতেই সম্মানিত অভিভাবকগণের সমস্ত দায়িত্ব বুঝে নেয়া যায়। তাই আর কিছু বলার অপেক্ষা রাখেনা।মূলত, একটি শিশুকে আগামীর চালিকাশক্তি বানাতে হলে কিংবা দেশের একজন সুনাগরিক বানাতে হলে অথবা একজন যোগ্য নেতা হিসেবে গড়ে তুলতে হলে শিক্ষক-অভিভাবকের যৌথ প্রচেষ্টার বিকল্প কিছুই নেই। তাই, আমাদের আগামীর অঙ্গিকার, শিক্ষক-অভিভাবক মিলেই দেশের প্রতিটি বিদ্যালয়কে করব শিশু বিচরণের এক অভয়ারণ্য।
লেখক : সহকারি শিক্ষক, ফেনী জিএ একাডেমী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।