নিজস্ব প্রতিনিধি :
ভারতীয় পাহাড়ি ঢলের উজান থেকে নেমে আসা পানির চাপে মুহুরী নদীর বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে ফুলগাজী ও পরশুরাম উপজেলার ২৬ গ্রামের প্রায় ৮ হাজার মানুষ পানিবন্ধী হয়ে পড়েছে। নতুন করে গ্রামের পর গ্রাম বিস্তীর্ণ জনপদ প্লাবিত হচ্ছে। ঘর-বাড়ি ডুবে অন্তহীন দূর্ভোগের শিকার হচ্ছেন বাসিন্দারা। গৃহহীন হয়ে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছেন। গ্রামীণ সড়ক ও জমির ফসল তলিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি পুকুরের মাছ ভেসে গেছে।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, সোমবার রাতে ফুলগাজী সদর ইউনিয়নের দৌলতপুরে দুটি, বরইয়া, নিলক্ষী ও একরামনগরে দুটি এবং পরশুরাম উপজেলার চিথলিয়া ইউনিয়নের দক্ষিণ শালধর ও বক্সমাহমুদ ইউনিয়নের বাঘমারা এলাকায় বাঁধ ভেঙ্গে যায়। গতকাল বিকালে মির্জানগর ইউনিয়নে আরেকটি বাঁধ ভেঙ্গে যায়। এতে ফুলগাজীর নিলক্ষী, উত্তর দৌলতপুর, দক্ষিণ দৌলতপুর, পশ্চিম ঘনিয়ামোড়া, কিসমত ঘনিয়ামোড়া ও মণিপুর সহ সদর, আমজাদ হাট ও দরবারপুর ইউনিয়নের ১৮টি এবং পরশুরামের শালধর, মালিপাথর সহ ৮টি এলাকা প্লাবিত হয়। এছাড়া ফুলগাজী বাজার সহ গ্রামাঞ্চলের বাজারে দোকানপাটে পানি ঢুকে মালামাল নষ্ট হয়।
সদর ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের সদস্য মাঈন উদ্দিন খোকন বলেন, মুহুরী নদীর বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে উত্তর দৌলতপুর, দক্ষিণ দৌলতপুর, বনিকপাড়া, মালিপাথর, শালধর ও দেড়পাড়াসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় ঘর-বাড়ি পানিতে তলিয়ে গেছে।
পরশুরাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আফরোজা হাবিব শাপলা জানান, উপজেলার ৮টি গ্রামের ২ হাজার ১শ পরিবার পানিবন্ধী হয়ে পড়েছে। এর মধ্যে ৯৩০টি পরিবারের অবস্থা খুবই করুন। নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। মঙ্গলবার ক্ষতিগ্রস্ত ২শ পরিবারকে ত্রাণ বিতরণ করা হয়েছে।
ফুলগাজী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তানিয়া ভূঁইয়া জানান, ১৫শ পরিবারের প্রায় ৬ হাজার মানুষ পানিবদ্ধ রয়েছে। এর মধ্যে ৬শ ৫০ জনকে ত্রাণ বিতরণ ও বন্যার পানিতে ডুবে নিহত মামুনের পরিবারকে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ২৫ হাজার টাকা দেয়া হয়েছে।
ফেনী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ রাশেদ শাহরিয়ার বলেন, মুহুরী-কহুয়া-সিলোনীয়া নদীর দুইপাশে ১২২ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ রয়েছে। যেখানে বাঁধ ভেঙ্গেছে সেখানে পানি কমলেই ভাঙ্গন মেরামত করা হবে।
জেলা প্রশাসক মুছাম্মদ শাহীনা আক্তার জানান, দূর্যোগ মোকাবেলায় শুকনো খাবারসহ অন্যান্য সবধরনের প্রস্তুতি রয়েছে।
ফেনী-১ আসনের সংসদ সদস্য আলাউদ্দিন আহাম্মদ চৌধুরী নাসিম জানান, পরশুরাম ও ফুলগাজীর বন্যাকবলিত মানুষের জন্য জরুরী সাহায্য হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রনালয় ১০ লাখ টাকা, ২শ টন চাল এবং ২ হাজার প্যাকেট শুকনা খাদ্য বরাদ্ধ দিয়েছে।