নিজস্ব প্রতিনিধি :
ফেনীর নতুন পুলিশ সুপার মো: হাবিবুর রহমান বলেছেন, “৪ আগস্ট মহিপালে নিরীহ ছাত্র-জনতার উপর গুলিবর্ষণ করে যে গনহত্যা চালানো হয়েছে এ ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতার ও অস্ত্র উদ্ধারে অভিযান চলমান রয়েছে। সেদিনের ঘটনায় পুলিশের ভূমিকা তদন্ত করতে কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত টিমের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। ফেনী জেলায় ৮ জন শহীদ হয়েছেন। এ জেলার আরো তিনজন ঢাকা সহ বিভিন্ন স্থানে শহীদ হয়েছে। এ পর্যন্ত ফেনী মডেল থানায় ৮টি হত্যা মামলা হয়েছে। অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী যারা মামলা থেকে বাদ পড়েছে তদন্তের মাধ্যমে তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।”
পুলিশ সুপার আরো বলেন, “পেশাদারিত্ব ও সততার সাথে ফেনীবাসীকে নির্ভেজাল সেবা দিতে চাই। ফেনীবাসীর সঙ্গে পুলিশের ভালো সম্পর্ক হবে। ফেনীকে স্বাচ্ছন্দে, নিরাপদে বসবাসযোগ্য করতে চাই। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য সব পদক্ষেপ নিতে প্রস্তুত রয়েছি। কাজের মাধ্যমে ফেনীকে রোল মডেল করতে চাই। পাসপোর্ট ক্লিয়ারেন্স সহ যেকোন কাজে থানায়, ডিবি অফিস, ডিএসবি অফিসে পুলিশের কোন সদস্য স্প্রীড মানি দাবী করলে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। পুলিশকে বিগত ১৫ বছর বিভিন্ন অনৈতিক কাজে ব্যবহার করা হয়েছে। ভুলত্রুটি হয়েছে বলেই পুলিশ আজ বিতর্কিত। দ্বিতীয় স্বাধীনতার পর ছাত্র-জনতার কাঙ্খিত ফেনী জেলা পুলিশকে সাজাতে চাই।” সাংবাদিক সহ ফেনীবাসীকে পাশে থাকার আহবান জানান তিনি। তিনি বলেন, “আমার কোন ভুলত্রুটি থাকলেও গঠনমূলকভাবে পত্রিকায় তুলে ধরবেন। ব্যক্তিগতভাবেও জানাতে পারবেন।”
মঙ্গলবার সকালে পুলিশ লাইন্স ড্রীল শেডে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন। এসময় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার দীন মোহাম্মদ ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো: শাহাদাৎ হোসেন সঙ্গে ছিলেন।
সভায় সাংবাদিকদের মধ্যে দৈনিক ফেনীর সময় সম্পাদক মোহাম্মদ শাহাদাত হোসেন, সংগ্রাম প্রতিনিধি একেএম আবদুর রহীম, ডিবিসি প্রতিনিধি আবু তাহের ভূঞা, চ্যানেল আই প্রতিনিধি রবিউল হক রবি, দৈনিক ফেনী সম্পাদক আরিফুল আমিন রিজভী, চ্যানেল ২৪ প্রতিনিধি দিলদার হোসেন স্বপন, বাংলাদেশ টুডে প্রতিনিধি কামাল উদ্দিন ভূঞা, উদয় ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক এম এ সাঈদ খান, স্বদেশপত্র সম্পাদক এনএন জীবন, মানবজমিন ও বিডিনিউজ প্রতিনিধি নাজমুল হক শামীম, ম্যাসেঞ্জার প্রতিনিধি আলী হায়দার মানিক, আমার সংবাদ প্রতিনিধি এসএম ইউসুফ আলী, বণিক বার্তা প্রতিনিধি নুর উল্যাহ কায়সার, ফেনী সমাচার সম্পাদক মহিব্বুল্লাহ ফরহাদ, এখন টিভি প্রতিনিধি সোলায়মান হাজারী ডালিম, আনন্দ টিভি প্রতিনিধি জাফর উদ্দিন, ফেনীর প্রত্যয় সম্পাদক সিদ্দিক আল মামুন, ডিবিসি নিউজের ক্যামেরাপার্সন দুলাল তালুকদার, হকার্স প্রতিনিধি ইয়াছিন আরাফাত রুবেল, দেশের কন্ঠ প্রতিনিধি সাজ্জাদ হোসেন রাজন প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
ফেনী জেলায় কোন পুলিশ সদস্য পলাতক নেই জানিয়ে পুলিশ সুপার আরো বলেন, “সারাদেশে ভঙ্গুর অবস্থা। ফেনীতে ৮টি গাড়ী ও অসংখ্য মোটর সাইকেল পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে। এ কারনে যানবাহন সংকট রয়েছে। কোন পুলিশ সদস্য পলাতক নেই। জেলায় সবাই কর্মরত রয়েছে।”
যানজটে মানুষ অনেক কষ্ট পাচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “যানজট নিরসন পুলিশ সুপারের পক্ষে একা নিরসন সম্ভব নয়। জেলা প্রশাসকের সাথে কথা হয়েছে। পৌরসভার প্রশাসক সহ স্টেক হোল্ডারদের নিয়ে যানজট সহনীয় মাত্রায় আনতে সর্বোচ্চ চেষ্টা থাকবে।”
কিশোর গ্যাং প্রসঙ্গে পুলিশ সুপার বলেন, ‘কিশোর গ্যাং দলীয় পর্যায়ে নেই। এরা স্বার্থ হাসিলের জন্য বিভিন্ন লোকের ছত্রছায়ায় কাজ করে। কিশোর গ্যাং নির্মূলে পুলিশের পক্ষ থেকে সবধরনের ভূমিকা রাখবে।”
এর আগে জেলায় কর্মরত সাংবাদিকরা আওয়ামীলীগ সরকারের সময়ে কতিপয় পুলিশের নির্লজ্জ ভূমিকার তীব্র সমালোচনা করেন। ৪ আগস্ট মহিপালে নির্লিপ্ততার জন্য পুলিশ কর্মকর্তাদের বিচারের আওতায় আনার দাবী জানান। এছাড়া ফেনীর আইনশৃঙ্খলা তথা সার্বিক উন্নয়নে সাংবাদিকরা পুলিশ সুপারের পাশে থেকে ইতিবাচক সহযোগিতার আশ^াস দেন।