ইলিয়াছ সুমন :
ফেনীতে জ্বরের প্রকোপ দিনদিন তীব্র আকার ধারন করেছে। হঠাৎ রোগী বেড়ে যাওয়ায় ফেনী জেনারেল হাসপাতাল এমনকি বেসরকারী হাসপাতালেও তীল ধারনের ঠাঁই নেই।
মঙ্গলবার দুপুরে ২৫০ শয্যার ফেনী জেনারেল হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, শয্যার চেয়ে অতিরিক্ত রোগী ভর্তি হওয়ায় চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসক- নার্সরা।
হাসপাতাল সূত্র জানায়, গত কয়েকদিন ফেনী জেনারেল হাসপাতালে প্রতিদিন গড়ে আউটডোরে প্রায় ১১ শ রোগীকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়াও প্রতিদিন গড়ে ১৪০ থেকে ১৬০ জন রোগী জ্বর, কাশি, ব্যথা সহ বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে ভর্তি হচ্ছে। এতে করে প্রতিটি ওয়ার্ডে শয্যার চেয়ে অতিরিক্ত রোগী ভর্তি হওয়ায় চিকিৎসা কার্যক্রম চরমভাবে ব্যহত হচ্ছে।
জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা: মো: আসিফ ইকবাল জানান, চলতি মাসের ১ তারিখ থেকে ২৪ তারিখ পর্যন্ত জেনারেল ডেঙ্গু ওয়ার্ডে ৪৯ জন রোগী শনাক্ত হওয়ার পর ভর্তি হয়েছে। এদের মধ্যে কয়েকজন রোগীকে চিকিৎসা দিয়ে বাড়ীতে পাঠানো হয়েছে। কয়েকজনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা ও চট্টগ্রাম পাঠানো হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার ৫ জন শিশু রোগী ডেঙ্গুতে আক্তান্ত সহ মোট ১৪ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি রয়েছে। প্রতিদিন গড়ে যত রোগী ভর্তি হচ্ছে তার বেশিরভাগ রোগীই জ্বর, শরীর ব্যথা, কাশি নিয়ে আসছে।
আরএমও জানান, অতিরিক্ত রোগীদের সেবা দিতে গিয়ে হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স সহ অন্য কর্মচারীরাও জ্বরে সহ নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে অসুস্থ হচ্ছে। ৫ জন মেডিকেল অফিসার গত সোমবার আউটডোরে ১০৬০ জন রোগীকে চিকিৎসা সেবা দিয়েছে। গত এক সপ্তাহে গড়ে প্রায় ১ হাজারের বেশি রোগীকে আউটডোরে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
ডা: আসিফ ইকবাল আরো জানান, তিনি ও তার পরিবারের সবাই জ্বরে আক্রান্ত। ১০২ ডিগ্রি জ্বর নিয়ে তিনি হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা অব্যাহত রেখেছেন।
হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা সদর উপজেলার শর্শদী ইউনিয়নের মো: সাহাব উদ্দিন জানান, তার ১ ছেলে ১ মেয়ে পরপর জ্বরে আক্রান্ত গত ৫ দিন ঔষধ খায়ানোর পরও ভালো না হওয়ায় সদর হাসপাতালে ডাক্তার দেখাতে এনেছেন।
আরএমও আসিফ ইকবাল জানান, গত সোমবার পূর্যন্ত জেনারেল হাসপাতালে পুরুষ মেডিসিন ওয়ার্ডে সরকার অনুমোদিত ২৬ বেডের বিপরীতে রোগী ভর্তি ছিল ৬৮ জন। মহিলা মেডিসিন ওয়ার্ডে সরকার অনুমোদিত ২৬ বেডের স্থলে ৭৩ জন। শিশু ওয়ার্ডে ২৬ বেডের স্থালে ৭৬ জন।
গত সোমবার ১৬৫ জন রোগী ভর্তি সহ ২৫০ শয্যার হাসপাতালে বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে ৪২০ জন রোগী ভর্তি হয়ে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এ ছাড়াও জেলার বিভিন্ন প্রাইভেট হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোতে প্রতিদিন জ্বর, হাঁচি, কাশি, ব্যাথা নিয়ে শতশত রোগী চিকিৎসকের কাছে আসছে। অনেকে ডেঙ্গু শনাক্ত হওয়ার পরও বাসায় টিটমেন্ট নিচ্ছে।
ফেনী নিউ ইবনে সিনা ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুল মান্নান জানান, গত এক সপ্তাহে তাদের চেম্বারের প্রতিটি চিকিৎসকের রোগী বেড়ে গেছে। এদের বেশিরভাগ রোগী জ্বর নিয়ে আসছে।
ফেনী জেডইউ মডেল হাসপাতালের ম্যানেজার সুলতান আহমদ জানান, উক্ত হাসপাতালে কোন কেবিন খালি নেই, একটি খালি হলে আরেকটি ভর্তি হতে অপেক্ষমান থাকে।