দৈনিক ফেনীর সময়

ফেনীতে আ’লীগ নেতাদের অস্ত্র বিলাস

নিজস্ব প্রতিনিধি :

ফেনীতে বিগত সরকারের সাড়ে ১৫ বছর ক্ষমতায় থাকাকালে অস্ত্র বিলাসে মেতে উঠে আওয়ামীলীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা। কয়েকজন নেতা একাধিক অস্ত্রের লাইসেন্স নিয়েছেন। শুধু তাই নয়, কারো কারো স্ত্রীর নামেও রয়েছে অস্ত্রের অনুমোদন। বৈধ অস্ত্রের পাশাপাশি তৃণমূলের নেতাকর্মীদের হাতেও ছড়িয়ে পড়ে অবৈধ অস্ত্র। গত ৪ আগস্ট মহিপালে ছাত্র-জনতার উপর প্রকাশ্য দিবালোকে নির্বিচারে গুলি ছুঁড়তে আওয়ামীলীগ নেতাকর্মীরা অবৈধ অস্ত্রের পাশাপাশি বৈধ অস্ত্রও ব্যবহার করেছে মনে করছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। যার ফলে সরকার পতনের পর অস্ত্র জমা দিতে বলা হলেও অনেকে জমা দেননি।

জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসন সূত্র জানায়, ২০১৯ সালের ৬ জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের ৫ আগস্ট পর্যন্ত ব্যক্তি পর্যায়ে ১০৩ জনকে অস্ত্রের লাইসেন্স দেয়া হয়। এর মধ্যে সদর উপজেলায় সর্বাধিক ৪৭টি অস্ত্রের লাইসেন্স রয়েছে। সদর আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামীলীগ সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন হাজারীর নামে পিস্তল এবং তার স্ত্রী নুরজাহান বেগমের নামে রাইফেলের অনুমোদন রয়েছে। সদর উপজেলা আওয়ামীলীগ সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান শুসেন চন্দ্র শীল, পৌর আওয়ামীলীগ সাধারণ সম্পাদক ও পৌরসভার সাবেক মেয়র নজরুল ইসলাম স্বপন মিয়াজী, জেলা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর লুৎফুর রহমান খোকন হাজারীর নামে একটি করে পিস্তল ও শর্টগান রয়েছে। সদর উপজেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি ও ছনুয়া ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান করিম উল্যাহ বি.কম, ফাজিলপুর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ সভাপতি ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মজিবুল হক রিপন, কাজিরবাগ ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ সভাপতি ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান কাজী বুলবুল আহমেদ সোহাগ, জেলা যুবলীগের সহ-সভাপতি ও শর্শদী ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান জানে আলম ভূঞা, জেলা যুবলীগের সহ-সভাপতি রাশেদুল হক হাজারীর নামে অস্ত্রের লাইসেন্স রয়েছে।

ছাগলনাইয়া উপজেলা আওয়ামীলীগ সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মেজবাউল হায়দার চৌধুরী সোহেলের নামে রয়েছে পিস্তল ও শর্টগানের লাইসেন্স। তার বড় ভাই পাঠাননগর ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান রফিকুল হায়দার চৌধুরী জুয়েলের নামে রয়েছে শর্টগান। ছাগলনাইয়া উপজেলার সদ্য সাবেক চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান মজুমদার, পৌরসভার সাবেক মেয়র মোহাম্মদ মোস্তফা, মহামায়া ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান গরিব শাহ হোসেন বাদশা চৌধুরী, উপজেলা আওয়ামীলীগের সাংস্কৃতিক সম্পাদক আহমেদ মাহী রাসেলের নামে রয়েছে শর্টগান।

ফেনী-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য হাজী রহিম উল্যাহর নামে একটি শর্টগান। জেলা আওয়ামীলীগ যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও সোনাগাজীর সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান জহির উদ্দিন মাহমুদ লিপটন, সোনাগাজী উপজেলা আওয়ামীলীগ সাধারণ সম্পাদক ও পৌরসভার সাবেক মেয়র রফিকুল ইসলাম খোকনের নামে রয়েছে একটি করে শর্টগান ও পিস্তলের লাইসেন্স।

দাগনভূঞা উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা যুবলীগ সভাপতি দিদারুল কবির রতন, পৌরসভার সাবেক মেয়র ও পৌর আওয়ামীলীগ সাধারণ সম্পাদক ওমর ফারুক খানের নামে রয়েছে একটি করে শর্টগান ও পিস্তল। এখানে জেলা আওয়ামীলীগ সাংগঠনিক সম্পাদক ও জায়লস্কর ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান মামুনুর রশিদ মিলন, উপজেলা আওয়ামীলীগ সাধারণ সম্পাদক ও রাজাপুর ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান জয়নাল আবদীন মামুন, মাতুভূঞা ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান এছহাক জগলুর নামে রয়েছে শর্টগান।

জেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি শেখ আবদুল্লাহ একটি বন্দুক ও একটি পিস্তল, ফুলগাজী উপজেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুল আলিম মজুমদারের নামে পিস্তল ও শর্টগান রয়েছে। উপজেলা আওয়ামীলীগ সাধারণ সম্পাদক ও সদ্য সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান হারুন মজুমদার ও জেলা যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী আহমেদ রিয়াদ আজিজ রাজিবের নামে রয়েছে একটি করে শর্টগান।

পরশুরাম উপজেলা আওয়ামীলীগ সাধারণ সম্পাদক ও পৌরসভার সাবেক মেয়র নিজাম উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী সাজেলের নামে একটি পিস্তল ও শর্টগান।

অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট শফিকুর রিদোয়ান আরমান শাকিল জানান, ফেনীতে আওয়ামী লীগ নেতা ও বিশেষ ব্যক্তিদের কাছে থাকা শতাধিক অস্ত্রের মধ্যে নির্দিষ্ট সময়সীমা পর্যন্ত জেলা ও দেশের বিভিন্ন থানায় ৯৩টি আগ্নেয়াস্ত্র জমা পড়েছে। জমা না পড়া ৭টি অস্ত্রের মধ্যে নিজাম উদ্দিন হাজারী ও তার স্ত্রীর নামে ২টি এবং সোনাগাজীর সাবেক মেয়র রফিকুল ইসলাম খোকনের কাছে দুটি আগ্নেয়াস্ত্র রয়েছে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: কন্টেন্ট সুরক্ষিত!!