দৈনিক ফেনীর সময়

ফেনীতে কোরবানির চামড়ায় এবারও লোকসানের আশঙ্কা

ফেনীতে কোরবানির চামড়ায় এবারও লোকসানের আশঙ্কা

নিজস্ব প্রতিনিধি :

সরকারিভাবে কোরবানির পশুর দাম নির্ধারণ করে দেওয়ার পরও সেই দামে বিক্রি হচ্ছে না। এতে চামড়া বিক্রি করতে না পেরে বিপাকে পড়েছেন গবাদিপশুর মালিক ও ব্যবসায়ীরা।
দাম কম পাওয়ায় গত বছরের মতো এবারও ফেনীতে কোরবানির পশুর চামড়ার দামে ধস নেমেছে। এবার গ্রামে গ্রামে মৌসুমি ব্যবসায়ীদের দেখাই মেলেনি। এলাকাভেদে গরু ও মহিষের ছোট-বড় সব ধরনের চামড়া ১০০ থেকে ৩০০ টাকা করে বিক্রি হয়েছে। এলাকায় কোনো মৌসুমি ব্যবসায়ীর দেখা না পেয়ে ৯৮ শতাংশ কোরবানি চামড়া স্থানীয় মাদরাসা ও এতিমখানায় দান হিসেবে দিয়ে দেওয়া হয়েছে। কোরবানির ছাগলের চামড়া বিক্রি করতে না পেরে অনেকেই মাটিতে পুঁতে ফেলেছেন বলে জানা গেছে।

সম্প্রতি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বৈঠকে ঢাকায় লবণযুক্ত চামড়া প্রতি বর্গফুট ৪৭ থেকে ৫২ টাকা, ঢাকার বাইরে ৪০ থেকে ৪৪ টাকা; সারাদেশে লবণযুক্ত খাসির চামড়ার প্রতি বর্গফুট ১৮ থেকে ২০ টাকা এবং ছাগলের চামড়ার দর প্রতি বর্গফুট ১২ থেকে ১৪ টাকা নির্ধারণ করা হয়। তবে ফেনীতে এ দামে গরু, ছাগল ও খাসি কেনাবেচা হচ্ছে না।

ফেনী পৌরসভার শহীদ শহীদুল্লাহ সড়কের মীর হোসেন কোরবানির গরুর চামড়া বিক্রির জন্য বিকেল পর্যন্ত বাড়িতেই ছিলেন। দুপুরে একজন মৌসুমি ক্রেতা ১ লাখ ২৩ হাজার টাকা দামের গরুর চামড়াটি মাত্র ১০০ টাকা দাম বলে চলে গেছেন। পরে চামড়াটি তিনি স্থানীয় একটি মাদ্রাসাকে দিয়ে দেন।

কাতালিয়া গ্রামের মোহাম্মদ আলী নামে একজন জানান, দুপুরে স্থানীয় একটি মাদরাসার পক্ষ থেকে চামড়া নিতে এসেছিল, তখন বিক্রির আশায় মাদরাসাকে দেওয়া হয়নি। বিকেল পর্যন্ত কোনো ক্রেতা না পেয়ে ওই মাদরাসাকে চামড়া নিয়ে যেতে বলা হলে তারা চামড়াটি তাদের মাদরাসায় পৌঁছে দিতে বলেন। পরে উল্টো পকেটের টাকা দিয়ে সেটি মাদরাসায় পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।

পরশুরামের মির্জানগর ইউনিয়নের সত্যনগরের বাসিন্দা আবু ইউছুপ জানান, সারাদিন ক্রেতার আশায় বসে থেকে বিকেলে ১৫০ হাজার টাকার গরুর চামড়া বিক্রি করেছেন মাত্র ১০০ টাকায়। তবে ফেনী সদর উপজেলার উত্তর কাশিমপুর গ্রামের বেলাল হোসেন জানান, তিনি ১৫০ হাজার টাকার গরুর চামড়া বিক্রি করেছেন ১৫০ টাকা।

দাগনভূঞার সিলোনীয়া বাজারের ব্যবসায়ী মনিরুল ইসলাম জানান, তার এলাকার মো. রানা নামে একজন মৌসুমি ব্যবসায়ী গ্রামে গ্রামে হেঁটে গড়ে ২০০ টাকা করে ২২টি চামড়া কিনে কয়েক শ টাকা রিকশা ভাড়া দিয়ে বাজারে নিয়ে ৩০০ টাকা করে বিক্রি করেছেন। রাত আটটায় ফেনী শহরের ট্রাংক রোডে একজন মৌসুমি ব্যবসায়ী আধা আলোতে ৫টি চামড়া নিয়ে বসে থাকতে দেখে জানতে চাওয়া হলে তিনি জানান, শহরের দাউদপুর এলাকা থেকে তিনি চামড়াগুলো গড়ে ২০০ টাকা করে কিনেছেন। নিজের খরচ ও রিকশা ভাড়া দিয়েছে বিক্রির জন্য এনেছেন। দাম চাইছেন গড়ে ৩০০ টাকা। ব্যাপারীরা ১৫০ টাকা বলে চলে গেছেন।

ফেনীর সবচেয়ে বড় চামড়ার মোকাম পাঁচগাছিয়া বাজারের একাধিক ব্যবসায়ী জানান, ঢাকা থেকে তারা কোনো নির্দিষ্ট দর পাননি। তা ছাড়া ঢাকায় ট্যানারিতে বা বড় আড়তে চামড়া বিক্রি করে বকেয়া টাকা ৫ বছরেও আদায় করা যায় না।

সোনাগাজীর বাদুরিয়া গ্রামের আবুল বাসার জানান, ‘আগে কোরবানির পশুর চামড়ার কেনার জন্য গ্রামে একাধিক মৌসুমি ক্রেতা দেখা যেত। গত দু-তিন বছর থেকে চামড়া কিনতে গ্রাম কোনো মৌসুমি ক্রেতার দেখা মেলেনি। এ বছর সারা দিনেও চামড়া কেনার জন্য কাউকে পাওয়া যায়নি। তারা তাদের কোরবানির পশুর চামড়া স্থানীয় মাদরাসায় দিয়ে দিয়েছেন।

রবিবার সন্ধ্যায় ফেনী সদর উপজেলার কালিদহ এলাকার মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ী আলী হোসেন জানান, তিনি গড়ে ৩৫০ টাকা করে ১১টি বড় গরুর চামড়া কিনে ফেনী শহরের ট্রাংক রোডে গড়ে ৫০ টাকা লাগে ৪০০ টাকা করে বিক্রি করতে হয়েছে। তবে সংগ্রহ খরচ বাদ দিলে কোনো লাভই হয়নি।

একটি মাদরাসা তত্ত্বাবধায়ক নাম প্রকাশ না করে বলেন, স্থানীয় গরু ও মহিষের ৩৭০টি চামড়া সংগ্রহ করে পাঁচগাছিয়া বাজারের একটি বড় আড়তে নিয়ে গেলে তারা গড়ে ৩৩০ টাকা করে দাম দিয়েছেন।

শহরের শান্তি কোম্পানী রোডের ইসলামিয়া এতিমখানার সভাপতি কেবিএম জাহাঙ্গীর আলম জানান, তাদের এতিমখানায় পাওয়া ২৬৭টি ছোট-বড় চামড়া গড়ে ৩৭০ টাকা বিক্রি করেছেন। তারা কোনো ছাগলের চামড়া সংগ্রহ করেননি।

পাঁচগাছিয়া বাজারের বড় আড়তদার নিজাম উদ্দিন দাবি করেন, তিনি এ বছর গড়ে ৩৫০-৪৫০ টাকায় ১০ হাজার গরু-মহিষের চামড়া ক্রয় করেছেন।

অপর আড়তদার মো: নুর নবী জানান, তিনি গড়ে ৩৫০-৪০০ টাকা দরে প্রায় এক হাজার চামড়া কিনেছেন। ঢাকায় চামড়া বিক্রি করে পাঁচ বছরেও টাকা পাওয়া যায় না।

ব্যবসায়ীরা জানান, জেলায় একমাত্র তার ইউনিয়নের পাঁচগাছিয়া বাজারে চামড়ার ছোট বড় ৫৫-৬০ জন আড়তদার ছিলেন। গত কয়েক বছরে লোকসানের কারণে অনেকেই ব্যবসায় গুটিয়ে নিয়েছেন। বর্তমানে মাত্র ১৪-১৫ জন আড়তদার টিকে রয়েছেন। চলতি বছর ৩৫০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৪৫০ টাকায় তারা প্রায় কয়েকহাজার চামড়া কিনছেন।

 

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: কন্টেন্ট সুরক্ষিত!!