fenirshomoy logo black


নিজস্ব প্রতিনিধি:

ফেনীতে তিনদিনব্যাপী প্রসবজনিত ফিস্টুলা সার্জারি ক্যাম্প ও সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে। ফেনী জেনারেল হাসপাতালের কনফেরেন্স কক্ষে হোপ ফাউন্ডেশন ও ফেনী জেনারেল হাসপাতালের যৌথ উদ্যোগে গতকাল বুধবার সকালে প্রসবজনিত ফিস্টুলা নির্মূলের উপর কর্মশালায় বিস্তারিত তুলে ধরেন হোপ হাসপাতালের ফিস্টুলা সার্জন ডা. নৃন্ময় বিশ্বাস। কর্মশালায় সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মাদ রুবাইয়াত বিন করিম, পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের উপপরিচালক মো: মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী, ফেনী জেনারেল হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ডা. কামরুজ্জামান, সিনিয়র কনসালটেন্ট (এনেস্থেসিয়া) ডা. আব্দুল্লাহ আব্বাসি, কনসালটেন্ট (গাইনি) ডা. তাহিরা খাতুন রোজি প্রমুখ বিভিন্ন বিভাগের সিনিয়র কনসালটেন্ট, কনসালটেন্ট, আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার, সিনিয়র স্টাফ নার্স, মিড ওয়াইফ সহ অন্যান্য কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।


ডা. নৃন্ময় বিশ্বাস বলেন, মেয়েদের অল্প বয়সে বিয়ে ও বাড়িতে অপ্রশিক্ষনপ্রাপ্ত দাই দ্বারা ডেলিভারী করানোর কারণে ফিস্টুলার ঝুঁকি বেড়ে যায়। এ রোগ হলে মেয়েরা পরিবার ও সমাজ থেকে নানান ধরনের বঞ্চনার শিকার হয়। এ রোগে আক্রান্ত হলে মায়েদের সব সময় প্রসব অথবা পায়খানা নির্গত হয়। প্রসবজনিত ফিস্টুলা হলো মূত্রাশয় এবং/অথবা মলদ্বারের মধ্যে একটা ক্ষত/গর্ত যার ফলে অনবরত প্রস্রাব/পায়খানা নির্গত হয়। যদি কোন কারণে গর্ভবতী মায়েদের বাচ্চা প্রসবে বাধাগ্রস্ত হয় অথবা অতিরিক্ত বিলম্ব হয়, তাহলে প্রজনন অঙ্গের বিভিন্ন স্থানে রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে যায়, পেশী নষ্ট হয়ে যায় এবং অনেক সময় পেশী পচে যায়। পচনযুক্ত সেই সব পেশই বাচ্চা প্রসবের ৫-৭ দিন পরে খসে পড়ে এবং সেখানে ছিদ্র সৃষ্টি হয়। এর ফলে তখন প্রস্রাবের ওপর কোনো নিয়ন্ত্রণ থাকে না। অনেক ক্ষেত্রে পায়খানার উপরও নিয়ন্ত্রণ থাকে না।


সভায় জানানো হয়, ফিস্টুলা একটি অত্যন্ত শারীরিকভাবে বেদনাদায়ক ও মানসিকভাবে ক্ষতিকর ব্যাধি। ফিস্টুলায় আক্রান্ত হওয়ার পর সময়ের সাথে সাথে পরিস্থিতি খারাপের দিকে যেতে থাকে। অনবরত মূত্র অথবা/এবং মল ঝরার কারণে শরীর থেকে সারাক্ষণ দুর্গন্ধ ছড়াতে থাকে। ফিস্টুলা আক্রান্ত মায়েরা শারীরিকভাবে স্বামীর সাথে সম্পর্ক রাখতে প্রায় অক্ষম। দীর্ঘদিন ফিস্টুলা আক্রান্ত মায়েরা প্রজনন অঙ্গে সার্বক্ষণিক প্রচন্ড ব্যাথা অনুভব করেন এবং স্নায়ুজনিত দুর্বলতার কারণে অনেক সময় চলাফেরা কষ্টকর হয়। গ্রামীণ জনপদের যেখানে স্বাস্থ্য সচেতনতা কম সেখানে প্রসবজনিত ফিস্টুলা সর্ম্পকে ভালো ধারণা না থাকায় এটাকে এক ধরনের নিয়তির অভিশাপ মনে করা হয়। সাধারণত স্বামীরা তাদের পরিত্যাগ করে। অনেকসময় বাবা/মা বা অন্যান্য নিকট আত্বীয়দের কাছেও আশ্রয় পান না। সমাজের প্রত্যেক স্তরেই তারা নিগৃহীত হন। একজন ফিস্টুলা রোগীর যে ধরনের মানসিক বিষন্নতা, উদ্ব্যেগ এবং অশান্তি অনুভব করেন সেটা খুবই ভয়াবহ।


সেমিনারে ফেনী জেনারেল হাসপাতালের কর্তব্যরত ডাক্তার, নার্স ও শিক্ষানবিশ নার্সরা অংশগ্রহণ করে। গত বুধবার থেকে শুরু করে এই ক্যাম্প আগামী তিনদিন ফেনী জেনারেল হাসপাতালে চলমান থাকবে বলেন হোপ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। হোপ ফাউন্ডেশন প্রসব জনিত ফিস্টুলা রোগীর সম্পূর্ণ ফ্রি চিকিৎসা করে থাকে।


Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: কন্টেন্ট সুরক্ষিত!!