নিজস্ব প্রতিনিধি :
ফেনী জেলা শহরের পাড়া-মহল্লা সহ গ্রামাঞ্চলে নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়েছে কিশোর গ্যাং। সবশ্রেণির মানুষের কাছে তারা এখন আতংকের নাম। তাদের অত্যাচারে ভীতসন্ত্রস্ত সাধারণ মানুষ। প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও তারা নানা অঘটন ঘটাচ্ছে। খুন, ছিনতাই, অপহরণ সহ এমন কোনো অপকর্ম নেই যা তারা করছে না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নানামুখী তৎপরতার পরও নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না কিশোর অপরাধীদের। দু’একটি ঘটনা প্রকাশ্যে এলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জড়িতদের গ্রেফতার করলেও দল ভারী করতে কথিত বড় ভাইরা এসব কিশোরদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়ে থাকেন। সন্তানদের বিপথগামী হওয়ার আশংকায় উদ্বিগ্ন রয়েছেন অভিভাবক সহ সচেতন মহল।
সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্র ও একাধিক ব্যক্তির সাথে কথা বলে জানা গেছে, শহরের প্রায় প্রতিটি স্কুলেই রয়েছে কিশোর গ্যাংয়ের বিভিন্ন গ্রুপ। তারা প্রতিদিন বিকালে পাড়ার মোড়, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান কিংবা বাড়ির প্রবেশমুখে দলবেঁধে অবস্থান নেয়। এর মধ্যে শহরের মিজান রোডের ফজল মাষ্টার লেনের আলীয়া মাদরাসার নির্মাণাধীন নতুন ভবনের সামনে, শান্তি কোম্পানী রোড, ফালাহিয়া মাদরাসা, পাঠানবাড়ি, কুমিল্লা বাস স্ট্যান্ড এলাকার আয়কর অফিসের আশপাশ, সালাহউদ্দিন মোড়, পুলিশ কোয়ার্টার, শাহীন একাডেমী, রামপুর, পশ্চিম উকিলপাড়া, সেন্ট্রাল হাই স্কুল, ডাক্তারপাড়া, মাষ্টারপাড়া এলাকায় তাদের দৌরাত্ম বেশী। শুধু ছেলেরাই নয়, মেয়েদের একাধিক গ্যাং এর তৎপরতা ইতিমধ্যে নজরে এসেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর।
সরেজমিনে দেখা গেছে, শান্তি কোম্পানী সড়ক ও মিজান রোডের বিভিন্ন চা-দোকানের ভেতর কিশোরদের আড্ডাবাজি চলছে। রাস্তার পাশে দোকানগুলো থেকে চলাচলরত স্কুলছাত্রীদের উত্ত্যক্ত করে আড্ডাবাজ এসব কিশোর। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছুটির সময় গেইটে দাঁড়িয়ে দলবেঁধে আড্ডা দেয় তারা।
গত শুক্রবার ছাগলনাইয়া উপজেলার শুভপুর বাজারে বোনকে উত্ত্যক্তের প্রতিবাদ করায় রবিউল হক সাহেদ নামে একজনকে ছুরিকাঘাতে খুন করা হয়। এ ঘটনায় পুলিশ ১০ জনকে গ্রেফতার করে। তারা সবাই কিশোর গ্যাং এর সাথে সম্পৃক্ত।
শহরের মডেল হাই স্কুলের এক ছাত্রকে ধরে নিয়ে ডাক্তারপাড়ায় বেদড়ক পেটায় কিশোর গ্যাং সদস্যরা। ঘটনাটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাৎক্ষনিক জড়িতদের আইনের আওতায় নিয়ে আসে। সাম্প্রতিক সময়ে র্যাবের অনুসন্ধানে ২২টি কিশোর গ্যাংয়ের নাম বেরিয়ে এসেছে।
সূত্র আরো জানায়, গত বছর ফুটবল খেলা নিয়ে বাকবিতন্ডার জেরে দাগনভূঞা উপজেলার জায়লস্কর ইউনিয়নের নুরুল্লাপুর এলাকার সজিব নামে একজনকে ডেকে নিয়ে ছুরিকাঘাতে খুন করে কয়েকজন। পরে পুলিশ কিশোর গ্যাং ও মদদদাতাদের গ্রেফতারে অভিযান শুরু করলে কিছুটা কমে যায় তাদের দৌরাত্ম্য।
ফেনীস্থ র্যাব-৭ এর স্কোয়াড্রন লীডার মোহাম্মদ সাদেকুল ইসলাম জানান, গ্যাং কালচার প্রতিরোধে তারা নিয়মিত টহল অভিযান অব্যাহত রেখেছেন। বিভিন্ন এলাকায় অভিযানে গেলেও তারা সরে পড়ে। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
ফেনীর পুলিশ সুপার জাকির হাসান বলেন, কিশোর গ্যাং এর বিষয়ে এলাকাভিত্তিক খোঁজ নেয়া হচ্ছে। কোথাও অস্বাভাবিক জটলা দেখলে তাদের ধরে এনে সচেতনতা স্বরূপ কাউন্সিলিং করা হচ্ছে। তবে অপরাধ করলে কেউ পার পাবার সুযোগ নেই।