আরিফ আজম :
এএসএম ফসিউল আলম। গ্রামের বাড়ি নোয়াখালী জেলায় হলেও দীর্ঘদিন শিক্ষকতা করেন চট্টগ্রামে। চট্টগ্রামের লতিফপুর আলহাজ¦ আবদুল জলিল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পদে থাকা ফসিউল ২০২৪ সালে ফেনী সেন্ট্রাল হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নেন। লিখিত পরীক্ষায় অংশ নেয়া ১১ জনের মধ্যে প্রথম স্থান অর্জন করেছিলেন তিনি। অথচ ওই পরীক্ষায় পঞ্চম স্থান অর্জন করেছিলেন বালিগাঁও উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক সহকারি প্রধান শিক্ষক গিয়াস উদ্দিন। বিষয়টি নিয়ে তৎকালীন সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামীলীগ সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন হাজারীর কাছে ম্যানেজিং কমিটি ৫ জনের তালিকা উত্থাপন করেন। গিয়াস উদ্দিন বালিগাঁও ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হওয়ায় তাকেই নিয়োগের সিদ্ধান্ত দেন নিজাম হাজারী।
এ চিত্র শুধু ফেনী সেন্ট্রাল হাই স্কুলেই নয়, জেলা সদর সহ অপরাপর উপজেলা পর্যায়ের বিভিন্ন মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এমন নৈরাজ্যকর পরিস্থতি তৈরি হয়।
নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, কাজিরবাগ হাজী দোস্ত মোহাম্মদ উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারি প্রধান শিক্ষক ছিলেন রহিম উল্যাহ চৌধুরী। তিনি ফেনী মডেল উচ্চ বিদ্যালয়, সোনাপুর উচ্চ বিদ্যালয় ও কালিদহ এসসি উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক পদে আবেদন করেন। কালিদহে নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নিয়ে প্রথম স্থান অর্জন করলেও তাকে নিয়োগ দেয়া হয়নি। তদস্থলে নিয়োগ পান রুহুল আমিন। সোনাপুরে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে না দেয়ায় উত্তম কুমার দাস প্রধান শিক্ষক হন।
সূত্র জানায়, তৎসময়ের সদর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সাইফুল ইসলামের হাত দিয়েই এ নিয়োগ-বাণিজ্য হতো। কোন ধরনের নিয়মনীতি না থাকলেও ৫ জনের তালিকা করা হতো। ওই তালিকা থেকে আওয়ামীলীগের পদবীধারী কিংবা সমর্থিতদের নিয়োগ দেয়া হয়।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, সদর উপজেলার পাঁচগাছিয়া এ জেড খান স্মৃতি উচ্চ বিদ্যালয়ে ফকির আহম্মেদ ফয়েজ, শহীদ মেজর সালাহউদ্দিন বীর উত্তম উচ্চ বিদ্যালয়ে শামীম আক্তার, গোবিন্দুপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে জুলফিকার আলী, লেমুয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে মো: সাহেদ আলী, পাঁচগাছিয়া ইউনিয়নের বিজয়সিংহ উচ্চ বিদ্যালয়ে স্বপন কুমার দাস, সরিষাদি উচ্চ বিদ্যালয়ে জাফর আহম্মদ, সারিষাদি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে আনোয়ার হোসেন, এলাহীগঞ্জ মমতাজ উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ে একেএম শেফায়েত উল্যাহ, মধুয়াই উচ্চ বিদ্যালয়ে মো: শাহাজাহান, জায়লস্কর উচ্চ বিদ্যালয়ে বেলাল হোসেন মিয়াজী আওয়ামীলীগের সাইনবোর্ড ব্যবহার করে মোটা অংকের টাকার দিয়ে প্রধান শিক্ষক পদ ভাগিয়ে নেন।
একইভাবে সহকারি প্রধান শিক্ষক পদে সরিষাদি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে মৃণাল কান্তি দেবনাথ, বালিগাঁও উচ্চ বিদ্যালয়ে আনোয়ার হোসেন, সোনাপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে রাখাল চন্দ্র দাস, লেমুয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে অরুণ চন্দ্র পাল নিয়োগ পান। এছাড়া জেলার গ্রামাঞ্চলের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও এমন নৈরাজ্য চলে।
৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর নিজাম হাজারী পালিয়ে যাওয়ায় বৈষম্য বিরোধী ছাত্ররা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে অবৈধভাবে নিয়োগ পাওয়া প্রধান শিক্ষকদের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করেছে। ইতিমধ্যে ছাত্রদের আন্দোলনের মুখে বাধ্য হয়ে শামীম আক্তার শহীদ মেজর সালাহউদ্দিন হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন। শুধু তাই নয়, ছাত্রদের প্রতিবাদের মুখে পাঁচগাছিয়া এ জেড খান স্মৃতি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফকির আহম্মদ ফয়েজ স্কুলে যাচ্ছেন না। ইতিমধ্যে তার নেতৃত্বাধীন জেলা শিক্ষক সমিতির কমিটিও বিলুপ্ত করে দিয়েছে ছাত্ররা। জায়লস্কর উচ্চ বিদ্যালয়ে বেলাল মিয়াজী যাচ্ছেন না।
মঙ্গলকান্দি বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রহিম উল্যাহ চৌধুরী বলেন, কোন রাজনৈতিক দলের সাথে সম্পৃক্ত না থাকায় সদর উপজেলার কোন প্রতিষ্ঠানে প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগ দেয়া হয়নি।
ফেনী সেন্ট্রাল হাই স্কুলে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় বঞ্ছিত এএসএম ফসিউল আলম বলেন, ২০০৪ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত দীর্ঘসময় মাহবুবুল হক উচ্চ বিদ্যালয়ে সহকারি প্রধান শিক্ষক হিসেবে শিক্ষকতা করেছি। লতিফপুর আলহাজ¦ আবদুল জলিল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পদে থাকলেও সহকর্মীদের অনুরোধে ফেনী সেন্ট্রাল হাই স্কুলে নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নিই। পরীক্ষার পরপরই নিয়োগ বোর্ড ফলাফল ঘোষণা করার নিয়ম থাকলেও তারা সেটি না করে লুকোচুরি করায় যোগ্যতার মূল্যায়ন হয়নি বলে মনে হয়েছে।