শহর প্রতিনিধি :
ফেনীতে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় ক্ষয়ক্ষতি সঠিকভাবে নিরুপন করতে হলে প্রতিটি ঘর-বাড়িতে যেতে হবে। ক্ষতিগ্রস্তদের সঙ্গে কথা বলে সঠিক তথ্য তুলে ধরতে হবে। ইতিমধ্যে জেলা প্রশাসন ক্ষয়ক্ষতির যে তথ্য দিয়েছেন তা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন রয়েছে। একইভাবে ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনে সরকারি-বেসরকারি সমন্বিত উদ্যোগ জরুরী। এছাড়া ভবিষ্যতে যাতে এ ধরনের ভয়াবহতার মুখোমখি হতে না হয় সেজন্য জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আলোচনা করতে হবে।
শনিবার ফেনী সদর উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স এন্ড ডেভেলপমেন্ট আয়োজিত ‘ফেনীর বন্যা: পুনর্বাসন ও করণীয়’ শীর্ষক নাগরিক সভায় এসব বলেন বক্তারা।
তারা আরো বলেন, স্থায়ী ও টেকসই বাঁধ নির্মাণ করতে হবে। অতীতে বাঁধ নির্মাণের নামে লুটপাট করা হয়েছে। প্রতিবারে বাঁধ সংস্কারের কথা বলা হতো, কিন্তু তার কোন স্থায়ী সমাধান হতো না। ফলে প্রতিবছর বন্যার মুখোমুখি হতে হয়। বিশেষ করে এ মূহুর্তে যেটা প্রয়োজন তা হলো মাটির যে বাঁধগুলো তা সংস্কার করা। এ মূহুর্তে ভেঙে যাওয়া বাঁধগুলোর দ্রুত সংস্কার প্রয়োজন। না হয় আমরা আবারো ভারী বৃষ্টি হলে যেকোন মূহুর্তে বন্যার কবলে পড়ে যাবো।”
বক্তারা আরো বলেন, “এবারের ফেনীতে যে ভয়াবহ বন্যা তাতে সমন্বয়হীনতা ছিল। ফলে ত্রাণ বন্টন ঠিকমত হয়নি। বাহিরে থেকে যে সকল স্বেচ্ছাসেবক আসছিল তাদের থাকার জায়গা ছিল না। খাওয়ার জায়গা ছিল না। তারা কোথায় যাবে সেটাও জানতো না। এসব জেলা প্রশাসকের সমন্বয়হীনতার কারণে হয়েছে। এছাড়া এ বন্যায় আমাদের জন্য সবচেয়ে বড় সমস্যা যেটা হয়েছিল তা হলো মোবাইল নেটওয়ার্ক। মোবাইল নেটওয়ার্ক না থাকার কারণে কেউ কারো সাথে যোগাযোগ করতে পারেনি। এজন্য সমস্যা আরো বেড়েছে। এজন্য এমন পরিস্থিতি তৈরি হলে নেটওয়ার্কের জন্য বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এছাড়া পুনর্বাসনের ক্ষেত্রে জেলা প্রশাসন থেকে ১০ লাখ মানুষ ক্ষয়ক্ষতির মুখোমুখি হয়েছে বলে আমরা জানতে পারছি। এজন্য এখানে আমরা মনে করি, ফেনীতে কমবেশি সবাই ক্ষতিগ্রস্থ। কিন্তু এক্ষেত্রে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে তালিকা করে যারা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ তাদের গুরুত্ব দিতে হবে। এছাড়া মানুষ যাতে ঘুরে দাঁড়াতে পারে তার জন্য কম সুদে ঋণ দিতে হবে। পাশাপাশি বিনামূল্যে কৃষি উপকরণ বিতরণ করতে হবে।”
সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন ফেনীর পুলিশ সুপার মো: হাবিবুর রহমান। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক নিয়াজ উদ্দিনের সভাপতিত্বে আরো বক্তব্য রাখেন সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো: নাজমুল হাসান, দৈনিক ফেনীর সময় সম্পাদক ও সুজন এর ফেনী জেলা সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ শাহাদাত হোসেন, জেলা জামায়াতের প্রচার সম্পাদক আ.ন.ম আব্দুর রহীম, ফেনী প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি একেএম আব্দুর রহিম ও মুহাম্মদ আবু তাহের ভূঁইয়া, দৈনিক ফেনী সম্পাদক আরিফুল আমিন রিজভী, ফেনী সরকারি কলেজ দর্শন বিভাগের প্রভাষক মীর হোসেন মজুমদার, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আব্দুল আজিজ, এনজিও প্রতিনিধি ইসলামিক এইড বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক আবু তাহের নাসির, স্বেচ্ছাসেবক ওসমান গনি রাসেল, এনজিও প্রতিনিধি আমিরুল ইসলাম, জাহাঙ্গীর কবির, ফয়সাল প্রমুখ।
পুলিশ সুপার মো: হাবিবুর রহমান বলেন, “আমি যেটা মনে করি সেটা হলো সমন্বয়। সমন্বয় সঠিকভাবে করতে পারি তাহলে কার কি দরকার তা আমরা বুঝতে পারবো। সমন্বয়ের জন্য প্রয়োজনে মনিটরিং সেল গঠন করতে হবে। অর্থাৎ অনেকে বলতে পারে এত টাকা দিয়েছে, এত টাকা বিতরণ করেছে।এগুলা মনিটরিং হয়েছে কিনা তা নিশ্চিত করতে হবে।”
মোহাম্মদ শাহাদাত হোসেন বলেন, সরকারিভাবে করা ক্ষয়ক্ষতির হিসেবে যথেষ্ট গরমিল আছে। এই হিসেবের স্বচ্ছতা জরুরি। আগামী বর্ষার আগে আগে মুহুরী-কহুয়া বাঁধ নির্মাণ করতে হবে।
আ.ন.ম আবদুর রহীম বলেন, পুনর্বাসনের পাশাপাশি বাঁধ নির্মাণ অগ্রাধিকার ভিত্তিতে করা দরকার, কারণ পুনর্বাসন করতে করতে আবার বন্যা চলে আসতে পারে আবার। কৃষি উদ্যোক্তাদের সহজ শর্তে লোন দিতে হবে।
আরিফুল আমিন রিজভী বলেন, ক্লাস্টার ভিত্তিক এনজিও সমন্বয় করে পুনর্বাসন করতে হবে, না হয় একই কাজ অনেকেই করবে আর কিছু কাজ কেউ করবে না।
মীর হোসেন মজুমদার নাহিদ বলেন, পুনর্বাসনের ক্ষেত্রে সকল দফতরের লোকের সমন্বয়ে কাজগুলো করতে হবে, তাহলে লোকবল সংকটও থাকবেনা এবং কাজগুলোও যথাযথ হবে।
আবদুল আজিজ বলেন, দ্রুত সময়ের মধ্যে শিক্ষার্থীদের মাঝে বই সহ সকল শিক্ষা উপকরণ বিতরণ করা প্রয়োজন।
আবু তাহের নাসির বলেন, পুনর্বাসনের জন্য সরকারী পর্যায়ে আরও ভালোভাবে সমন্বয় করতে হবে এবং শক্ত মনিটরিংও দরকার।
ওসমান গণি রাসেল বলেন, বন্যা পরবর্তী পুনর্বাসনে ব্যাবসায়ীদের সবার আগে অগ্রাধিকার দিতে হবে।