দৈনিক ফেনীর সময়

ফেনীর মসলার বাজারে অস্থিরতা

নিজস্ব প্রতিনিধি :

চাল, ডাল, আটা, ময়দা ও তেলের মতো নিত্যপণ্যের বাজার খানিকটা স্থিতিশীল থাকলেও মাছ, মাংস ও ডিমের বাজারে উচ্চ মূল্য বিরাজ করছে। ডিমের বাজার মূল্য কোন ভাবেই কমছেনা। সেই সঙ্গে সবজির বাজার মূল্যেও বেশ চড়া গতি লক্ষ্য করা গেছে। মূল্যস্পিতির এই সময়ে কোরবানির ঈদ সমাগত। আরমাত্র চারদিন পরেই ঈদুল আযহা। ঈদ সামনে রেখে মসলার বাজারে মেজাজ হারাবার দশা সাধারণ ক্রেতাদের। পেঁয়াজ-রসুন থেকে শুরু করে এলাচি-লবঙ্গের মতো মসলায় চড়া দাম হাঁকছেন বিক্রেতারা। আমদানি নির্ভর প্রায় ধরনের মসলায় ঐ এক অজুহাত সরবরাহ কম, আমদানিতে উচ্চ শূল্কে মূল্য বৃদ্ধি ঘটছে। ছাপার অক্ষরের মত কথাগুলো যেন মজ্জাগত। অন্যদিকে খুচরা দোকানীরা দোষ চাপেন আড়ৎদার তথা মহাজনের দিকে। গুদাম ভর্তি মালামাল থাকলেও উচ্চ মূল্য ধরতে সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছে।

বাজারে বিভিন্ন ধরনের মসলা পাওয়া যায়। তার মধ্যে সরেজমিনে ১১ ধরনের মসলার চলতি বাজার মূল্যের খোঁজ খবর নেন এই প্রতিবেদক। গতকালের ফেনীর পাইকারী বাজার মূল্য ছিলো প্রতি কেজিতে দেশি শুকনা মরিচ ২৮০-৩২০, দেশি হলুদ ২৮০-৩১০, দেশি পেয়াজ ৮০-৮৫, রসুন দেশি ২০০-২২০, দেশি আদা ২৫০-২৮০, তেজপাতা ১৩০, দারুচিনি ৪৯০-৫৫০, লবঙ্গ ১৭৫০, এলাচ ২৮০০-৩২০০, জিরা ৭০০-৭৫০ টাকা। তবে বরাবরের মত কিছু পণ্যের মূল্য বিগত বছর গুলোর তুলনায় প্রায় ১৫-২০% বেশি। কিছু পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল। যেমন তেজপাতা, দারুচিনি, পেয়াজ, হলুদ ও মরিচের বাজার বিগত বছরের সাথে সামঞ্জস্য পূর্ণ বলে প্রতীয়মান হয়েছে। তবে সব থেকে এলাচের বাজার অগ্নি মূল্যে ঠেকেছে বলা যায়। ২০২৩ সালের কোরবানের সময় ২২০০-২৬০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে মর্মে তথ্যে উঠে এসেছে। কিন্তু চলতি বছর ২৮০০-৩৪০০ টাকা প্রতি কেজি মূল্য পাইকারিতে বিক্রি হচ্ছে। তবে খুচরায় ৪০০০ টাকা পর্যন্ত ঠেকছে। এ তথ্য দিয়েছেন শেখ এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী স্বপন শেখ।

সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) গত বছর ২০২৩ এর একই সময়ে বাজারদরের তালিকা অনুযায়ী, বাজারে প্রতি কেজি জিরা বিক্রি হয় ৯৫০ থেকে ১ হাজার ১০০ টাকায়। চলতি বছর ৭০০-৭৫০ টাকা। সেই হিসাবে জিরার দাম কমেছে। এলাচি ও লবঙ্গের দাম উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বেড়েছে। ছোট আকারের এলাচির কেজি এখন ২ হাজার ৮০০ থেকে ৩ হাজার ৫০০ টাকা। এক বছর আগে এ দাম ছিল ২ হাজার ২০০ থেকে ২ হাজার ৮০০ টাকা।

বাজারে দেশীয় রসুনের কেজি ২০০ থেকে ২২০ টাকা। টিসিবি’র হিসাবে- গত বছরে এর দাম ছিল ১৩০ থেকে ১৫০ টাকা। এক বছরে দাম বেড়েছে ৫০ শতাংশ। আমদানিকৃত রসুন বিক্রি হচ্ছে ২১০ থেকে ২৪০ টাকা কেজিতে। গত বছরে এই রসুনের দাম ছিল ১৩০ থেকে ১৫০ টাকা। এক বছরে আমদানিকৃত রসুনের দাম বেড়েছে প্রায় ৬১ শতাংশ। বাজারে প্রতি কেজি পিয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৭৫ থেকে ৮৫ টাকায়। টিসিবি’র হিসাবে, গত বছর এই পিয়াজের দাম ছিল ৭৫ থেকে ৮০ টাকা। এক বছরে পিয়াজের দাম বেড়েছে ৩.২৩ শতাংশ।
বাজারে প্রতি কেজি দেশীয় আদার দাম ২৮০ থেকে ৩৫০ টাকা। টিসিবি’র হিসাবে, গত বছর দাম ছিল ৩৮০ থেকে ৪০০ টাকা। আমদানিকৃত আদা ২২০ থেকে ২৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। গত বছরে এর দাম ছিল ২৮০ থেকে ৩৫০ টাকা। দেশি এবং বিদেশি উভয় আদা’র বাজার মূল্য কম আছে।

জিরার দাম সামান্য কমেছে। প্রতি কেজি জিরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকা। টিসিবি’র হিসাবে, গত বছরে এর দাম ছিল ৮০০ থেকে ৮৫০ টাকা। বছর ঘুরে দেশীয় জাতের শুকনা মরিচের দাম কমলেও বেড়েছে আমদানিকৃত মরিচের দাম। দেশীয় জাতের শুকনা মরিচ ২৮০ থেকে ৩৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। গত বছরে এর দাম ছিল ৪০০ থেকে ৪৬০ টাকা। আমদানিকৃত শুকনা মরিচের কেজি ৪২০ থেকে ৫০০ টাকা, গত বছর ছিল ৪০০ থেকে ৪৬০ টাকা।

পাইকারী বাজারে মসলার বাজার মূল্য যেমনটা স্থিতিশীল দেখাযায় খুচরায় সেই মূল্য অবিশ্বাস্য রকমের তেলেসমাতিতে ভরা। দাগনভূঞা উপজেলার সিলোনীয়া বাজারের মুদি দোকানী নিজাম উদ্দিন জানান, পাইকারীতে আমরা মসলা কিনি ২ থেকে ৫ কেজির চালানে কিন্তু খুচরায় ৫০ গ্রাম ১০০ গ্রাম করে বিক্রি করতে করতে কেজিতে টান পড়ে। এই ঘাটতি পূরণ করতে আমরা খুচরায় কিছু বাড়তি মূল্য ধরি।

রোজি আক্তার নামে এক গৃহিনী জানান, মসলার বাজার যাই হেক না কিনে তো উপায় নাই।

বেসরকারি স্কুল শিক্ষক নেয়ামুল করিম বাবলু বলেন, দাম বেশ চড়া। বাজার মনিটরিং জোরদার করা গেলে স্বস্তি ফিরে আসবে।

অন্যদিকে কোরবানির ঈদের অজুহাতে দাম বাড়ছে শশা, কাঁচা মরিচ ও লেবুর। বুধবার খুচরায় শশা বিক্রি হয়েছে ৭০ টাকায়, দুইদিন আগে ছিলো ৪৫ থেকে ৫০ টাকা, কাঁচা মরিচ ১৮০ থেকে ২২০ টাকা, লেবুর হালি আকার ভেদে ৪০-৭০ টাকা। বাজার মূল্য স্থিতিশীল রাখতে সরকারী পর্যায়ে মনিটরিং বাড়ানো দরকার বলে সচেতন মহল মনে করেন।

শহরের তাকিয়া সড়কের রবি এন্ড ব্রাদার্স, বড় বাজারের আইয়ুব এন্টারপ্রাইজ, ভূঁইয়া এন্টারপ্রাইজ ও সবজি বাজারের সমির বাবুর দোকানে গিয়ে দেখা যায়, যেখানে এক থেকে দেড় মাস পূর্বে এলাসি প্রতি কেজি বিক্রি হতো ২ হাজার ৪শ থেকে ২ হাজার ৫শ কিংবা ২ হাজার ৬শ টাকায়, সেখানে এখন তা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার টাকা থেকে ৩ হাজার ৫শ টাকায়। ভূঁইয়া এন্টারপ্রাইজ এর জসিম জানান, তার দোকানে সিরিয়ার এলাসি বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার ৪শ টাকায়, আগে ছিল ২ হাজার ৮শ টাকায়। লবঙ্গ আগে যেখানে প্রতি কেজি বিক্রি হয়েছিল ১ হাজার ৩শ টাকা, তা এখন বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৮শ টাকায়। দারুচিনি যেখানে আগে বিক্রি হয়েছিল ৪শ থেকে ৪শ ৫০ টাকা তা এখন বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৫শ ৫০ থেকে ৬শ টাকায়। আদা প্রতি কেজি ১০ থেকে ২০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ২শ ৪০ টাকা ২শ ৫০ টাকায়। এবং গোল মরিচ আগে যেখানে বিক্রি হয়েছিল ৭শ টাকায়, তা এখন প্রতি কেজি বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৯শ টাকায়। তবে তেজি মরিচ আগের মতই ৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

দাম বাড়ার বিষয়ে জানতে চাইলে বড় বাজারের রবি এন্ড ব্রাদার্সের রবি জানান, “দাম ঠিক নেই। এগুলো কিছু সময় স্থির থাকে। গত কয়েকদিন ভাড়া-কমার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এখন সকালে কমছে তো বিকালে আবার বাড়ে এভাবে চলছে।”

ভূঁইয়া এন্টারপ্রাইজের জসিম বলেন, “দাম ঠিক নেই। কিছুদিন আগে কম ছিল। এখন বাড়ছে। আবার হয়তো কমবে। দাম জেনে আপনারা কি করবেন। আমরা বরং আগের দিন দেখি দাম এত, আমরা এত দিয়ে কিনে পরে দেখি কমে গেছে। আমাদের কম দিয়ে বিক্রি করতে হয়। এগুলাতো আপনারা দেখেন না।”

সবজি বাজারের সমির বাবু বলেন, “১০ থেকে ২০ টাকা বেশি দামে আদা বিক্রি করতেছি। লাভ তেমন হয় না। এখানে ৫ টাকা লাভ হয় আরকি। এখন দাম কমলে তো এটাও লাভ হয়।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: কন্টেন্ট সুরক্ষিত!!