ইমরান ইমন
গণমাধ্যমকে বলা হয়ে থাকে রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ। গণমাধ্যমকে যেহেতু রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ বলে আখ্যা দেয়া হয়েছে তাহলে বুঝার আর বাকি থাকে না যে একটা রাষ্ট্রের সার্বিক উন্নতি, অগ্রগতি ও সমৃদ্ধিতে গণমাধ্যমের গুরুত্ব কতটুকু। গণমাধ্যম একটি রাষ্ট্রের গণতন্ত্রের বিকাশ, সুশাসন প্রতিষ্ঠা তথা সার্বিক উন্নয়নের সহায়ক অংশীদার। আর সে মহান ব্রত হৃদয়ে লালন করে বাংলাদেশের অন্যতম উর্বর জনপদ ফেনীতে’ একটা দৈনিক পত্রিকা প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখেন এক তরুণ। যার নাম মোহাম্মদ শাহাদাত হোসেন। প্রবাদ প্রচলিত আছে- ‘মানুষ প্রকৃতপক্ষে যা মন থেকে চায়, একসময় তাই পায় বা তাই হয়ে উঠে।” ফেনীর সময় সম্পাদক মোহাম্মদ শাহাদাত হোসেনের বেলায়ও তার ব্যতয় ঘটেনি। ২০০৯ সালের ১৭ জুন স্বপ্নবাজ মোহাম্মদ শাহাদাত হোসেনের সে স্বপ্নের প্রতিফলন ঘটলো। ‘দৈনিক ফেনীর সময়’ প্রতিষ্ঠা লাভ করলো। আর ফেনী জনপদের বুকে সূচিত হলো এক নতুন ইতিহাসের। সে ইতিহাস দৈনিক ফেনীর সময়’কে ঘিরেই।
এগিয়ে থাকার প্রত্যয় নিয়ে ২০০৯ সালের ১৭ জুন যে ফেনীর সময়’ পত্রিকাটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ২০২২-এ এক যুগ অতিক্রম করে নন্দিত সময়ে এসেও ফেনীর সময় অন্য সবার থেকে এগিয়ে সুপ্রতিষ্ঠিত পাঠকনন্দিত একটি পত্রিকা। একটা পত্রিকা কেমন সেটা পাঠকই বিচার করে। পাঠকের আস্থার উপরেই একটা পত্রিকার অস্তিত্ব নির্ভর করে। দৈনিক ফেনীর সময় সে পাঠকপ্রিয়তা পেয়েছে বলে, গণমানুষ ফেনীর সময়-এ আস্থা রেখেছেন বলেই পত্রিকাটি এক যুগ ধরে টিকে থাকতে পেরেছে। পাঠকের ভালোবাসা, পাঠকপ্রিয়তা, পাঠকের আস্থা নিয়ে ফেনীর সময় যুগ থেকে যুগান্তরে টিকে থাকবে এটা আমাদের প্রত্যাশা।
দৈনিক ফেনীর সময় মূলত একটি আঞ্চলিক পত্রিকা। আঞ্চলিক ঘটনাপ্রবাহকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয় ফেনীর সময়। আঞ্চলিক খবরের পাশাপাশি দৈনিক ফেনীর সময় জাতীয় ও আন্তর্জাতিক গুরুত্বপূর্ণ খবরসমূহ গুরুত্ব দিয়ে ছাপে। নিয়মিত চার পাতা নিয়ে ছাপা হয় এই পত্রিকাটি। কিন্তু জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ দিবস-উৎসব এবং বিশেষ বিশেষ দিবসসমূহে ফেনীর সময় আয়োজন করে বিশেষ সংখ্যার। যেমন- ঈদ সংখ্যা, নববর্ষ সংখ্যা, ভাষা দিবস সংখ্যা, বিজয় দিবস সংখ্যা, স্বাধীনতা সংখ্যা, সুবর্ণজয়ন্তী সংখ্যা ইত্যাদি। তাছাড়া প্রতি সপ্তাহে সাহিত্য নিয়ে ‘সাহিত্য সময় নামে দৈনিক ফেনীর সময়-এর আয়োজন থাকে। যেটি অনেক জনপ্রিয়।
ফেনীতে অসংখ্য সংবাদমাধ্যম থাকলেও গণমানুষের আস্থা ফেনীর সময়-এর প্রতি। কেননা ফেনীর সময় গণমানুষের কথা বলে, দুষ্টের দমন শিষ্টের পালনে সহায়ক ভূমিকা রাখে। নিরপেক্ষ অবস্থানে থেকে সাহসী কন্ঠে সত্যকে সত্য, মিথ্যাকে মিথ্যা বলে যায় দৈনিক ফেনীর সময়। আর এজন্যই দৈনিক ফেনীর সময় গণমানুষের ভালোবাসা, আস্থা ও পাঠকপ্রিয়তা পেতে সক্ষম হয়েছে। অনেকেই আঞ্চলিক এই দৈনিককে প্রথম সারির জাতীয় দৈনিকের সাথে তুলনা করেন। অনেকেই এ পত্রিকাটিতে ‘ফেনীর প্রথম আলো’ বলেও আখ্যায়িত করে থাকেন। আর সে জন্যই এখন পর্যন্ত ফেনীর সর্বাধিক প্রচারিত পঠিত পত্রিকা দৈনিক ফেনীর সময়।
ফেনীর সময়-এর সাথে আমার পথচলা যেভাবে শুরু হলো- আমি ছোটবেলা থেকেই লেখালেখি করি। ষষ্ঠ শ্রেণী থেকে আমার লেখালেখির হাতেখড়ি। লেখা প্রকাশ বলতে তখন শুধু স্কুল দেয়ালিকাতে আমার লেখালেখি সীমাবদ্ধ ছিল। এরপর লিখতে লিখতে ২০১৫ সালে আমার প্রথম লেখা জাতীয় পত্রিকা দৈনিক প্রথম আলোতে ছাপা হয়। আর সেটি ছিল কবিতা। লেখালেখিতে তখন থেকে আগ্রহ দুর্বার বেগে বেড়ে যায়। প্রথম আলোর বিভিন্ন অংশে লেখা শুরু করে দিয়েছি। লেখালেখি চলছে আপন গতিতে। আমি প্রকৃতপক্ষে ভালোলাগা আর ভালোবাসা থেকে লিখতাম এবং এখনও লিখি। লেখালেখিকে আমি হৃদয় থেকে ভালোবেসে ফেলেছি যা আর ছাড়া সম্ভব না। এর মাঝে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে বিভিন্ন জায়গায় উত্তীর্ণ হয়ে অবশেষে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগে ভর্তি হওয়ার সিদ্ধান্তে উপনীত হই।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষে কেন্দ্রীয় লাইব্রেরিতে একদিন পত্রিকা পড়তে গিয়ে দেখি সম্পাদকীয় পাতায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্রের পরিচয়সহ কলাম ছাপা হয়েছে। সেদিন থেকে কলাম লেখার ব্রত হৃদয়ে লালন করতে শুরু করি। তখন অনেকটা মাতাল হয়ে উঠেছিলাম। এ বিষয়ে কয়েকজন বিজ্ঞ মানুষজন থেকে জ্ঞান নিলাম। আমার ব্যক্তিগত একটা প্রবণতা হলো আমি যেটাতে হাত দিই সেটা শেষ না করা পর্যন্ত থাকতে পারিনা। এরপর একদিন প্রথম আলোর মতামত অংশে আমার একটা কলাম ছাপা হয়। এরপর প্রথম আলো, মানবকণ্ঠ, জনকন্ঠ, ইত্তেফাক, যায়যায়দিন, ভোরের কাগজ, যুগান্তরের মতো পত্রিকাগুলোতে আমি নিয়মিত কলাম লিখা শুরু করেছি। পত্রিকায় লেখালেখির সুবাদে আমি তখন থেকে কিছুটা পরিচিত হতে শুরু করেছি এবং একটা পাঠকশ্রেণী তৈরি হলো। এর মাঝে আমার এক প্রিয় শিক্ষক যিনি আমাকে খুব স্নেহ করেন, যিনি আমাকে সবসময় লেখালেখিতে প্রেরণা যোগান– তিনি আমাকে একদিন বললেন- তুমি তো দেশের প্রথম সারির জাতীয় দৈনিকগুলোতে লিখো এটা আমাদের জন্য গর্বের। তুমি এখন থেকে তোমার নিজ জেলার সর্বাধিক প্রচারিত পাঠক নন্দিত দৈনিক ফেনীর সময়-এ লিখবা। আমার সে শিক্ষক দৈনিক ফেনীর সময়-এর সম্পাদক ও প্রকাশক মোহাম্মাদ শাহাদাত হোসেনের মুঠোফোন নম্বর দিয়ে যোগাযোগ করতে বললেন। আমি যোগাযোগ করলে সম্পাদক আমাকে অফিসে আসার আহ্বান জানান। আমি ফেনীর সময় অফিসে এসে আমার লেখালেখি সম্পর্কে এবং বর্তমান অবস্থান সম্পর্কে বলি।
উনি আমাকে বেশ অনুপ্রাণিত করলেন এবং সাহস জুগিয়ে বললেন- ‘তুমি এতদিন কোথায় ছিলে, তুমি তো আমাদের গর্ব, তোমার মতো মানুষেরই তো দেশ ও জাতির দরকার।’ উনার সঙ্গে কথা বলা অবস্থাতেই উনি আমাকে বলে উঠলেন- তোমার একটা লেখা দাও। কালকেই উপসম্পাদকীয়তে ছাপা হবে। যে কথা সে কাজ। পরদিন আমার লেখা ছাপা হলো দৈনিক ফেনীর সময়-এর উপসম্পাদকীয়তে। সে থেকে দৈনিক ফেনীর সময়-এর সাথে আমার পথচলা শুরু। দৈনিক ফেনীর সময় সম্পাদক মোহাম্মদ শাহাদাত হোসেন আমার ঘাড়ে তখন একটা দায়িত্ব চেপে ছিলেন। সেটা হলো প্রতি সপ্তাহে একটা করে লেখা দিতে হবে। আমার লেখালেখিতে এবং লেখক হিসেবে নিজের প্রতি দায়বদ্ধতা আরও বেড়ে গেল। এখন তো নিয়মিতই লিখতে হবে। কমবেশি প্রায় সব লেখকদেরই একটা আলসেমি থাকে, তাঁদেরকে লেখার জন্য না গুঁতালে বা তাগাদা না দিলে তাঁরা লিখে না। আর লেখক থেকে লেখা আদায়ের এ গুরুদ্বায়িত্ব পালন করে থাকেন সম্পাদক। সেদিক থেকে দৈনিক ফেনীর সময় সম্পাদকের প্রতি কৃতজ্ঞতা।
সেদিন থেকে ফেনীর সময়-এর সাথে আমার যে পথচলা শুরু হয়েছিল তা এখনো আলো ছড়াচ্ছে। আলো ছড়াক নিরন্তর, যুগ থেকে যুগান্তর। ফেনীর সময় নির্দিষ্ট কারো পক্ষ না নিয়ে আপোসহীন কন্ঠে সবার কথা বলে। ফেনী জনপদের সার্বিক উন্নতি, অগ্রগতি ও সমৃদ্ধিতে ফেনীর সময় সহায়ক অংশীদার হিসেবে নিরন্তর কাজ করে যাচ্ছে। ফেনীর সময়ে প্রচারিত প্রতিবেদন, রিপোর্ট, নিউজে অন্যায়, অনিয়ম, দুর্নীতির চিত্র ফুটে ওঠার পর সেগুলো যথাযত কর্তৃপক্ষ গুরুত্ব দিয়ে দেখে এবং কার্যকর পদক্ষেপ নেয়। গণমানুষ হয় উপকৃত।
ফেনীর মতো ছোট্ট একটা শহর থেকে প্রতিদিন নিয়ম করে একটা দৈনিক পত্রিকা বের করা এবং ভোরের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গেই পাঠকের কাছে পৌঁছে দেয়া একটা চ্যালেঞ্জিং কাজ। আর সে কাজটা সহজ হয়ে উঠেছে পাঠকের আস্থা আর ভালোবাসায়। সে জায়গায় সফল দৈনিক ফেনীর সময়। পাঠকের আস্থা, ভালোবাসা আর গ্রহণযোগ্যতায় এক যুগ পার করছে দৈনিক ফেনীর সময়। দৈনিক ফেনীর সময় এভাবে তার বস্তুনিষ্ঠতা, সুসাংবাদিকতা, নিরপেক্ষতা, নৈতিকতা ও আপোসহীনতা নিয়ে যুগ থেকে যুগান্তরে টিকে থাকবে এটাই আমাদের প্রত্যাশা। জয়তু দৈনিক ফেনীর সময়।
লেখক : শিক্ষার্থী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।