নিজস্ব প্রতিনিধি :
৫ আগস্ট আওয়ামীলীগ সরকারের পতনের দিন ফেনী পৌরসভা ভবনে বিক্ষুদ্ধ জনতার আগুনে ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছিল ফেনী পৌরসভা ভবন। গুরুত্বপূর্ণ নথি, যানবাহন ও আসবাবপত্র সহ সাড়ে ৫ কোটি টাকার ক্ষতি হয়। এর কিছুদিন পরই স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় পৗরসভা ভবনের নিচতলা ডুবে গিয়ে অচলাবস্থা দেখা দেয়। জনপ্রতিনিধি বিহীন নাগরিক সেবার জনগুরুত্বপূর্ণ এই প্রতিষ্ঠান অকার্যকর হয়ে পড়ায় টেনে তোলার চেষ্টা করছেন প্রশাসক সহ কর্মকর্তা কর্মচারীরা।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, জেলা প্রশাসনের স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক গোলাম মো: বাতেন প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার পর নাগরিক সেবার উপর জোর দিচ্ছেন। পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতার পরও পোড়া চিহ্ন রয়েছে। আসবাবপত্র ও নথি পুড়ে যাওয়ায় বিভিন্ন কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছিল। সেগুলো ধীরে ধীরে সচল করছেন। বন্যায় এবড়োথেবড়ো হওয়া শহরের বিভিন্ন রাস্তা-ঘাট অগ্রাধিকার ভিত্তিতে উন্নয়ন কাজ শুরু হচ্ছে। ইতিমধ্যে মহিপাল থেকে ট্রাংক রোড যাতায়াতে বিকল্প ডাক্তারপাড়া সড়কটি সংস্কার করা হয়েছে। সম্প্রতি শারদীয় দূর্গোৎসব নির্বিঘ্ন করতে শহরের বিভিন্ন পূজামন্ডপ এলাকার রাস্তা সংস্কার করা হয়। এছাড়া জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন, ট্রেড লাইসেন্স, ওয়ারিশ সনদ, পারিবারিক সনদ সহ নাগরিক চাহিদা মেটানোকেই প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে। পৌরবাসীর স্বস্তি ধরে রাখতে যানবাহন সচল করে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা স্বাভাবিক গতিতে চালানো হচ্ছে।
সূত্র আরো জানায়, সম্প্রতি কাউন্সিলরদের অপসারন করে ৮ সরকারি কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। প্রতিজন কর্মকর্তা দুটি ওয়ার্ডের দায়িত্ব পালন করছেন। পৌরসভার বেদকলকৃত সম্পত্তি উদ্ধারে তালিকা করা হচ্ছে। এছাড়া দোকান বরাদ্দে অনিয়ম, ভাড়া, ইজারা চুক্তি হালনাগাদ করা হচ্ছে। পৌর এলাকায় যানজট নিরসনে বাস ও সিএনজি স্ট্যান্ড ইজারা না দেয়ার চিন্তা করা হচ্ছেনা। পৌরসভার বিল্ডিং কোড মেনে বহুতল ভবন নির্মাণ কাজ তদারকী করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে অপ্রয়োজনীয় জনবল কমিয়ে করে পৌরসভার মাসিক হারে ১৫ লাখ টাকা সাশ্রয় করা হয়েছে।
পৌরসভার পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, গত ৫ আগস্ট সরকারঘোষিত সাধারণ ছুটির দিনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র জনতার আন্দোলনে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেন। এর পরপরই বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে অজ্ঞাতনামা ৪ থেকে ৫হাজার ব্যক্তি লাঠিসোঁটা, কুড়াল, করাত, আগ্নেয়াস্ত্র, লোহার রড, দেশীয় অস্ত্রসহ পৌরসভার গেট ভেঙ্গে ভেতরে প্রবেশ করেন। এসময় তারা পৌর কার্যালয় ভাংচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করেন। এছাড়া পৌরসভা ভবনের সামনে থাকা লাশবাহী ফ্রিজিং অ্যাম্বুলেন্স, একটি এ্যাম্বুলেন্স এবং পৌরসভার বেশ কয়েকটি গাড়ি পুড়িয়ে দেয়। এসময় পৌর ভবনে থাকা গুরুত্বপূর্ণ নথি, আসবাব, বৈদ্যুতিক পাখা, ইলেকট্রনিক জিনিসপত্র, ফ্রিজ, এসি, আলমারি, কেবিনেট, ফগার মেশিন পুড়ে যায়। এ ঘটনায় ৫ কোটি ৫৬ লাখ ৮৬ হাজার ৭৫০ টাকার সম্পদের ক্ষতি হয়েছে।
পৌরসভার সচিব আবু জর গিফরী জানান, আগুনে পোড়া ও বন্যার মত দুটি ভয়াবহ দূর্যোগের মধ্যেও পৌরসভা সচল রাখতে প্রশাসক স্যারের নেতৃত্বে প্রাণান্ত চেষ্টা করেছে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। ১-২দিন পানিবন্ধ থাকলেও দ্রুতসময়ের মধ্যে চালু করা হয়েছে। এছাড়া ত্রাণ কার্যক্রমের পাশাপাশি রাতদিন পরিচ্ছন্নতা চালিয়েছে কর্মচারীরা।
এ প্রসঙ্গে পৌরসভার প্রশাসক গোলাম মো: বাতেন ফেনীর সময় কে বলেন, প্রাথমিকভাবে নাগরিক সেবাকে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় তথা সরকারি বরাদ্দ পেলে উন্নয়ন করা হবে। এক্ষেত্রে জনভোগান্তিকে অগ্রাধিকার দেয়া হবে।