দৈনিক ফেনীর সময়

বহুদিন পর দেশ গড়ার সুযোগ পেয়েছি, ব্যর্থ হলে চলবেনা

বহুদিন পর দেশ গড়ার সুযোগ পেয়েছি, ব্যর্থ হলে চলবেনা

মোহাম্মদ শেখ কামাল, ছাগলনাইয়া :

পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি মো: আহসান হাবীব পলাশ বলেছেন, হিন্দু-মুসলিম বৌদ্ধ খ্রিষ্টান আমরা সবাই এ দেশের নাগরিক। সবাই নিজ নিজ ধর্ম পালন করবে তাতে কোন সমস্যা নেই। কিন্তু কারো ধর্মীয় উপাসনালয়ে হামলা করা যাবেনা। কোনোভাবেই কোন প্রকার বিভেদ হতে দেয়া যাবে না। আপনার জানেন আমাদের ব্যর্থতা দেখার জন্য শকুনের ন্যায় তাকিয়ে আছে কারা। আমাদেরকে আর ব্যর্থ হওয়া যাবে না। রক্ত ছাড়া কোন অর্জনই সম্ভব হয়নি। বহু ত্যাগ ও রক্তের বিনিময়ে জুলাই বিপ্লব সফল হয়েছে। ছাত্র-জনতার বিপ্লবে যারা হামলা চালিয়েছে তাদের ব্যাপারে আমরা কঠোর থাকবো। আমরা নতুন করে শুরু করতে চাই। যে ধরনের পুলিশ আপনারা প্রত্যাশা করেন সে ধরনের পুলিশের জন্য আপনারা আন্দোলন চালিয়ে যান।

সোমবার বিকেলে ছাগলনাইয়া থানা প্রাঙ্গণে ফেনী জেলা পুলিশের আয়োজনে সুধী সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

“আমরা বহুদিন পর দেশ গড়ার সুযোগ পেয়েছি। আমাদের ব্যর্থ হলে চলবেনা। একবার যদি ব্যর্থ হই, তাহলে আবার ছাত্রজনতাকে এক সঙ্গে হতে হবে। আইনশৃঙ্খলা উন্নয়নে কাজ করতে চাই। কোনভাবেই বিভেদে জড়ানো যাবেনা। সবাই যার যার ধর্ম পালন করুন, প্রচার করুন। তবে ধর্মের নামে কারও উপসনালয়ে হাত দেয়া যাবেনা। এ ব্যাপারে সবাই সজাগ থাকুন, সতর্ক থাকুন। নতুন করে ঘুরে দাঁড়াতে চাই। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আমাদের দায় এড়াতে পারিনা। তবে আন্দোলনের সময় ছাত্র-জনতার পাশাপাশি ৪০ জন পুলিশ সদস্যও প্রাণ দিয়েছেন। আপনারা অনুধাবন করতে পারছেন না, আমরা কি ধরনের চ্যালেঞ্জে আছি। দয়া করে চ্যালেঞ্জ বুঝার চেষ্টা করুন। মনে রাখতে হবে, স্বাধীনতা অর্জনের চেয়ে রক্ষা করা কঠিন। আপনারা জানেন, কারা কোন দিকে শুকনের মতো তাকিয়ে আছে আমাদের ব্যর্থতা দেখার জন্য। তাকিয়ে আছে কখন আমরা মরব, কখন আমরা অপদস্ত হবো, ব্যর্থ হবো। আমাদের যত ব্যর্থতা তত তারা উল্লসিত।”

পুলিশ সুপার মো: হাবিবুর রহমানের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম। ছাগলনাইয়া থানার ওসি মো: নজরুল ইসলামের সঞ্চালনায় এতে আরো বক্তব্য রাখেন উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক আলহাজ্ব নুর আহাম্মদ মজুমদার, উপজেলা জামায়াতের আমির আজাদ হোসাইন, মাওলানা আবদুল মতিন, ছাত্র সমন্বয়ক মিরাজ ও মো: ফরহাদ হোসেন।

জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম বলেন, জুলাই-আগষ্ট বিপ্লবে যারা শহীদ হয়েছেন আহত হয়েছেন তাদের খোঁজ খবর নিয়ে পাশে থাকা আহতদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা জরুরী। ৪টি ক্যাটাগরিতে কাজ চলছে। শহীদদের বিষয়টা সেটৈল্ড। এই পরিবার গুলোর বিষয়ে সরকার সব ধরনের ব্যবস্থা নিবে। পাশাপাশি যারা আহত আছেন তাদের উপযুক্ত চিকিৎসা ও পুনর্বাসন প্রক্রিয়া কিভাবে আগাবে সে বিষয়গুলো নিয়ে কাজ চলছে। সরকারের কাছে মানুষ টাকা পয়সা চায়না। ভালো একটা পরিবেশ চায়। যারা আইন অনুযায়ী রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালন করেন তাদের সহযোগিতা করা প্রতিটা মানুষের দায়িত্ব। শৃঙ্খলা আবার আগের জায়গায় নিয়ে আসা হলো আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জ। পুলিশসহ সমস্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অন্য জেলার চেয়ে অত্যন্ত দ্রুততার সাথে বেক করছে। আমার আশা বেশিদিন সময় লাগবেনা পুলিশী কার্যক্রম পুরোপুরি চালু করতে।

পুলিশ সুপার মো: হাবিবুর রহমান বলেন, উন্নয়নের জন্য, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার জন্য সকল ধর্ম বর্ণের মানুষের মধ্যে সম্প্রীতি বজায় থাকা দরকার। যারা স্বৈরাচারের দোসর তাদের কোন ছাড় দেয়া হবে না। মামলার আসামিদের ছাড় দেয়া হবে না। আমি যখন এ জেলায় এসেছি তখন পুলিশের কোনো কার্যক্রম ছিলনা। আন্দোলনের সময় কিছু দুষ্কৃতকারী আমাদের থানায় আক্রমণ করে লুটপাট চালায়। সে সময় ছাত্র সমন্বয়ক, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও এলাকার সুশীল সমাজের নেতৃবৃন্দ ছাগলনাইয়া থানাকে রক্ষা করার জন্য চেষ্টা করেছেন এজন্য তাদেরকে অভিনন্দন জানাচ্ছি। ছাগলনাইয়া থানাকে পুনর্গঠনে এলাকাবাসীর ব্যাপক ভূমিকা রয়েছে। এ কারণে আমরা দ্রুত থানার কার্যক্রম শুরু করতে পেরেছি।

সুধী সমাবেশে পুলিশ প্রশাসনের উর্দ্ধতন কর্মকর্তাগণ, মুক্তিযোদ্ধা, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, সাংবাদিক ও মসজিদের ইমামসহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ উপস্থিত ছিলেন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: কন্টেন্ট সুরক্ষিত!!